এবার সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে গড়ে ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বাংলানিউজকে বলেন, ফলাফল ভালো এবং সন্তোষজনক। গতবছর ফল ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ, শতকরা হারে বেশি না বাড়লেও এবার জিপিএ-৫ বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার। এবছর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। গতবছর পেয়েছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। প্রায় ৩০ হাজার বেশি।
জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়া নিয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি জিয়াউল হক বাংলানিউজকে বলেন, এবার মেধাবীর সংখ্যা বেশি। একটা কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে গতবার যারা পরীক্ষা দিয়েছে তারা কিন্তু এবার দেয়নি। অর্থাৎ মানের উন্নতি হয়েছে, এটা আমাদের ধরে নিতেই হবে।
বিষয় ও বিভাগভিত্তিক ফল নিয়ে তিনি বলেন, বিজ্ঞান এবং গণিত ও ইংরেজিতে ফল গতবারের মতোই হয়েছে। ফলাফল ১-২ শতাংশ কমবেশি হতে পারে, তবে এটা স্বাভাবিক।
এবার রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ বাড়লেও কমেছে পাসের হার, যা সাত বছরের মধ্যে কম বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে দু’টি বিষয় জিপিএ-৫ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল দিয়েছে বলে মনে করেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাপারে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে মনিটর করি। শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলি। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করা হয়। এতে তারা উদ্বুদ্ধ হয় এবং গুরুত্ব দেয়। স্বল্প লোকবল ও প্রত্যন্ত এলাকায় যাওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে গিয়ে সীমিত পরিসরে এই কার্যক্রম নেওয়া হলেও ফল ইতিবাচক আসছে বলে মনে হয়।
এই মনিটরিং পদ্ধতি জাতীয়ভাবে করা হলে সারাদেশেই ভালো ফল আসবে বলে মনে করেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম।
উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বৈষম্যতার কারণে ফলাফলেও প্রভাব পড়ে বলে মনে করেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম।
সেই অবস্থা থেকে উত্তরণে পদক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা উত্তরপত্র বিতরণকালেই প্রধান পরীক্ষকদের দিয়ে মডেল উত্তরপত্র তৈরি করে গ্রুপ ডিসকাস করি। এতে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে যে পার্থক্য বা কমবেশি থাকে তার কারণ বের করার চেষ্টা করা হয়। এভাবে ন্যায্য নম্বর পেতে যাতে কেউ বঞ্চিত না হয় এবং ওভার মার্কিং না হয়- এগুলো থেকেই ফলাফলও সঠিক হয়।
ফলাফলে মোটামুটি যে ধারাগুলো বিদ্যমান ছিল সেটা অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।
পাসের হার জিপিএ-৫ প্রাপ্তি এবং মেয়েদের পাসের হারে এগিয়ে থাকার ধারা অব্যাহত থাকার কথা জানিয়ে হাওর বেষ্টিত সিলেট বিভাগ এবারও পিছিয়ে আছে বলে জানান তিনি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ৯০ এর দশকের শুরু থেকে মেয়েদের পেছনে বিনিয়োগ করা শুরু করেছি। তার ফল এখন পাচ্ছি। করোনা পরিস্থিতি এবং মেয়েদের এগিয়ে নিতে আগামী বাজেটেও তার প্রতিফল থাকা উচিত বলে মনে করেন রাশেদা কে চৌধুরী।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করে সরকারের কিছু উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
‘গত বছরের তুলনায় এবছরও ফলের সূচকে বেশকিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়ছে। আমরা বিশ্বাস করি এর পেছনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যেমন- বিনামূল্যে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়া, টেলিভিশনে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের পাঠদান, শিক্ষা উপকরণ হিসেবে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এবং নকল বিরোধী ব্যাপক প্রচারণা।
উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানান, গত বছরের ন্যায় এবারও উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন বা অতিমূল্যায়ন রোধে বোর্ডসমূহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রধান পরীক্ষকগণকে উত্তরমালা প্রণয়নের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রণীত নমুনা উত্তরমালার আলোকে উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষকগণকে প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের গণগতমান যাচাইয়ের জন্য একটি প্রশ্নমালা সকল প্রধান পরীক্ষককে সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া সারাবছর পরীক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনলাইনে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গৃহীত নানা পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকগণের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সমগ্র শিক্ষা পরিবারের সার্বিক সহযোগিতায় ফলাফলের এ অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন দীপু মনি।
তবে ভালো ফল করেও কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের, কারণটা হলো করোনা ভাইরাস। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এখনই ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২০
এমআইএইচ/এনটি