ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

আওয়ামী লীগে ঘরের শত্রু বিভীষণ!

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
আওয়ামী লীগে ঘরের শত্রু বিভীষণ! বরিশাল শহরের হিরণ টাওয়ার

বরিশাল থেকে: তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আর মাত্র ৬ দিন বাকি। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি ছাড়াও মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন একজন।

নির্বাচনে বিএনপি চাইছে বরিশাল নগরের দলের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চাইছে নিজেদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে। অন্য প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা সামান্য হলেও তারা প্রধান দুই প্রার্থীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবেন বলে মনে করছেন বরিশাল সিটির ভোটাররা।

মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও ধানের শীষের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের মধ্যে। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অর্থাৎ চরমোনাই পীরের প্রার্থী ওবাইদুর রহমান মাহবুব ভোট কাটবে ধানের শীষের আর জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস, বাসদের মনীষা চক্রবর্ত্তী, কমিউনিস্ট পার্টির আবুল কালাজ আজাদ কাটবে নৌকার ভোট।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ পারিবারিক পরিচয় প্রধান হলেও ভোটে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আর আওয়ামী লীগের বিজয় ঠেকাতে বিএনপি বা অন্য দল না আওয়ামী লীগই যথেষ্ট, এমন কথাই বলছেন বরিশালের ভোটাররা।

২০১৩ সালে প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের নাম উঠে আসছে ভোটারদের কথায়। ওই নির্বাচনে হিরণের ব্যাপক গণজোয়ার ছিল। তখন তিনি মেয়র পদে পুনর্নির্বাচন করছিলেন। তার অতীত কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ভোটাররা তাকেই ভোট দেবে বলে আত্মতৃপ্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু ভোটের দিন পাল্টে যায় চিত্র। বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল।

হিরণের ওই পরজয়ের পেছনে বড় ফ্যাক্টর ছিল আওয়ামী লীগ নিজেই। ভোটের দিন নৌকার ব্যাজ পড়ে ভোট দেয় ধানের শীষে। এমন কথা এখনও চাউড় আছে বরিশাল সিটিতে। তাই এবারও হিরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। সেই আশঙ্ক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝেও রয়েছে।

সেই শঙ্কার চাইতেও বড় হিসেব-নিকেশ দলের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্ব। বরিশাল বিভাগীয় আওয়ামী লীগের একটি বড় গ্রুপ চায় না হাসনাত আব্দুল্লাহর পরিবারের হাতে উঠুক বরিশালের রাজনীতির চাবিকাঠি। এখানে বরিশাল বিভাগের সিনিয়র আওয়ামীগ নেতারা সাদিক আব্দুল্লাহকে মৌন সমর্থন দিলেও মাঠে তাদের কর্মী নাই। তাছাড়া হিরণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার কথা ভোলেননি তার কর্মী সমর্থকরা। তাই এবারও আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই প্রস্তুত হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে প্রকাশ্য কেউ বিরোধিতা করছেন না। বরিশাল সদরের এমপি হিরণের স্ত্রী জেবুননেসা আফরোজ মেয়রপ্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে মৌন সমর্থন দিলেও মাঠে নেই তার কর্মীরা।

অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বাংলানিউজকে বলেন, কত কথাই তো শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। আসলে আচারণবিধির গ্যারাকলে আমরা আটকে আছি। যেটা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।

অন্যদিকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বাংলানিউজ বলেন, গত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা প্রস্তুত। আমরা চিহ্নিত করে ফেলেছি কারা এটা করতে পারে। সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। কাজেই এবার সেই সুযোগ পাবে না।

সদর আসনের এমপির বাড়ির আশপাশেই ভোটের তোড়জোড় নেই। নেই নৌকার কোন পোস্টার-ফেস্টুন। এমপি মৌন সমর্থন দিলেও ভোটের মাঠে নেই।

এ ব্যাপারে বরিশাল সিটির ভোটার সবুজ বলেন, হিরন মেয়রকে যে বার হারানো হয় সেবার কেউ মনে করেনি মেয়র পরাজিত হবেন। সেদিন সবাই নৌকার ব্যাজ বুকে ধানের শীষে সিল মেরছিল। কাজেই আওয়ামী লীগের ঘরের শত্রু বিভীষণ! এটা কাটিয়ে উঠতে না পারলে ভোটের হিসাব ভিন্ন হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
এসএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।