ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

পুরুষটাকে আমি বানাবো নারীবাদী মানুষ

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৫
পুরুষটাকে আমি বানাবো নারীবাদী মানুষ অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: নারীর প্রতি শোষণ, বঞ্চনা, নিপীড়ন-নির্যাতন চলছে যুগ যুগ ধরে। এ অবস্থা থেকে বের হতে হলে আপামর জনসাধারণের সচেতনা দরকার।

সচেতনতা বাড়াতে ও ‘জেন্ডার’ সমতা অর্জনের জন্য সারাবিশ্বের মতো  বাংলাদেশেও প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নারীদিবস পালন করা হয়।

৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারীদিবস। এ ‍উপলক্ষে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।

নারী দিবসে আপনার চাওয়া কি?

অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম: সত্তরের দশকে নারীবাদীরা চাইতেন পুরুষতন্ত্র উঠে যাক। পুরুষের সঙ্গে নারীর বিয়ে হবে না। তারা পুরুষের সন্তান ধারণ করবে না। সে সময় বিখ্যাত নারীবাদী অ্যান্ড্রিয়ন রিচ বললেন, পুরুষের সন্তান আমাদের ধারণ করতে হবে। এছাড়া আমি সন্তান ধারণ করতে পারবো না। দুইজন হেটেরো সেক্সুয়াল মিলে একটা হোমো সেক্সুয়াল তৈরি করতে পারে। তার মানে আমাদের পুরুষের সঙ্গে থাকতে হবে। সেই পুরুষটাকে আমি বানাবো নারীবাদী মানুষ। আমি সেই আশায় আছি।    

সমান পরিশ্রম করলেও পুরুষের বেতন/মজুরি নারীর তুলনায় বেশি কেন?

অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম: সমাজ বা সংস্কৃতি ধারণা করে যে, পুরুষই হচ্ছে পরিবারপ্রধান। সে-ই রক্ষক, সে-ই খাওয়াবে, ভরণপোষণ দেবে ও রক্ষা করবে। বিভিন্ন ধর্মেও এই বিষয়টা দেখা যায়। ইসলাম ধর্মে বিয়ের কাবিনে পুরুষের দায়িত্ব হচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণ করা, ভরণপোষন দেওয়া। সেই ধারণা অনুযায়ী ধরে নেওয়া হয় যে, তার (পুরুষের) টাকার দরকার বেশি। তার পারিশ্রমিক বেশি হওয়া দরকার। তার উপর বৌ খাবে, মা-বাবা খাবে সন্তান খাবে। এটা ধারণা থেকে আসছে।

বাস্তবে আমাদের দেশে অর্থ রোজগারের ইতিহাস মেয়েদেরও আছে। কিন্তু তারও আগে অর্থ রোজগার করত না কিন্তু অর্থ সাশ্রয়ের কৃতিত্ব তো তাদের রয়েছে। নারীরা বাড়ির খরচ বাঁচিয়ে অর্থ সাশ্রয় করছে। কিন্তু অর্থ তারা বাইরে থেকে নিয়ে আসতে পারে নি। ইউরোপ-আমেরিকাতে ট্যাক্স-পে জব ছেলেরা বেশি করে। ফলে সুবিধা তাদেরই বেশি দিতে হবে। এই ধারণা এবং বাস্তবতা-- এই দুটো সহাবস্থান করছে যে বাস্তবে আসতে দেয় না কারণ ধারণাটা ঐ রকম। আবার বাস্তবটাই ধারণার কারণে যে রকম হচ্ছে সেই জন্য আরেকটা নতুন ধারণা তেমন বদলাচ্ছে না।

নারীবাদ বলতে আপনি কি বোঝেন?

অধ্যাপক ফারজানা ইসলামঃ সমাজটা বৈষম্যপীড়িত। নারী ও পুরুষ হচ্ছে আদিমতম শ্রেণি বিভাজন। অর্থ ও উৎপাদনের মালিকানার ভিত্তিতে যে শ্রেণি পার্থক্য তার উৎপাদন সম্পর্ক বদল হয়ে গেলে বা মালিকানা বদল হয়ে গেলে সেই পার্থক্যটাও বদলায়। নারীবাদী চিন্তা হচ্ছে- নারী ও পুরুষের মধ্যে আদিমতম, প্রাচীনতম ও সুপ্রতিষ্ঠিত যে বৈষম্য রয়েছে তার স্থলে যেন সমতা আনা যায়। সেই সমতার লক্ষে যারা কাজ করছেন, যারা সেই বৈষম্যটা ধারণ করতে পারেন বা ধারণায়নের মধ্যে যেতে পারেন তারাই এটাকে বদলাবার চেষ্টা করেন। তাই একজন নারী হয়েও কেউ নারীবাদী হতে পারেন, আবার পুরুষ হয়েও নারীবাদী হতে পারেন।

নারীর ক্ষমতায়নে প্রতিবন্ধক কি বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক ফারজানা ইসলামঃ নারী হচ্ছে পাত্র এবং উপলক্ষ দুটোই। সমাজ তৈরি হয়ে আছে অনেকদিন ধরে। সংস্কৃতি সেটাকে সাপোর্ট করছে। সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গ যেমন ধর্ম, গানবাজনায় নারীকে ছোট করে,হেয় করে দেখানো হচ্ছে। অনেকে বলে-একজন নারী কি আধা মণ চাল মাথায় নিতে পারবে? কিন্তু উল্টো যদি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের পুরুষকে বলা হয় আধা মন চাল মাথায় নিতে সেও পারবে না। অর্থাৎ তার অভ্যাস, সুযোগ-সুবিধা তাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে। রাত জেগে ট্রাকে করে নারীশ্রমিকরা দূরদূরান্তে নির্মাণকাজে যায়। কই ভদ্র লোকের ছেলেরা তো পারে না। তার মানে পেশা তোমাকে পরিশ্রম করতে শেখায়। নারীদের সুযোগ দেওয়া হোক তারাও পেশায় সাংঘাতিকভাবে শ্রম দিতে পারবে। ‘নাসা’র একজন পুরুষ ও নারী বিজ্ঞানীর মধ্যে পোশাকেও পার্থক্য নাই, কাজেও পার্থক্য নাই। এই জন্য নারীকে সুযোগ দিতে হবে।

ক্ষমতায়নের নারীর আগ্রহ আছে কি?

অধ্যাপক ফারজানা ইসলামঃ প্রবল। পরশুদিন ক্রিকেট খেলায় (স্কটল্যান্ডের সঙ্গে বিশ্বকাপ ম্যাচে) জয় হয়েছে বাংলাদেশের। দেখলাম মেয়েরা প্রকাশ্যে বাঘের মত হাঁ-করে চিৎকার করছে। বাঘ জয়ী হয়েছে তাই মেয়েরা প্রকাশে বাঘের মতই হাঁ- করে চিৎকার করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই প্রকাশে হাঁ-করে চিৎকার করার স্বভাব কি মেয়েদের ছিল? আগে মেয়েরা জোরে হাসলে পাড়ার মায়েরা বলত মুখে পোকা ঢুকে যাবে। পুরুষপ্রধান সমাজব্যবস্থা যে ধরনের সংস্কৃতি দেয় সে সংস্কৃতি মেয়েদের সারাক্ষণই বাধাগ্রস্ত করতে চায়। অমর্ত্য সেন বলেছেন- যদি আমরা টেকনোলজিটাকে উইমেন ফ্রেন্ডলি করে দিই তাহলে দেখবো মেয়েরাও কত দ্রুত সোশ্যাল প্রোডাকশনের চলে আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- ট্রাক্টর দিলে কোনো না মেয়ে চাষী হতে পারে। কিন্তু লাঙ্গল দিলে যে পারি না। ট্রাক্টর দিলে ভদ্রলোকের ছেলেও তো  ‘প্যান্ট চাষী’ হয়; কিন্তু তারা তো লুঙ্গি পরে কাস্তে- কোদাল নিয়ে কাজ করতে চায় না। টেকনোলজিটাকে ইউজার ফ্রেন্ডলি করতে হবে। এখানে ইউজার হলো যারা বঞ্চিত ছিলো তারা। এখন মেশিনে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে যেহেতু কাজ হয় সেহেতু মেয়েরা সবকিছুই পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।