ঢাকা: ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে দেখা গেছে, নতুন ভোটার হতে আগ্রহীদের মধ্যে নারীদের কাছ থেকে বেশি সাড়া মিলেছে।
মাঠপর্যায় থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইসির তৈরি করা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন থেকে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি ভোটার হয়েছেন ঢাকায়। আর সবচেয়ে কম ভোটার হয়েছেন ফরিদপুর অঞ্চলে।
ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) শাখার পরিচালক মো. আব্দুল মমিন সরকারের তৈরি করা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নতুন ভোটার হওয়ার জন্য তথ্য দিয়েছেন ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৩ জন পুরুষ। আর নারী ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৪৪৮ জন। অর্থাৎ পুরুষের চেয়ে নারী বেশি এক লাখ ৫১ হাজার ১৯৫ জন।
এদিকে হিজড়া সম্প্রদায়ের সাড়াও আগের চেয়ে বেড়েছে। এবার দুই হাজার ৩৩৬ জন হিজড়া ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, এবার নারী ও হিজড়াদের সাড়া তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।
সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ জন, আর নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ ৪ হাজার ৬৪১ জন। আর হিজড়া ভোটার ৯৩২ জন। সেই হিসেবে এবারের হালনাগাদে নারী ভোটার বাড়লেও নারী-পুরুষ ভোটারের ব্যবধান খুব একটা কমবে না।
নারীরা বেশি সাড়া দিলেন যে কারণে
ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দীন চৌধুরী জানান, ধারাবাহিকভাবে গত কয়েক বছরে নারী ভোটার ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ার পেছনে আটটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছিল।
কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহে অনীহা; হিন্দু অবিবাহিত মেয়েদের পিত্রালয়ে নিবন্ধন করতে অনীহা; অবিবাহিত, অনগ্রসর ও নিরক্ষর মেয়েদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ কম; বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হওয়া; রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র দূরবর্তী হওয়া; আবহাওয়া অনুকূলে না থাকা; সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় অজুহাতে ছবি তুলতে অনীহা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের অসচেতনতা অন্যতম।
এমন পরিস্থিতিতে নারী ভোটার বাড়াতে মাঠ কর্মকর্তাদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। নারীদের অন্তর্ভুক্তির হার যেন উল্লেখযোগ্যভাবে কম না হয়, সেই লক্ষ্যে হালনাগাদ কার্যক্রমের সময় সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (বিশেষ করে সংরক্ষিত আসনের সদস্যগণকে), দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও গ্রাম পুলিশ বা চৌকিদার-দফাদারকে সম্পৃক্ত করতে বলেছিল ইসি। বিশেষ করে প্রচারের কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে বলা হয়েছিল।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, নারী ভোটার বাড়াতে আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এবার বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। তবে নতুন ভোটারদের তুলনায় আগেরবার বাদ পড়া নাগরিকদের সাড়া বেশি মিলেছে।
এদিকে হালনাগাদ কার্যক্রমে নারীর তুলনায় পুরুষ ভোটার বেশি মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছে ইসি। পুরুষ ভোটার মারা গেছেন নয় লাখ দুই হাজার ১১৮ জন। আর নারী ভোটার মারা গেছেন ছয় লাখ ৭২ হাজার ৮৮৯ জন। এছাড়া হিজড়া ভোটার মারা গেছেন ৫৮৮ জন। সবমিলিয়ে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫৯৩ জন মৃত ভোটারের তথ্য মিলেছে। সবচেয়ে বেশি ভোটার মারা গেছেন রাজশাহী অঞ্চলে, দুই লাখ ২৮ হাজার ৫৫৭ জন। আর সবচেয়ে কম ভোটার মারা গেছেন ফরিদপুর অঞ্চলে ৯৪ হাজার ৮১৬ জন।
গত ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম। ইসির তথ্য সংগ্রহকারীরা মোট ৫০ লাখ ৯০ হাজার ৩৭ জনের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ঢাকা অঞ্চলে ভোটার হওয়ার জন্য সাড়া মিলেছে সবচেয়ে বেশি, সাত লাখ ৩১ হাজার ১৫০ জন। আর সবচেয়ে কম সাড়া মিলেছে ফরিদপুর অঞ্চলে, দুই লাখ ৪৪ হাজার ২৬৫ জন এই অঞ্চলে ভোটার হওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছেন।
গত সোমবার তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়। বুধবার থেকে শুরু হয়েছে নিবন্ধনকেন্দ্রে ছবি তোলা, আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার কাজ। আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, যারা বাদ পড়েছেন, এ সময়ের মধ্যে তারা ভোটার হতে পারবেন। এক্ষেত্রে এরইমধ্যে যে তথ্য এসেছে, সেই সংখ্যা এদিক-সেদিক হতে পারে।
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর ভোটার তালিকা হালানাগাদ করা হয়েছে ছয়বার। ২০০৯-২০১০, ২০১২-২০১৩, ২০১৫-২০১৬, ২০১৭-২০১৮, ২০১৯-২০২০ ও ২০২২-২০২৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম চালায় ইসি।
ভোটার তালিকা হালনাগাদে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য কিছু কাগজপত্র তথ্য সংগ্রহকারীদের দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে— ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্ম সনদের কপি; জাতীয়তা বা নাগরিকত্ব সনদের কপি; নিকটাত্মীয়ের এনআইডির ফটোকপি (পিতা-মাতা, ভাই-বোন প্রভৃতি); এসএসসি বা দাখিল বা সমমান, অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে); ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি বা চৌকিদারি রশিদের ফটোকপি)।
ভোটার হওয়ার সময় কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছে ইসি। এর মধ্যে— নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদের সঙ্গে হুবহু মিলিয়ে লিখতে হবে। জন্ম তারিখ অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী হতে হবে। স্থায়ী ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভোটারের প্রকৃত স্থায়ী ঠিকানা লিখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই দ্বৈত বা দুইবার ভোটার হওয়া যাবে না।
এক সতর্কবার্তায় ইসি জানায়, একাধিকবার ভোটার হওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ একাধিকবার ভোটার হলে আঙুলের ছাপ পরীক্ষার মাধ্যমে তা সহজেই শনাক্ত করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৫
ইইউডি/আরএইচ