বৃহস্পতিবার (০৪ জুন) বেলা ১১টার দিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের মধুপুর পৌর শহরের মালাউড়ী সামছুন্নেছা চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে এ বিক্ষোভ করে। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস পেয়ে পরীক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কারিগরি শাখার সাতটি ট্রেডের এসএসসি সমমানের ১৪৩ শিক্ষার্থীর ফলাফলে সবাই ফেল করেছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট বা বাস্তবমুখী শিক্ষা ও অতিরিক্ত কৃষিশিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা না নেওয়া এবং নম্বর যোগ না হওয়ায় তাদের ফলাফলে এমন বিপর্যয়। এ নিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পর্যায়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। ফল প্রকাশের পরেরদিন অধ্যক্ষের বাস ভবন ঘেরাও করে কোনো আশ্বাস না পেয়ে তারা এ অবরোধ কর্মসূচিতে যায়।
খবর পেয়ে মধুপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করে। এক পর্যায়ে সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে অবরোধ তুলে নেয় তারা। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নিয়ে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে গিয়ে সমবেত হয়। সেখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ এবং মধুপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জোবাইদুল হক, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ সজীবসহ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা উপস্থিত হন।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শারমিন শিমু, সানজিদা, ফাহিমুল, আকাশ প্রমুখ তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। সমস্যা সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে চট্টগ্রামের টেক্সটাইল কলেজে অধ্যয়নরত ওই প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী তুহিন। তারা বলেন, নবম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা থেকে সমস্যা শুরু। প্রতিটি স্তরে শুধু আশ্বাস দিয়ে দিয়ে এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত আনা হয়েছে। অতিরিক্ত বিষয় কৃষি শিক্ষাসহ একাধিক বিষয়ে পরীক্ষা না নিয়ে পাস করানোর আশ্বাসে সময় ক্ষেপণ করা হয়। বয়সের জটিলতা দূর করতে অর্থ নিয়ে সেটি ঝুলিয়ে রাখা হয়। সব শেষে ফলাফলে ঢালাওভাবে সবার ফেল আসায় অনিয়ম ফাঁস হয়েছে। এতে এতোগুলো শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, মূল পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণের নম্বর বোর্ড না পাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের কন্ট্রোলারের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরবর্তীতে পাঠানো নম্বর যোগ করার ব্যবস্থা হচ্ছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ হবে। বয়স সংক্রান্ত জটিলতা দূর করার ইতোমধ্যে কোনো আইন ছিল না। তবে ওই বিষয়টিও ভেবে দেখা হচ্ছে। এর সমাধানেরও আশ্বাস পাওয়া গেছে।
জানা যায়, মধুপুর বহুমুখী মডেল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে কারিগরি শাখায় সাতটি ট্রেডে ১৪৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এসএসসি পরীক্ষার পর প্রত্যেক ট্রেডের জন্য ছয় সপ্তাহব্যাপী ৫০ নম্বরের বাস্তব প্রশিক্ষণ বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট চলার কথা। অংশ গ্রহণের ভিত্তিতে প্রত্যেক ট্রেড ইন্সট্রাক্টর এবং ডেমোনেস্ট্রেটর বাস্তব প্রশিক্ষণ দিয়ে পরীক্ষার্থীদের রোল নম্বরের বিপরীতে প্রাপ্ত নম্বর বসিয়ে বোর্ডে পাঠাবেন। করোনা দুর্যোগের অযুহাতে ইন্সট্রাক্টর এবং ডেমোনেস্ট্রেটরগণ এবার এ কাজটি করেননি।
প্রতিষ্ঠানের একটি সূত্র স্বীকার করেছে, পরীক্ষার্থী প্রতি এ সংক্রান্ত অতিরিক্ত ফি নিলেও বিষটির প্রতি যত্নবান ছিল না। প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতার জন্য ওই পরীক্ষার্থীদের ফল আসেনি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে বার বার এ বিষয়ে নোটিশ দিয়ে নম্বর পাঠানোর তাগিদ দিয়েও উদাসীনতা ভাঙাতে পারেনি।
এদিকে অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, খুব শিগগির শিক্ষার্থীদের প্রকৃত ফলাফল চলে আসবে। ফলাফল না আসার পেছনের কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বছর করোনা সংকটের কারণে সারা দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানে বাস্তব প্রশিক্ষণ হয়নি। এ বিষয়ে বোর্ডের কোনো নির্দেশনা না থাকায় ট্রেড ইন্সট্রাক্টরগণ সংশ্লিষ্ট খাতা ক্লোজ করে বোর্ডে নম্বর পাঠাতে পারেন নি। রেজাল্টের কিছুদিন আগে বোর্ড থেকে নোটিশ জারি করে নম্বর চাওয়া হয়। বোর্ড কন্ট্রোলারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে তার ব্যক্তিগত ই-মেইলে শিক্ষার্থীরদের গড় নাম্বার বসিয়ে গত ২৪ মে নম্বরপত্র পাঠানো হয়। করোনা সংকটের কারণে ভুলবশত আমার বিদ্যালয়সহ দেশের ১৫৩টি বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার ফলাফল আসেনি। নির্ধারিত জরিমানা দিয়ে পুনরায় নম্বর দেওয়া হয়েছে। দ্রুত ফল দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২০
এনটি