ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

‘জলের গানে’ রাতে আমরণ অনশনে ঢাবির ভর্তিচ্ছুরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৪
‘জলের গানে’ রাতে আমরণ অনশনে ঢাবির ভর্তিচ্ছুরা ছবি: জাহিদ সায়মন/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: চারদিকে শুনসান নীরবতা। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি অংশে চলছে প্রতিবাদী গান, কবিতা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি।



বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশনরত ভর্তিচ্ছু ৩০/৩৫ জন শিক্ষার্থী এসব কর্মসূচি পালন করছেন।

তারা ‘একটাই দাবি- সেকেন্ড টাইম ঢাবি’, ‘দ্বিতীয়বার সুযোগ দাও- নইলে মোদের বিষ দাও’, ‘আমাদের দাবি- মানতে হবে মেনে নাও’, ‘প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা- মানি না মানবো না’- ইত্যাদি  স্লোগান দিচ্ছেন। স্লোগানের পাশাপাশি চলছে প্রতিবাদী গান, কবিতা ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি। ‘জলের গান’ এর বকুল ফুল, ঝরা পাতার গান, রঙের গান ইত্যাদি গেয়ে প্রতিবাদ করছেন তারা। এর মধ্যে কাঁথা মুড়ি দিয়ে কেউ কেউ আবার ঘুমিয়েও নিচ্ছেন। শহীদ মিনারের মূল বেদির এক কোণায় প্রজেক্টর লাগিয়ে ভিডিও চিত্রও প্রদর্শন করা হচ্ছে।  

এ অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফ কলেজ থেকে সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা সিরাজুল ইসলাম সাগর। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অন্তত দুই বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিলো। তাহলে ভর্তিচ্ছুরা সেভাবে প্রস্তুতি নিতো। এখন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

এর প্রতিকার চাইতে আদালতের দারস্থ হবেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিট করতে অনেক টাকা লাগে। আমাদের কাছে সেই পরিমাণ টাকা নেই। কোনো রকম থাকা-খাওয়ার টাকা থেকে কিছু বাঁচিয়ে আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এই শিক্ষার্থী।

প্রথম দিকে অনেকে অনশনে অংশ নিলেও রাত ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা ৩০ এ নেমে আসে। এ বিষয়ে সাগর বলেন, সকাল হলে এ সংখ্যা অনেক বাড়বে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। এরই মধ্যে অনশনে অংশ নেওয়া কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

বুধবার (১২ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তারা এ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।

এর আগে একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা।

১৪ অক্টোবর ভর্তি কমিটির সাধারণ সভায় ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শুধু ওই বছর এইচএসসিতে উত্তীর্ণরা অংশ নিতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে ভর্তিচ্ছুরা আন্দোলন করে আসছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় দফায় ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশনরতদের মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন আন্দোলনরতরা।
 
অসুস্থরা হলেন- সজল, রূপক দাশ, নজরুল, আহমেদ সাগর, প্রান্ত, রিয়াজ, ইমরান হোসেন, মাহবুব হাসান, ইমরান, তামজিদ, ফাইজুল ও যুথী।

এদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে সজল (নডটরডেম কলেজ), রূপক দাশ (ঢাকা কমার্স কলেজ) ও নজরুলকে (বিক্রমপুর কলেজ)।

এদিকে, অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুপুরে সংহতি প্রকাশ করেন সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং ডাকসু সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।

তবে সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি অসুস্থদের চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

ঢাবিতে ভর্তির জন্য আন্দোলন করাকে বিরল ঘটনা উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমি নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যা সত্যিই বিরল ঘটনা।

এ সময় শিক্ষার্থীদের দেওয়া দাবি সংবলিত একটি কাগজ পড়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের আগের শিক্ষার্থীরা যদি দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়, তবে তারা কেন পাবেন না? প্রকৃত ঘটনা যদি এই হয়, তবে আশা করি, তাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেনে নিবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নিজেকে গণতান্ত্রিক সরকার বলে দাবি করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও গণতন্ত্রের পক্ষের লোক। তিনি অবশ্যই রাজতন্ত্রের মতো একটি ফরমান জারি করতে পারেন না।

এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চিঠি পাঠাবেন বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ভাবতে অবাক লাগে, বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্র দু’বার ভর্তি পরীক্ষা দেবে তাতে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান যাবে?

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হওয়া এ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

** আমরণ অনশনে রাত জাগছেন ভর্তিচ্ছুরা
** ভর্তিচ্ছুদের অনশন চলছে, কামাল-মান্নার সংহতি

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।