ঢাকা: ভোটার হওয়ার জন্য হিজড়া জনগোষ্ঠীর যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রত্যয়ন লাগবে। এক্ষেত্রে সমাজসেবা বা জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) শুরু হওয়ার বাড়ি বাড়ি ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচিতে বিষয়টি নিশ্চিত করতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সংস্থাটির নির্বাচন সহায়তা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী ইতোমধ্যে নির্দেশনাটি পাঠিয়েছেন।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বীকৃতি প্রদানের প্রেক্ষাপটে হিজড়ারা নতুনভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে তাদের শনাক্তকরণের জন্য সমাজসেবা অফিসের প্রত্যয়ন অথবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে হবে। এ বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টি রাখতে হবে, তারা যেন ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোনোভাবেই বঞ্চিত না হয়।
২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর মন্ত্রিসভায় হিজড়াদের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃত দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তার ধারবাহিকতায় নির্বাচন কমিশনও ভোটার তালিকা আইনে পরিবর্তন এনে হিজড়াদের স্বীকৃতি দেয়।
২০১৯ সালে সে অনুযায়ী ভোটার হওয়ার ফর সংশোধন করে নারী ও পুরুষের পাশাপাশি হিজড়া শব্দটিও অন্তর্ভুক্ত করে। এর আগে তাদের নারী বা পুরুষ হিসেবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতো। এরপরও হিজড়া শনাক্তকরণে সিভিল সার্জনের প্রত্যয়ন লাগতো। সেখানে তারা অনেক হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ আনলে সমাজসেবা বা স্থানীয় প্রতিনিধির প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক করে ইসি। বর্তমান ভোটার তালিকায় এক হাজারের মতো হিজড়া রয়েছেন।
ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলবে। তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে ছবি তোলে নিবন্ধন সম্পন্ন করার কাজ। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা। পুরো কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত থাকবে ৬৫ হাজার লোকবল। যারা ১ দশমিক ৫২ শতাংশ নাগরিককে ভোটার তালিকায় যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করবেন।
এদিকে ২০২২ সালে নেওয়া তিন বছরের তথ্যের শেষ ধাপের হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে ১৮ লাখের মতো ভোটার আগামী মার্চে যোগ হতে পারে। সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। বাড়ি বাড়ি হালনাগাদে ১৯ লাখ নতুন ভোটার তালিকায় যোগ হতে পারে। ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এর আগে ভোটার তালিকা হালানাগাদ করা হয়েছে ছয়বার। ২০০৯-২০১০ সাল, ২০১২-২০১৩ সাল, ২০১৫-২০১৬ সাল, ২০১৭-২০১৮ সাল, ২০১৯-২০২০ ও ২০২২-২০২৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি।
ভোটার তালিকা হালনাগাদে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র তথ্য সংগ্রহকারীদের দিতে হবে:
ক) ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মসনদের কপি
খ) জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের কপি
গ) নিকট আত্মীয়ের এনআইডির ফটোকপি (পিতা-মাতা, ভাই-বোন প্রভৃতি)
ঘ) এসএসসি/দাখিল/সমমান, অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
ঙ) ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি/চৌকিদারি রশিদের ফটোকপি)
ভোটার হওয়ার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে:
ক) নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদের সাথে হুবহু মিলিয়ে লিখতে হবে
খ) জন্ম তারিখ অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী হতে হবে
গ) স্থায়ী ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভোটারের প্রকৃত স্থায়ী ঠিকানা লিখতে হবে
ঘ) কোনো অবস্থাতেই দ্বৈত বা দুইবার ভোটার হওয়া যাবে না।
এক বিজ্ঞপ্তিতে ইসি জানিয়েছে, একাধিকবার ভোটার হওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ একাধিকবার ভোটার হলে আঙুলের ছাপ পরীক্ষার মাধ্যমে তা সহজেই শনাক্ত করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২৫
ইইউডি/এএটি