ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ঋণ খেলাপের দায়েই বেশিরভাগ মনোনয়ন বাতিল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৮
ঋণ খেলাপের দায়েই বেশিরভাগ মনোনয়ন বাতিল ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণ খেলাপের দায় ও ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন না দেখাতে পারার কারণেই সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা শাখা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো তথ্য সমন্বয় করে এমন তথ্য জানিয়েছে।
 
২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই করে ২ হাজার ২৭৯টি বৈধ ও ৭৮৬টি অবৈধ বলে ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

এগুলোর মধ্যে-বিএনপির ১৪১টি, আওয়ামী লীগের ৩টি এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) ৩৮টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৩৮৪টি।  

এবার ৩৯টি দল ও সতন্ত্র প্রার্থী মিলে ৩ হাজার ৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা পড়ে মোট ২ হাজার ৫৬৭টি ও স্বতন্ত্র ৪৯৮টি।
 
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে ঋণ খেলাপের দায়ে মনোনয়নপত্র বাতিলের সংখ্যা শীর্ষে। এদের মধ্যে আবার বিএনপির প্রার্থীরাই বেশি। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বেশিভাগের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন সূচক প্রমাণ দেখাতে না পারায়।
 
নেত্রকোনা-১ আসনের শাহ কুতুবউদ্দিন তালুকদার আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাবি করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কোনো দলিলাদি জমা দেননি।
 
একই আসনে এরশাদুর রহমানও আওয়ামী লীগের দাবি করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে দলীয় প্রত্যয়ন জমা দেননি। এ কারণে দু’জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
 
নেত্রকোনা-৫ আসনে আবু তাহের তালুকদার ও রাবেয়া খাতুন নামে দু’জন বিএনপির দাবি করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে দলীয় মহাসচিবের স্বাক্ষরের মিল না থাকায় বাতিল হয়েছে মনোনয়নপত্র।
 
পিরোজপুর-১ আসনে মনিমোহন বিশ্বাস মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির হয়ে। কিন্তু মনোনয়নপত্রের কোথাও স্বাক্ষর নেই, হলফনামাও নেই।
 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ রকম হরেক রকমের ত্রুটির কারণে ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৭৮৬টি।
 
স্থানীয় সরকারের লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকা, পদ ছেড়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ও পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় অন্তত ৩৬ জন জনপ্রতিনিধির মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
 
বাকিগুলো মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর, দলিল, হলফনামা না দেওয়া, দলীয় প্রত্যয়ন না দেওয়াসহ নানা ধরনের আইনি ব্যত্যয় ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন।
 
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ২ বছরের বেশি সাজার কারণে। এমন আরও অন্তত তিন জন রয়েছেন দণ্ড থাকার কারণে বাতিলের খাতায়।
 
নিবন্ধন বাতিল হওয়া ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের হয়েও অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলীয় প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র দিলেও ‘অনিবন্ধিত’ হওয়ায় তা বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
  
রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল আবেদন চলছে। দু’দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে ৩ শতাধিক আবেদন করা হয়েছে। বুধবার (৫ ডিসেম্বর) আবেদনের শেষ দিন।
 
মনোনয়নপত্র বাতিলের যত কারণ
 
এবারের নির্বাচনে ৩০টির বেশি কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত, হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকা, দলিলাদি যুক্ত না করা, প্রার্থী স্বাক্ষর না করা, সম্পদের সর্বশেষ রিটার্নের কপি না দেওয়া, উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ না করা, তথ্য অসম্পূর্ণ, ঋণ খেলাপি, বিল খেলাপি, দলীয় মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর ও নমুনা স্বাক্ষরে মিল না থাকা, হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকা, মেয়র পদে অধিষ্ঠিত থাকা, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত থাকা, আরপিও ১২ অনুচ্ছেদের ৩ বি ব্যত্যয়, তথ্য গোপন করে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকা, হলফনামায় তথ্য গোপন করা, অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর ৩ বছর পার না হওয়ায়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়া, ১০টি ভোটারের স্বাক্ষর মিল না থাকা, দলীয় প্রার্থী হয়েও প্রত্যয়ন না থাকা, নিবন্ধন বাতিল হয়েও প্রার্থী হওয়া, হালনাগাদ কর পরিশোধের বিল না করা, পৌর মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ না করা, ২ বছরের বেশি সময় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের অনুলিপি না দেওয়া, হলফনামায় স্বাক্ষরের পাশে তারিখ উল্লেখ না করা, প্রস্তাবক-সমর্থক-প্রার্থীর ভোটার নম্বর সঠিক না থাকা, হলফনামা দাখিল না করা, ফৌজদারী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, প্রস্তাবকের স্বাক্ষর না থাকা, স্বাক্ষরবিহীন সম্পূর্ণ ফাঁকা রাখা, আয়কর সার্টিফিকেট না থাকা, পল্লী বিদ্যুতের বিল নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ না করা, ভোটের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না খোলা, প্রার্থী যে আসনের ভোটার সমর্থক সে আসনের ভোটার না হওয়ায়, হলফনামায় স্ট্যাম্প না থাকায়, মামলায় দণ্ড থাকার কারণে, মনোনয়নপত্রের কোথাও স্বাক্ষর ও হলফনামাও নেই, আয়ের বিবরণী পূরণ না করা, জামানতের কাগজপত্র নেই, শতাংশ ভোটার সমর্থন স্বাক্ষরে গরমিল, সমর্থন তালিকা না দেওয়া ইত্যাদি।
 
বুধবার পর্যন্ত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর শুনানি করে আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করবে ইসি।
 
৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ। আর ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০১০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮
ইইউডি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।