ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দেশে সাড়ে ৩ শতাংশ শিশু স্কুলের বাইরে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৫
দেশে সাড়ে ৩ শতাংশ শিশু স্কুলের বাইরে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাংলাদেশে এখনও  সাড়ে ৩ শতাংশ শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ইসরাফিল আলম এমপি।

বুধবার ( ১০ জুন) সকাল ১০টায় রাজধানীর শাহবাগে সুফিয়া কামাল জাতীয় গ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান।



বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস-২০১৫ উপলক্ষে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ও সম্ভাব্য কর্মজীবী শিশুদের জীবনমান উন্নয়ন ও অধিকার আদায়ে নিয়োজিত ৬টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (অপরাজেয় বাংলাদেশ, কমিউনিটি পার্টিসিপেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিড), ভলান্ট্যারি অ্যাসোসিয়েশন ফর ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (ভাসফুড), সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনোমিক এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (সিপ), সহায় এবং নবলোক শিশু সমাবেশ এ আলোচনা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসরাফিল আলম বলেন, সারা বিশ্বে ১শ’ কোটি এবং বাংলাদেশে ৩ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ শিশু,  যাদের স্কুলে যাবার কথা, তারা স্কুলের বাইরে রয়েছে।   এ সব শিশুদের বিপুল অংশ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের সাথে জড়িত।

তিনি বলেন, শিশুদের শ্রমের বিরুদ্ধে সরকারি,বেসরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে অনেক ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। এসব কর্মকাণ্ডের কমবেশি সফলতাও রয়েছে। তবে সরকারের মূল লক্ষ্য হলো একটি শিশুও যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।

ইসরাফিল আলম বলেন, শিশু শ্রম বন্ধ করতে হলে প্রথমে শিশুরা কেন শ্রমের সাথে যুক্ত হচ্ছে সে বিষয়টি খুঁজে বের করতে হবে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে। কেননা সকলের সহযোগিতা ছাড়া সরকারের একার পক্ষে এ ধরনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।

এ সময় তিনি বলেন, শিশুদের অধিকার রক্ষায় যে ৫টি মন্ত্রণালয় রয়েছে তাদের মধ্যে সমন্বয় করা প্রয়োজন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে শিশু অধিকার বাস্তবায়নে আমরা কতটুকু সফলতা অর্জন করতে পেরেছি সে বিষয়ে আমাদের আত্মবিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। তাহলেই নিজেদের ব্যর্থতার কারণগুলো বের হয়ে আসবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে কতজন শিশু শ্রমের সাথে জড়িত এখন পর্যন্ত সেটার সঠিক কোনো তথ্য আমাদের হাতে নেই। সেজন্য আমি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শিশুশ্রমের ওপর একটি শুমারি পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা বলছি শিশুরা ভবিষ্যতের কর্ণধার। আর সে কর্ণধারদের ভবিষ্যত গড়তে স্কুলে পাঠানোর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সুবিধাবঞ্চিত ও শ্রমজীবী শিশুরা যে স্কুলে বা পাঠশালায় যাচ্ছে সেখানে যদি পরিবেশ তৈরি করা না যায়, তাহলে শিশুরা সেখানে যেতে আগ্রহী হবে না। তাই আমি মনে করি পাঠশালাগুলোর পরিবেশ তৈরি করা দরকার।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিশুদের বাবা-মাকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যত কষ্টই হোক নিজের বাচ্চাটিকে স্কুলে পাঠানোর। আর সেজন্য যে সহযোগিতা দরকার তা রাষ্ট্রকে দিতে হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

শিক্ষাখাতে বাজেট বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০০ সালে শিক্ষাখাতে বাজেট ছিলো মোট বাজেটের ১৪ শতাংশ। আর ২০১৫ সালে সেটা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ১০.৭১ শতাংশ। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো শিক্ষাখাতে  বাজেটের পরিমাণ  আরো বাড়ান।

এ সময় তিনি  স্কুলগুলোতে দুপুরে খাবারের ব্যবস্থাসহ  উপবৃত্তির পরিমাণ ১০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।

বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়" শিশুশ্রমকে না বলুন,মানসম্মত শিক্ষাকে হ্যাঁ বলুন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় গ্রন্থাগারের সামনে "শিশুশ্রমকে না বলুন,মানসম্মত শিক্ষাকে হ্যাঁ বলুন" শীর্ষক এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে আয়োজক সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিসহ প্রায় ৩০০ শিশু অংশ নেয়। মানববন্ধন থেকে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস-২০১৫ উদ্বোধন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড.তোফায়েল আহমেদ।

অনুষ্ঠানে কর্মজীবী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অংশগ্রহণে ৫ জুন অনুষ্ঠিত চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। আলোচনা সভাশেষে  কর্মজীবী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কমিউনিটি পার্টিসিপেশন  অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট(সিপিডি)'র নির্বাহী পরিচালক মোসলেখা বারী,সহায়'র নির্বাহী পরিচালক জামিলা সুলতানা, অপরাজেয় বাংলাদেশ'র নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু, ভল্যান্ট্যারি অ্যাসোসিয়েশন ফর ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট (ভাফুসড)'র প্রধান নির্বাহী ডা. আব্দুল কাইয়ুম লস্কর, সোস্যাল অ্যান্ড ইকোনোমিক  এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম ( সিপ)'র উপ নির্বাহী পরিচালক তহমিনা জেসমিন মিতা, নবলোকের উপপ্রধান নির্বাহী পরিচালক কাজী রাজিব ইকবাল উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৫
এলকে/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।