ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

খুলনার ল্যাবরেটরি স্কুলে জীবনঝুঁকি নিয়ে পাঠদান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬
খুলনার ল্যাবরেটরি স্কুলে জীবনঝুঁকি নিয়ে পাঠদান ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনার গভ. ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের জরাজীর্ণ ভবনে বছরের পর বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলছে। ১৯৬৭ সালে নির্মিত একাডেমিক ভবন, হোস্টেল জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকম চালালেও প্রধান শিক্ষকের বাসভবনটির ছাদ ধসে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

এক হাজর ১শ ৮৩ জন শিক্ষার্থী মাথার উপর ভাঙ‍া ছাদ, প্লাস্টার খসা দেয়াল ও খোলা জানালার মধ্যে ক্লাস করছে।  

অথচ ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলটির রয়েছে গর্ব করার মতো ফলাফল। অভিভাবক ও এলাকাবাসী অর্ধশতাব্দীর প্রাচীন এ বিদ্যালয়টির জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে নতুন বহুতল ভবন তৈরি ও বিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন।

জানা যায়, খুলনার ফুলবাড়ী গেটের তেলিগাতী এলাকায় ১৯৬৭ সালে ৪.৪৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় গভ. ল্যাবরেটরি হাই স্কুল খুলনা। সেইসময় নির্মিত দুইতলা একটি একাডেমিক ভবন ও ছাত্রাবাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ৪৯ বছর আগে নির্মিত ভবনগুলো বার বার কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে রঙ করলেও কিছুদিন পরে তা আগের রূপে ফিরে যায়।  

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, স্কুলটির একাডেমিক ভবনের কলাম এবং বিমগুলো ভেঙে রড বের হয়ে গেছে এবং ছাদের ঢালাই ভেঙে রড ঝুলে পড়েছে। অধিকাংশ ক্লাসরুমের জানালা ও দরজা ভাঙা। রুমের প্লাস্টার খসে ইট বের হয়ে গেছে। একই হাল একমাত্র ছাত্রাবাসটিরও। ২০১০ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুধু প্রধান শিক্ষকের বাসভবনটি ব্যবহারের অনুপোযোগী ঘোষণা করে।  

সর্বশেষ গত ২০১৪ সালে স্কুল কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর খুলনার সহকারী শেখ নাসিম রেজা এবং উপ-সহকারী মো. সিদ্দিকুর রহমান ওই বছরের ১৯ মে স্কুলটি পরিদর্শন করে একাডেমিক ভবনের জন্য দুই কোটি, প্রশাসনিক ভবন কাম একাডেমিক ভবন মেরামতের জন্য ৩০ লাখ, অডিটরিয়াম ভবনের জন্য দুই কোটি, স্কুলের আসবাবপত্রের জন্য ১০ লাখ, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির জন্য পাঁচ লাখ, খেলাধুলার সামগ্রীর জন্য পাঁচ লাখ- মোট চার কোটি ৫০ লাখ টাকার সুপারিশ করলে স্কুলটিকে বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র পাঁচ লাখ টাকা, যা বরষা মৌসুমে নিমাজ্জিত থাকা রাস্তা এবং ভবনের কিছু অংশ মেরামতের কাজে লাগানো হয়।  

বিদ্যালয়টিতে প্যাটার্ন অনুযায়ী শিক্ষক সংকট প্রকট, সহকারী প্রধান শিক্ষককের পদ রয়েছে শূন্য। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয় থাকলেও নেই কোনো শিক্ষক। হিন্দু ধর্ম, অর্থনীতি, পৌরনীতি, ক্যারিয়ার বিষয় রয়েছে কিন্তু নেই শিক্ষকদের পদ ও শিক্ষক। ভূগোল ও চারুকলার কোনো শিক্ষক নেই। প্যাটার্ন অনুযায়ী, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে বাংলায় দুইজন এবং গণিতে দুইজন, অ্যানালগ একটি লাইব্রেরি রয়েছে কিন্তু লাইব্রেরিয়ানের কোনো পদ নেই, লাইব্রেরীয়ানও নেই। নিরাপত্তা প্রহরীর পদ থাকলেও পদটি রয়েছে শূন্য। পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই, নেই ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব ও ল্যাবরেটরি। বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সুরক্ষার জন্য পুরাতন প্রাচীরটি নষ্ট হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের তুলনায় টয়লেট অনেক কম আর যা রয়েছে তাও ব্যবহারের অনুপোযোগী। স্কুলটি নিচু জায়গায় হওয়ার বরষা মৌসুমে ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

এসব বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার ঢালী বলেন, বিদ্যালয়ের অবকাঠামোর অবস্থা খুবই নাজুক। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরে একাধিক বার চিঠি দেওয়া হয়েছে কিন্তু দৃশ্যমান তেমন কোনো প্রতিকার দেখা যাচ্ছে না।  

এ ব্যাপারে  মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর খুলনাঞ্চলের   পরিচালক  টি  এম  জাকির  হোসেন শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, স্কুলটিতে নতুন ভবন তৈরি করতে শিক্ষা অধিদফতরের প্রকৌশলীর সঙ্গে রোববার কথা বলবো।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬
এমআরএম/এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।