ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

অধ্যক্ষ নিয়োগে জালিয়াতি, দুদকের নির্দেশে তদন্ত শুরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২১
অধ্যক্ষ নিয়োগে জালিয়াতি, দুদকের নির্দেশে তদন্ত শুরু

লালমনিরহাট: দুদকের নির্দেশে লালমনিরহাটের মহিষখোচা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিয়োগের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।

বুধবার(২৭ জানুয়ারী) দুপুরে আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

 

অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, মহিষখোচা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে গত ১৯৯৭ সালের ১৮ অক্টোবর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে প্রভাষক পদে যোগদান করেন শরওয়ার আলম। এরপর ২০০১ সালে এপ্রিল মাসে এমপিওভুক্ত হন। যার ইনডেক্স নং-৬১৮৪০৮। এরপর তিনি সনদ জালিয়াতি করে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে উচ্চতর বেতন নিতেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ২০১১ সালের ৫ জুন কলেজ শাখার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শহিদুর রহমান অবসর নিলে পরদিন সহকারী অধ্যাপক শরওয়ার আলম প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। ওই সময় গঠিত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হলে নিম্ন আদালত ও মহামান্য হাইকোর্ট পরিচালনা পর্ষদের কার্যক্রম স্থগিতাদেশ দেন।  

আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ওই পরিচালনা পর্ষদের স্বাক্ষরে আগের পদে ইস্তফা না দিয়ে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণিপ্রাপ্ত শরওয়ার আলম গোপনে গত ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি যোগদান দেখালেও একই সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত আগের পদের বেতন-ভাতাদি তুলে আত্মসাৎ করতেন তিনি। বিরতিহীনভাবে সহকারী অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ পদের বেতন-ভাতাদি নিতেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য ১২ বছরের এমপিওভুক্তের অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক হলেও তার অভিজ্ঞতা ১১ বছরের নিচে। এ ছাড়া পরিপত্র অনুযায়ী অধ্যক্ষ পদে কোনোভাবেই তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু শরওয়ার আলম এসএসসি ও স্নাতকে তৃতীয় শ্রেণি নিয়েও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বাগিয়ে নেন। এভাবে সরকারি পরিপত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ নিয়ে সরকারি বেতন-ভাতা আত্মসাৎ করেন তিনি।  

অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরে যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক সতীশ চন্দ্র দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলেও দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ওই প্রভাষককে সম্পূর্ণ বেতন দেন  অধ্যক্ষ শরওয়ার আলম। একই সঙ্গে মর্জিনা পারভিন নামের একজনের কাছে নয় লাখ টাকা নেওয়ার পরও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেননি। রবিউল ইসলাম নামে একজনকে ১২ লাখ টাকায় অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দিয়ে আরও দুই লাখ টাকা দাবি করেন অধ্যক্ষ শরওয়ার আলম। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তার বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করেন অধ্যক্ষ। নিয়োগের নামে অধ্যক্ষ শরওয়ার আলমের বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্য এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা পরিচয় গোপনের শর্তে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।  

অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত ০০.০১.০০০০.১০৯.৩৮.০০১.২০-৩৩ নং স্মারকে ৭ জানুয়ারি একটি চিঠি পাঠিয়ে লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত করে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ই-মেইলে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।  

দুদকের নির্দেশনা পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিজ দফতরে অভিযোগের সপক্ষে একাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্য নেন।

নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করে মহিষখোচা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ শরওয়ার আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমার এসএসসি ও স্নাতকে তৃতীয় শ্রেণি হলেও নিয়োগ তৎকালীন বিধি অনুযায়ী হয়েছে। কয়েকবার অডিট হয়েছে, কোনো আপত্তি ছিল না। এখন শিক্ষ অফিস তদন্ত করছে। নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়নি, তাই নিয়োগ বাণিজ্যের প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না।  

আদিতমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফ মাহফুজ বাংলানিউজকে বলেন, দুদকের চিঠির আলোকে তদন্ত শুরু করেছি। যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।  

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক সনদ জাল ও জালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিস তদন্ত করছে। অধ্যক্ষ শরওয়ার আলমের বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ এসেছে। তাই ওই অধ্যক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২১
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।