ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ জুলাই ২০২৫, ২৮ মহররম ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

বরিশাল-৪ আসনে প্রার্থী হতে চান ডাকসাইটে নেতারা

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:০২, জুলাই ২৩, ২০২৫
বরিশাল-৪ আসনে প্রার্থী হতে চান ডাকসাইটে নেতারা (ওপরে বাম থেকে) আব্দুল জব্বার, জে এম নুরুর রহমান, আব্দুল খালেক হাওলাদার, (নিচে বাম থেকে) মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ, রাজীব আহসান, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ আবুল খায়ের

বরিশাল: মেঘনা, কালাবদর, মাসকাটা, কালাবদর, আড়িয়াল খা, ধর্মগঞ্জসহ বিভিন্ন নদী ঘিরে রেখেছে বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাকে। নদী ভাঙন কবলিত এই দুই উপজেলা ঘিরে জাতীয় সংসদের ১২২ নম্বর অর্থাৎ বরিশাল-৪ আসনের অবস্থান।

 

২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ তিনটি নির্বাচনের ফলাফল বাদ দিলে এ আসনটি বরিশাল-৩ আসনের মতো বিএনপির ঘাঁটিই বলা চলে। ফলাফল অনুযায়ী, ১৯৭৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৮টি নির্বাচনের ৫টিতেই এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসন থেকে বিএনপি জনবান্ধব প্রার্থী দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এবারে এ আসনে এরই মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অধ্যাপক আবদুল জব্বারের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের দলের সহকারী মহাসচিব মুফতী সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়েরের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। আবার নাগরিক ঐক্যও এ আসনে ডাকসাইটে নেতাকে প্রার্থী বানানোর চিন্তা ভাবনা করছে।

অপরদিকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে থাকায় তাদের কথা শোনা না গেলেও সুযোগ পেলে জাতীয় পার্টি এ আসন থেকে প্রার্থী দিতে পারে। এর বাইরে এ আসনে তেমন কোনো দলের প্রার্থীর কথা শোনা যাচ্ছে না।  

এদিকে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহউদ্দিন ফরহাদকে শক্ত চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান। তরুণ এই নেতা এলাকায় অনেক আগ থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। রাজীবকে টপকে ফরহাদকে এবার মনোনয়ন পেতে দারুণ বেগ পেতে হবে ধারণা করা হলেও নমিনেশনের শেষ খেলাটা এই দুই জনের মধ্যেই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর রাজীব আহসান যদি দলীয় মনোনয়ন পেয়েই যান, তাহলে এ আসনে অন্য প্রার্থীদের জয়ী হতে বেগ পেতে হবে।

এছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসাবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক হাওলাদার, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট এম হেলাল উদ্দিনের নামও রয়েছে। তবে ২০১৮ সালের মতো যদি জোটের চিন্তা করা হয় তাহলে নাগরিক ঐক্যের জে. এম নুরুর রহমানের হিসাব কষতেই হবে। তিনি এবারেও এ আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন।

বিএনপির চারজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে প্রত্যেকেই বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নানানভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। এছাড়া জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ একাধিকবার নিজ সংসদীয় এলাকায় হামলার শিকার হয়েছেন, পাশাপাশি বহু মামলার আসামিও ছিলেন। তবে সব থেকে বেশি মামলার শিকার হয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান। গত দেড়যুগে একাধিকবার জেলও খেটেছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসান। তারপরও তিনি বিএনপির হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন সংগ্রামে ফ্রন্ট লাইনে যেমন ছিলেন, তেমনি সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধেও সদা সোচ্চার ছিলেন।

প্রায় চার লাখ ভোটারের এ আসনের ভোটাররা বলছেন, গত কয়েক বছরে এ আসনে মাঠপর্যায়ে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়িয়ে চলেছে। সেইসাথে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নানানভাবে সাধারণ মানুষের কাছে থাকার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে আওয়ামী সরকারের পতনের পর এ দলগুলোর নেতারা নিজেদের উপস্থিতি সবসময় জানান দিয়ে যাচ্ছেন।

শ্রীপুরের বাসিন্দা ভোটার আ. মালেক খান বলেন, গত ১৫ বছরে কেউ কোনো নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি, আবার যারাও গেছে তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট না দিয়েই ফিরে এসেছে। এ অবস্থায় এবারে ভোট সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা দেখে সবাই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছে। সবকিছু ঠিক থাকলে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম হবে না, তবে নদী বেষ্টিত মেহেন্দিগঞ্জের সাধারণ মানুষের ভোট পেতে হলে, ভোটারদের জনসম্পৃক্ত হতে হবে। যেমনটা এরই মধ্যে শুরু করেছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

আর এ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ বলেন, শেখ হাসিনা তিন তিনবার নির্বাচন করেছে কিন্তু ভোটার যায়নি। তবে যেহেতু এবারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোটের কথা বলছে, তাই জনগণ তাতে অংশগ্রহণ করবে। আর জনগণের অংশগ্রহণের ভোটে বিএনপির প্রার্থীই এ আসনে জয় লাভ করবে।

দলীয় মনোনয়ন পেলে জয়ের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত এই নেতা বলেন, আমি সবসময় জনগণের স্বার্থে কাজ করেছি, দুর্নীতি করিনি, টিআর-কাবিখা লুট করিনি, তাই সাধারণ মানুষও আমাকে ভোলেনি।

এদিকে এ আসনের জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল জব্বার বলেন, নদী বেষ্টিত হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের মানুষ বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করলেও তাদের মনটা খুবই নরম। আমি জয়ী হওয়ার জন্যই মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি, আশা করি মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।

বিগত সরকারের আমলে ৫টি মামলার আসামি হয়ে একাধিকবার কারবরণকারী এই নেতা বলেন, বিগত সময়ে ওপেন রাজনীতি করার সুযোগ না পেলেও আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম কখনও বন্ধ হয়নি। এমনকি বরিশাল বেল্টে সাংগঠনিক স্টাকচারগতভাবে মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা ও কাজীরহাট খুবই শক্তিশালী। এখানে আগামী নির্বাচনে আমাদের নেতা-কর্মী, কোনো কিছুর ঘাটতি থাকবে না।

বিভিন্ন সংস্থার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের নির্বাচন পর্যবেক্ষককারী আনিসুর রহমান স্বপন বলেন, নদীর কারণে হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা উপজেলা সদর থেকেও বিচ্ছিন্ন। সেখানে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে নৌবাহিনী, সেনাবাহিনীসহ পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সেইসাথে প্রার্থীদেরও ভোট ও ভোটারদের বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।

উল্লেখ্য, বারবার সীমানার পরিবর্তন ঘটলেও বরিশাল-৩ আসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখান থেকে ১৯৭৩ সালে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ), ১৯৭৯ সালে সিদ্দিকুর রহমান (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), ১৯৮৬ সালে মইদুল ইসলাম (জাতীয় পার্টি -এরশাদ), ১৯৯১ সালে মহিউদ্দিন আহমেদ (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ), ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ তে শাহ এম আবুল হোসেন (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), জুন ১৯৯৬ তে শাহ এম আবুল হোসেন (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), ২০০১ সালে শাহ এম আবুল হোসেন (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), ২০০৮ সালে মো. মেজবাউদ্দীন ফরহাদ (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার পঙ্কজ নাথ (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র) নির্বাচিত হয়েছেন।

এমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।