ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

মেধার আলো ছড়াচ্ছে পাহাড়ের পাঠশালাটি

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২২
মেধার আলো ছড়াচ্ছে পাহাড়ের পাঠশালাটি

রাঙামাটি: যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। তাই যুগে যুগে পাঠশালাকে বলা হয়- জ্ঞান অর্জনের কারখানা।

 

রাঙামাটি শহরের রাঙাপানি এলাকায় ১৯৯৯ সালে এক একর জমিতে গড়ে তোলা হয় মেধা তৈরির প্রতিষ্ঠান  ‘মনোঘর প্রি-ক্যাডেট স্কুল’। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের বিনোদনের সঙ্গে মেধার আলোয় আলোকিত করে তুলছে।  

স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ায় মনোনিবেশের জন্য মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ দিয়ে ঘেরা হয়েছে চারদিক। ফুল, হরেক রকম গাছে সাজানো হয়েছে পুরো স্কুল এলাকা। আছে পার্ক, বাগান, ক্যান্টিন, খেলা এবং সাংস্কৃতিক শিক্ষা অর্জনের সুব্যবস্থা।  

১৫ জন দক্ষ শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ২০০ জন ক্ষুদে শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুলে কেজি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি নাচে, গানে, ছবি আঁকা, শারীরিক কসরত, আচার-আচরণ এবং মানসিক বিকাশে তাদের এমনভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে, যা সচরাচর পাহাড়ের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় না।  

এ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা লেখা-পড়ায়, খেলায়, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিযোগিতায় অনন্য কীর্তি গড়ে তুলছে দিন দিন। সঙ্গত কারণে স্কুলটি পাহাড়ের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছে।

স্কুলের পার্কে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী ফাবিহা বুশরা বিনতে মোস্তফা তোরশা বাংলানিউজকে বলেন, এখানে এসে অনেক ভালো লাগছে। দোলনায় চড়েছি। বাগানের চারদিক ঘুরেছি।

শিক্ষার্থী জাফরিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি শুক্রবার মনোঘর প্রি-ক্যাডেট স্কুলের পার্কে চলে আসি। এখানে এলে মনটা ভালো হয়ে যায়। চারদিক ফুল-গাছ ঘেরা এবং খেলার ব্যবস্থাও আছে।

শিক্ষার্থী ফারজানা ইয়াসমিন সোনিয়া বাংলানিউজকে বলে, আমি আমার খালার সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। সুন্দর স্থান, দেখে অনেক ভালো লাগছে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, স্কুলের শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের জন্য স্কুলের আঙিনায় মনোমুগ্ধকর নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে পার্ক। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো- শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটানো।

স্কুল আঙিনায় ফুলে বাগান, বিভিন্ন ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা এসব গাছের দেখভাল করেন। করোনার কারণে স্কুলের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় গত বছর থেকে স্কুলের পার্কটি ১০ টাকার টিকিটের বিনিময়ে সাধারণ  দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। যা একদিকে দর্শনার্থীরা উপভোগ করার সুযোগ দিচ্ছে, অন্যদিকে স্কুলের করোনাকালীন সংকট দূর হয়ে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা স্কুলটির এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগ দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

মনোঘর প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোনা ধন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের স্কুল অন্যান্য স্কুলের চেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী হওয়ার কারণ হলো, স্কুলের শিক্ষকদের একাডেমিক ডিগ্রির পাশাপাশি স্কাউটিং ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও পারদর্শী হতে হয়। স্কুল প্রাঙ্গণ সম্পূর্ণ ধূমপানমুক্ত।  

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, আমাদের স্কুল থেকে যেসব শিক্ষার্থীরা পাস করে গেছেন, তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে কর্মরত আছেন এবং মেধার স্বাক্ষর রাখছেন।

পাহাড়ের শিক্ষানুরাগীরা বলছে, মনোঘর প্রি-ক্যাডেট স্কুল তাদের নিজস্ব পাঠদানের ভিন্নতায় রাঙামাটি জেলায় অনন্য নিদর্শন গড়েছে। এ স্কুলের মতো স্থানীয় অন্য স্কুলগুলোতে এমন পরিবেশ গড়ে তোলা গেলে পাহাড়ের শিক্ষা ব্যবস্থা আরও সমৃদ্ধ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।