ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি

স্থান জটিলতায় প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
স্থান জটিলতায় প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ঢাকা: ক্যাম্পাস স্থাপনের জায়গা বরাদ্দ নিয়ে জটিলতায় পড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি। বিশেষায়িত এই ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠায় শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।


 
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরে হাইটেক পার্কের জমিতে এই ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন।
 
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) জানায়, হাইটেক পার্কের জমিতে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি স্থাপনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেখানকার কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানায়।
 
তালিবাবাদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের জন্য অধিকৃত সাড়ে চারশ’ একর জমির মধ্যে আড়াইশ’ একর জমিতে পার্ক স্থাপন করে বাকি জমি ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিকে দেওয়ার কথা। ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নের পাশাপাশি হাইটেক পার্কে যেন কাজের সুবিধা পায় সেজন্য সেখানে স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়।  
 
কিন্তু আরও ৯১ একর জমি চেয়েছে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, সেখানকার জমিতে ইউনিভার্সিটি স্থাপনেও আপত্তি জানায় তারা।
 
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলে তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সমঝোতার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) হেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, খুব শিগগিরিই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সমঝোতা করা হবে।
 
‘সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির কাজ শুরু হবে। ’
 
শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ওই জায়গায় ইউনিভার্সিটি স্থাপনে গাজীপুর জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
 
গত বছরের ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি আইনের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
 
এর আগে, মন্ত্রিসভা ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিছু অনুশাসন ও পর্যবেক্ষণসহ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি খসড়া আইনে নীতিগত অনুমোদন দেয়।
 
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আইসিটি শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষের মাধ্যমে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করাই এই ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য।
 
দেশে ও বিদেশে আইসিটির ক্ষেত্রে অসাধারণ মেধাবী ও যোগ্য লোকদের আকৃষ্ট করতে এ ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা দেওয়ার বিধান থাকবে। এখানে প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি থাকবে দূরশিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষার ব্যবস্থা।

ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি আইনে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে আইসিটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের রাখার বিধান যুক্ত করা হয়। এছাড়া চ্যান্সেলর মনোনীত দু’জন আইসিটি শিল্প উদ্যোক্তা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে থাকবেন।
 
ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি আইনে সম্মতি দিয়েছেন জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিন বলেন, এখন এ আইন পাসের জন্য জতীয় সংসদে যাবে।
 
চলতি অধিবেশনেই ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি আইন পাস হবে বলে মনে করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
 
২০১০ সালে গাজীপুর সফরে গিয়ে মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে একটি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। ওই বছরের মার্চ মাসে ইউজিসিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আইনের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সভা করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবিদ-প্রযুক্তিবিদদের মতামত নিয়ে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে।
 
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের গত মেয়াদে নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণার পর বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি সরকারি বা বেসরকারি একটি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে প্রস্তাব করেছিল।
 
সরকার এই প্রস্তাব গ্রহণ করে সরকারিভাবে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি স্থাপনের উদ্যোগ নেয় বলে বাংলানিউজকে জানান বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তফা জব্বার।
 
ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিতে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় পাঠদান এবং তাত্ত্বিক ও প্রয়োগিক বিষয়ের ওপর গবেষণার সুযোগ থাকবে।
 
স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা ও গবেষণামূলক এই প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনে স্নাতক পর্যায়েও পাঠদানের সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
 
বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত ডিজিটাল টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, অ্যাডভান্সড টেকনোলজি নিয়ে পাঠদান ও গবেষণার সুযোগও পাবেন ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।
 
ইউনিভার্সিটির স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ও গবেষকরা বৃত্তি ও ভাতাপ্রাপ্ত হবেন। আর এই ইউনিভার্সিটি হবে সম্পূর্ণ আবাসিক।
 
দেশি-বিদেশি শিক্ষক-গবেষকদের আকৃষ্ট করতে উপাচার্য,  উপ-উপাচার্য, শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য এই ইউনিভার্সিটির একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো থাকবে। ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষকের সর্বনিম্ন পদ হবে পিএইচডি অথবা সমমান ডিগ্রীধারীর সহকারী অধ্যাপক।
 
একটি সার্চ কমিটি অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তিনজন শিক্ষাবিদ নিয়ে উপাচার্য প্যানেল তৈরি করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠাবে। রাষ্ট্রপতি তাদের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগ দেবেন।
 
হেলাল উদ্দিন জানান, আইন ছাড়া ভিসি (উপাচার্য) নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। আইন পাস হলেই ভিসি নিয়োগ দিয়ে কার্যক্রম শুরু করা যাবে।    
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
এমআইএইচ/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।