রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মহানগরীর বিএমএ ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খুলনা বিএমএ-এর সভাপতি ডা. বাহারুল আলম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমানে খুলনা শহরের বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্যানিটেশন ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা। ফলে স্কুলগুলোতে আসা শতকরা ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী টয়লেট ব্যবহারে অনীহা দেখাচ্ছে। তবে বেশি অনীহা দেখায় মেয়ে শিক্ষার্থীরা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষার্থীরা এভাবে টয়লেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকলে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। পাশাপাশি শ্রেণি কক্ষে মনোযোগ কেন্দ্রীভূতকরণেও সমস্যা হয়। এসএনভি নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের এক স্কুল বেজলাইন জরিপে সম্প্রতি এ ধরনের তথ্য উঠে এসেছে। খুলনা মহানগরীর ১৩টি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার হাজার ২৭৩ জন শিক্ষার্থী, ৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী, ১৪টি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/মাদ্রাসার চার হাজার ৮৭০ জন শিক্ষার্থী ও ১০১টি মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪৯ হাজার ৩৯৩ জন শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ পরিচালনা করে এসএনভি।
জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, স্কুলগুলোতে মোট ছাত্রী ছিল ২৩ হাজার ৫০৬ জন এবং ছাত্র ছিল ২৫ হাজার ৮৮৭ জন। জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক স্কুলে টয়লেট ব্যবহার করছে শতকরা ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী, বাকি ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী টয়লেট ব্যবহার করে না। প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রীরা করছে শতকরা ১৯ শতাংশ, বাকি ৮১ শতাংশ টয়লেট ব্যবহার করে না।
ছাত্ররা করছে শতকরা ৫৬ শতাংশ, বাকি ৪৪ শতাংশ ছাত্র টয়লেট ব্যবহার করে না। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/ মাদ্রাসায় ছাত্রীরা করছে শতকরা ১৩ শতাংশ, বাকি ৮৭ শতাংশ করে না। ছাত্ররা করছে শতকরা ৪৩ শতাংশ, বাকি ৫৭ শতাংশ করে না। মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ছাত্রী করছে শতকরা ৫৫ শতাংশ, বাকি ৪৫ শতাংশ করে না। ছাত্ররা করছে শতকরা ৩৩ শতাংশ, বাকি ৬৭ শতাংশ করে না। এছাড়া এসব স্কুলগুলোতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা টয়লেট রয়েছে মাত্র শতকরা ১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বাকি ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই।
জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়, বিএনবিসি অনুযায়ী এক বছরের মধ্যেই সেপটিক ট্যাংক খালি করার নিয়ম থাকলেও প্রাক-প্রাথমিক স্কুলের শতকরা ৪৫ শতাংশ, প্রাথমিক স্কুলে ৩৮ শতাংশ, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/মাদ্রাসায় ৬৪ শতাংশ এবং মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৭ শতাংশ সেপটিক ট্যাংক কখনো খালি করা হয়নি। বাকি যেগুলো খালি করা হয়েছে তার মধ্যে শতকরা ৮২ শতাংশ করা হয়েছে সুইপারের মাধ্যমে এবং ১৮ শতাংশ করা হয়েছে যান্ত্রিকভাবে। এছাড়া ওই সব স্কুলগুলোতে হাত ধোঁয়ার স্টেশন রয়েছে শতকরা ২৮ শতাংশ, পানি রয়েছে শতকরা ২৭ শতাংশ, সাবান/ডিটারজেন্ট রয়েছে শতকরা ১৯ শতাংশ এবং হাত ধোয়ার সুবিধাগুলো প্রবেশগম্যতা রয়েছে শতকরা ১৮ শতাংশ। এর ফলে স্কুলগুলোতে আসা শতকরা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষার্থী টয়লেট ব্যবহারে অনীহা দেখাচ্ছে। বেশি অনীহা প্রকাশ করে মেয়ে শিক্ষার্থীরা।
নগরীর ২৩ নম্বর বানিয়াখামার, ১১ নম্বর বানিয়াখামার ও সোনাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত টয়লেটগুলো বেশিরভাগ নোংরা ও দুগর্ন্ধময়। কোনো টয়লেটে হাত পরিষ্কারের জন্য সাবান বা ডিটারজেন্ট নেই। রয়েছে পর্যাপ্ত পানি সংকট। এছাড়া কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনে কোনো প্রকার টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় বিকল্প হিসেবে বিদ্যালয় থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো স্থানে অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী।
অভিভাবকরা বলেছেন, বেশিরভাগ স্কুলের টয়লেটের মান প্রথমত ভালো না। দ্বিতীয়ত টয়লেটগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করার কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ছেলে-মেয়েরা টয়লেট ব্যবহার করতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়ছে।
স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, টয়লেটে দুগর্ন্ধ ও ময়লা থাকায় তারা টয়লেটে যায় না। তাই দীর্ঘ সময় জোর করে টয়লেট থেকে নিজেদের বিরত রাখে। এতে তাদের কষ্ট সহ্য করতে হয়।
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে টয়েলেট ব্যবহারের অনিহা দূর করতে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণের দাবি জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জনউদ্যোগ, খুলনা নারী সেল আহবায়ক অ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শীলু, মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মহসীন, অবসরপ্রাপ্ত জেলা সুপার এস এম নজরুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির মহানগর সভাপতি শেখ মুফিদুল ইসলাম, রাসটিকের নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা মোড়ল নূর মোহাম্মদ, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা এবারত আলী, অবসর প্রধান শিক্ষক নরেশ চন্দ্র দেবনাথ, কনসেন্স এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম বুলবুল, সংগঠনের সদস্য সচিব মহেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০
এমআরএম/আরআইএস/