সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে তৈরির সুযোগও প্রসার হচ্ছে।
ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের তথ্য পর্যালোচনা করে এমনটাই জানা গেছে।
শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, উন্নত ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে দেশটির খ্যাতনামা বেশ কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভের সুযোগ নিতে চান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
সূত্র বলছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮ হাজার ২৪৯ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। ২০০৯ সালের চেয়ে এ সংখ্যা এখন প্রায় তিন গুণ। তবে এক বছরের ব্যবধানেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে ১০ গুণেরও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, গণিত ও প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অন্যতম গন্তব্য যুক্তরাজ্য। এই পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন।
চলতি বছর থেকে যুক্তরাজ্যের গ্র্যাজুয়েট ও মাস্টার্স কোর্স শেষে দেশটিতে দুইবছর চাকরিরও সুযোগ পাবেন বাংলাদেশিরা। প্রায় ৮ বছর পর যুক্তরাজ্য সরকার এই নিয়ম ফের চালু করতে চলেছে।
সে কারণে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আবারো শিক্ষার সুযোগ প্রসারিত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ইউরোপের অন্যতম ধনী দেশ জার্মানিতেও বাড়ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালে জার্মানিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২২০ জন। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৭৭ জন। ২০১৫ সালে ২ হাজার ৫১৪ জন। ২০১৬ সালে ছিল ২ হাজার ৬৩২ জন। আর ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭৬৪ জন।
জার্মান সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছরই দেশটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে। উল্লেখ্য, বিশ্বের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ১৩ শতাংশই জার্মানিতে পড়াশোনা করছেন।
ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্জ বলেন, জার্মানিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এই সুযোগ নিতে পারে। এছাড়া জার্মান একাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিসের (ডাড) আওতায় শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ নিচ্ছেন।
আগামী দিনে আরো বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জার্মানিতে পড়ার সুযোগ পাবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
এদিকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর নতুন গন্তব্য হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া। দেশটির সরকারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সেখানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২৮ হাজার।
বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে, দেশটিতে পড়তে যেতে চাইলে কোনো আইইএলটিস-এর প্রয়োজন হয় না। খরচও তুলনামূলক কম, নিরাপদ ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, প্লেন ভাড়া কম, হালাল খাবার উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে পূর্ব এশিয়ার দেশ চীনও। গতবছর ৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা করতে গেছেন।
বেইজিং ছাড়াও কুনমিং, গুয়াংজু, সাংহাই, উহান প্রভৃতি প্রদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছেন এসব শিক্ষার্থীরা। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, চীনে বাংলাদেশিদের শিক্ষার সুযোগ বাড়ছে। আগামীতে এই সুযোগ আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা করি।
জাপান স্টুডেন্ট সার্ভিস অর্গানাইজেশনের (জেএএসএসও) তথ্য অনুযায়ী, জাপানেও কম নেই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। ‘সূর্যোদয়ের দেশ’ হিসেবে খ্যাত বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশটিতে ২০১৯ সালেই পড়াশোনা করতে গেছেন ৩ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থী।
এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, রাশিয়া ছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতেও দিনে দিনে বাড়ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৯
টিআর/এমএ