ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বঞ্চনার শিকার ৩৪ হাজার ইবতেদায়ি শিক্ষক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৪
বঞ্চনার শিকার ৩৪ হাজার ইবতেদায়ি শিক্ষক ছবি : রাশেদ/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: চাকরির বয়স ৩৪ বছর। বয়স প্রায় ৫৫ বছর।

বেতন, মহার্ঘ্য ভাতাসহ ১ হাজার ২শ’ টাকা বেতন পাই। এ দিয়ে দুই সন্তানের লেখাপড়া, সংসার চালানো দু:সাধ্য। বয়স থাকলে হয়তো অন্য চাকরিতে যেতে পারতাম। সুসময় আর ভাগ্যের চাকা ফিরবে বলে আজো আশায় বুক বেঁধে শিক্ষকতার মহান পেশায় আছি।
 
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের ইবতেদায়ি শিক্ষক মাওলানা আবদুস সাত্তার।
 
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলে বেতন প্রদানের দাবিতে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলেন আবদুস সাত্তার।
 
জাতীয় বেতন স্কেল, ইবতেদায়ি নীতিমালা চূড়ান্ত করা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও বন্ধ রেজিস্ট্রেশন পুনরায় চালু করা না হলে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে ইবতেদায়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ধর্মঘট পালনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় এ কর্মসূচি থেকে।
 
সাত্তার বলেন, বর্তমান সময়ে ১ হাজার ২শ’ টাকায় কি সংসার চলে! আমরা তো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেয়ে কোনো অংশে খারাপ শিক্ষা দেই না। শেষ সময়ে যদি জাতীয়করণটা দেখে যেতে পারি, তাহলে শান্তিতে মরতে পারবো।
 
কুমিল্লা থেকে আসা শিক্ষক মাওলানা আবু সাঈদ বাংলানিউজকে বলেন, গত দশ বছর ৫শ’ টাকায় শিক্ষকতা করি। সংসার চলে না। মাদ্রাসা থেকে কিছু টাকা দেওয়া হয়, যা নগন্য। শিক্ষকদের মতো মহান পেশায় আছি বলে হাতও পাততে পারি না।
 
সংগঠনের সভাপতি এসএম জয়নুল আবেদীন জেহাদী বাংলানিউজকে বলেন, দেশে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সংখ্যা ছয় হাজার ৮৯২টি। এর মধ্যে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এক হাজার ৫১৯টি এবং অনুদানবিহীন পাঁচ হাজার ৩৩৭টি।
 
স্বতন্ত্র বেতন স্কেল না থাকায় ৩৪ হাজার ৪৬০ জন শিক্ষক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এর মধ্যে ১৯৯৪ সালে সরকার ৫শ’ টাকা হারে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ি শিক্ষকদের প্রথম এমপিওভূক্ত করে।
 
জয়নুল বলেন, ২০১৩ সালে সরকার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের জাতীয়করণ করলেও ইবতেদায়ি শিক্ষকদের করেনি।
 
২০১৩ সালে সরকার ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসার ৭ হাজার ৫৯৫ জন শিক্ষককে বেতন ও মহার্ঘ্য ভাতা ১ হাজার ২শ’ টাকা করে।
 
তার অভিযোগ, ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসায় ৫ জন করে শিক্ষককে ১ হাজার ২০০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও ডিজি অফিস থেকে চারজন শিক্ষককে বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু বাকি একজনের টাকা ডিজি অফিস আত্মসাৎ করে।
 
জয়নুল আরও বলেন, ইবতেদায়ি মাদ্রাসার ফলাফল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেয়ে অনেক ভালো। শিক্ষা কাঠামো আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
 
সরকার অনুমোদিত ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় বই, উপবৃত্তি, মেধা বৃত্তি, দুপুরের খাবার সব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো সব সরকারি কারিকুলামে শিক্ষকরা শিক্ষাদান করলেও শিক্ষকরা সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।
 
সংগঠনের মহাসচিব মো. শামছুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ১১ মে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের জাতীয় স্কেল প্রদানে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।
 
কিন্তু তিন বছরেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। মাসিক ৫শ’ টাকা বেতন হারে দৈনিক গড় বেতন ১৬ টাকা ৬৭ পয়সা। আবার অনিয়মিত। বছরের পর বছর বেতন জোটে না বলে অনেক শিক্ষক পেশা ছেড়ে যাচ্ছেন।
 
আবার কেউ বেতন বাড়বে বলে আশায় থাকেন। মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর এবং মন্ত্রী বারবার আশ্বাস দিলেও কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
 
সরকার নীতিমালার অজুহাতে মাদ্রাসা শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেল থেকে বঞ্চিত রেখেছে বলে অভিযোগ করেন শামছুল আলম।
 
তিনি অবিলম্বে অবহেলিত ইবতেদায়ি শিক্ষকদের বৈষম্য দূর করে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের মতো সুযোগ-সুবিধা প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
 
একই সঙ্গে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ভবন নির্মাণ, শিক্ষা ও আসবাবপত্র সামগ্রী প্রদান, আলাদা ইবতেদায়ি অধিদফতর গঠন, ইবতেদায়ি টিচার্স ইনস্টিটিটিউট নির্মাণ ও প্রতিটি গ্রামে একটি করে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা স্থাপনের দাবি জানান।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।