ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ভোলায় খোলা আকাশের নিচে পাঠদান

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৪
ভোলায় খোলা আকাশের নিচে পাঠদান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ভোলা: ভোলা সদরের দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের পশ্চিম কোড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে জরাজীর্ণ টিনসেড ভবন ও খোলা আকাশের নিচে।  
 
বিদ্যালয়ের মূল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা হয় প্রায় পাঁচ বছর আগে।

দীর্ঘ এ সময় পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয়টির নতুন কোনো ভবন নির্মিত হয়নি। এতে করে কোমলমতি শিশুদের পড়ালেখায় মারাত্মক ভাবে বিঘ্ন হচ্ছে।  
 
রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে পাঠ নিতে গিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারছে না তারা। এ বছরের বার্ষিক পরীক্ষাও দিতে হয়েছে খোলা আকাশের নিচে।
  
কর্তৃপক্ষকে বার বার জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। পাঁচ বছর ধরে এ অবস্থা চলে আসলেও কবে তারা ভবন পাবেন তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
 
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ১৯৮৮ সালে ভোলা সদরের দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় পশ্চিম কোড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।  
 
প্রতিষ্ঠার ২৪ বছর ধরে বিদ্যালয়টি সুনামের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। কিন্তু জরাজীর্ণ হওয়ায় নতুন কোনো ভবন নির্মাণ না করেই ২০০৯ সালের দিকে বিদ্যালয়ের ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তখন থেকেই একটি টিনসেড ভবনে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চলে আসছে।   

সময়ের ব্যবধানে টিনসেড কক্ষগুলোর জীর্ণ দশা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি থাকায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের মাঠে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হয়।  
 
স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী শাপলা জানায়, স্কুল মাঠে ক্লাস করতে হয়, পরীক্ষাও দিতে হয় একই স্থানে।  
 
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সোনিয়া জানায়, আমাদের স্কুলের ভবন নেই, অনেক কষ্ট করে ক্লাস করতে হয়। আমরা পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারি না।  
 
একই শ্রেণির ছাত্র শাহিন জানায়, একটি রুমে সবাই বসতে পারে না, তাই খোলা আকাশের নিচেই কষ্ট করে পরীক্ষা দিতে হয়। ঠিকমত পড়ালেখা করতে পারি না আমরা।
 
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিদ্যালয়ে ২৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে শিশু শ্রেণিতে ১৫ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৭২ জন, ২য় শ্রেণিতে ৫৫ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৫৫ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩৭ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৪৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।  
 
স্কুলে বিগত ৪/৫বছর ধরে প্রাথমিক সমাপনী ও বার্ষিক পরীক্ষাগুলোতে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। শিক্ষার মান ভালো থাকায় এ বিদ্যালয়ে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা ভর্তি হচ্ছেন। কিন্তু ক্লাসরুম সমস্যার কারণে অনেকেই ভালো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।
 
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, বিদ্যালয়টি এলাকায় সুনামের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও চেয়ার, টেবিল, বোর্ড ও বেঞ্চসহ নানা উপকরণের অভাব রয়েছে। বিদ্যালয়ে মাত্র তিন জন শিক্ষক রয়েছে। আরো দুই জন শিক্ষক প্রয়োজন।
 
সহকারী শিক্ষক মো. ইউসুফ বলেন, গরমের দিনে পাঠদান করা যায় না, শিক্ষার্থীদের মাঠে ও বাগানে খোলা স্থানে পাঠদান করাতে হয়। বৃষ্টিতে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়।
 
শিক্ষকরা জানান, নানা সংকটের পরেও বিদ্যালয়টি শিক্ষার দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে, তবুও কর্তৃপক্ষ ভবন বরাদ্দ দিচ্ছে না।
 
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক বলেন, সিডরের একটি বরাদ্দ পেয়ে একটি টিনসেড ঘর তৈরি করে কোনো রকম পাঠদান চললেও সেটিরও এখন জীর্ণদশা। পাঁচ বছর আগে বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর আমরা ভেবেছিলাম নতুন ভবন বরাদ্দ পাবো, কিন্তু কোনো ভবন এখনও বরাদ্দ হচ্ছে না।  
 
ভবন নির্মাণের বিষয়ে একাধিক বার মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হলেও অজ্ঞাত কারণে তা এখনও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এতে করে কষ্টের মধ্যে পাঠদান করতে হচ্ছে। এখন পরীক্ষাও নেওয়া হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে।
  
ভোলা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছাইয়াদুজ্জামান বলেন, বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা আমরা জানতে পেরেছি। নতুন একটি ভবন নির্মাণের জন্য সদর উপজেলা শিক্ষা উন্নয়ন কমিটির মাধ্যমে শিক্ষা অধিদপ্তরে একটি প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।
 
শিক্ষক সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, ওই স্কুলে শিক্ষকদের পদ সংখ্যা চারটি, কিন্তু একজন শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় সেখানে তিনজন শিক্ষক রয়েছেন। নতুন নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হলে ওই শূন্য পদে একজন শিক্ষক দেওয়া হবে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৪    

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।