ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

রাবিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় জোহা দিবস পালিত

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০
রাবিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় জোহা দিবস পালিত

রাবি: যথাযোগ্য মর্যাদায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শহীদ জোহা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করেছে। 

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত হন। তিনিই এদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী।

দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকালে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ ও রেজিস্ট্রার এম এ বারীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

এরপর রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, বিভাগ, পেশাজীবী সমিতি ও ইউনিয়ন ইত্যাদি প্রভাতফেরিসহ শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে।  

পরে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে জোহা স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক বক্তব্য দেন রাবির সাবেক উপাচার্য এবং যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার প্রফেসর এম সাইদুর রহমান খান।

রসায়ন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর মো. বেলায়েত হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়াসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

স্মারক বক্তব্যে অধ্যাপক এম সাইদুর রহমান খান বলেন ‘তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ একটি প্রত্যয়, একটি স্বপ্ন, যা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার একটি দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত, কর্মসংস্থান ও জাতীয় উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। বিরাট এক পরিবর্তন ও ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলছে। ’

উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘শহীদ ড. জোহা একজন নির্ভীক শিক্ষক ছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে বলিষ্ঠ কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন, কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে, যেন আমার গায়ে গুলি লাগে। তার আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। তার আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম আরও বেগবান হয়েছে। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। এ সময় তিনি দিবসটিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবি জানান।

দিবসটি জাতীয়ভাবে স্বীকৃতির জন্য বেলা সাড়ে ১১টায় জোহা চত্বরে মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশন একই দাবিতে সংবাদ সম্মেলন, প্রথম আলো বন্ধুসভার গণস্বাক্ষরসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

শিক্ষক দিবসের কর্মসূচিতে আরও রয়েছে- বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে দোয়া মাহফিল ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন। এদিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ১৯৩৪ সালের ১ মে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় জন্মহগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি লন্ডনে স্কলারশিপ পান। ১৯৬৪ সালে তিনি লন্ডন থেকে ফিরে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন।

বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০
ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।