ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনি যদি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না দিতে পারেন, তাহলে বিগত নির্বাচন কমিশনের পরিণতি হবে। আপনার গলায় গামছা এবং মাজায় রশি লাগতে পারে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
ইসলামী আন্দোলনের এই মুখপাত্র বলেন, আমরা বৈঠকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলেছি, যেটা এখন অনুপস্থিত। সিইসিকে আমরা বলেছি যে, আপনি যদি মনে করেন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারবেন তাহলে আপনি নির্বাচন দেন। আর যদি আপনি মনে করেন সুষ্ঠ, গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারবেন না, তাইলে আপনি ঝুঁকি নেবেন না। কারণ যদি আপনি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না দিতে পারেন, তাহলে বিগত নির্বাচন কমিশনের পরিণতি আপনাকে ভোগ করতে হবে। আপনার গলায় গামছা এবং মাজায় রশি লাগতে পারে। এই অবস্থাটা আপনি মনে রাখবেন। এটা মনে রেখেই আপনি নির্বাচনের দিকে যাবেন।
গাজী আতাউর রহমান আরও বলেন, বিদ্যমান পদ্ধতি বাতিল করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এখন গণদাবি। এই দাবি নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাব। উচ্চকক্ষে যাই হোক আমরা সংসদের নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই।
ইসলামী আন্দোলেন বাংলাদেশের এই নেতা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো অনুপস্থিত। আমাদের নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া পরিবেশের ওপর নির্ভর করবে। আমরা একটি সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চাই। এ জন্য যা করণীয় সেটা আমরা করতে বলেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই সনদের জন্য যখন রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনায় আছে, এটা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের একটা সময় ঘোষণা করে দিলেন। এতে আমরা মনে করি যে, এই জাতীয় ঐকমত্যের বিষয়টাকে উনি অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছেন। আমরা মনে করেছিলাম জাতীয় ঐকমত্য হবে, জুলাই সনদ হবে। তারপরে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের একটা সময় ঘোষণা করবেন। এখন এটার পরিণতি কী হবে, এটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
ইসির কাছে তুলে ধরা সাত দফার কথা জানান দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ। দাবিগুলো হলো—বিগত ক্ষমতাসীন দলগুলো যেভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনকে দলীয় এবং ক্ষমতার অশুভ প্রভাব খাটিয়ে বিতর্কিত ও ব্যর্থ করেছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করা; সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনী কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্বশীল এবং দলনিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য প্রশিক্ষণ ও দিক নির্দেশনা দিতে হবে, এর ব্যত্যয় হলে তাদের আইনের আওতায় এনে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা; সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দেশের গৌরব সেনাবাহিনীকে শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নয় বরং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সেনা সদস্য মোতায়েনের ব্যবস্থা করা; জুলাই জাতীয় সনদের আলোকে ও সংস্কারের ভিত্তিতে জাতীয় এবং সকল স্থানীয় নির্বাচন করা; শতভাগ জনমতের মূল্যায়নের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদ গঠনের লক্ষ্যে সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখা; ফ্যাসিস্ট, খুনি, মানবতাবিরোধী অপরাধী ও আধিপত্যবাদী শক্তির এজেন্ট আওয়ামীলীগ ও তার সকল দোসর ও সহযোগী দলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা এবং তাদের নিবন্ধন বাতিল করা; এবং দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, টেন্ডারবাজ ও খুনিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
ইইউডি/এমজেএফ