ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ভোটের জটিল অংক বগুড়া-৪ আসনে

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৮
ভোটের জটিল অংক বগুড়া-৪ আসনে

বগুড়া: হাতে চায়ের কেতলি। ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে কাপ পরিষ্কার করে নিচ্ছেন দোকানি। বগুড়ার কাহালু উপজেলা শহরের চারমাথায় ফুটপাতের পাশে বসানো এই দোকানের ভেতরটায় বেশ কয়েকজন কাস্টমার তখন মত্ত নানা আলাপচারিতায়। 

দোকানি সাজু ইসলামের সঙ্গে কথা হচ্ছিল আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। নির্বাচনে অনেক অংক সামনে এলেও তার ভাষ্যে, কাহালু-নন্দীগ্রাম নিয়ে গঠিত বগুড়া-৪ আসনে বিএনপিই এগিয়ে।

 

তবে ভোটের হিসাব যে বড়ই জটিল সে কথাও বলেন সাজু। তার মতো আরও কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানটায় সহজেই কোনো দলকে এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না। চোখ বুজে যে ভোটাররা ব্যালটে সিল মারবে, সে কথাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

কারণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত, বিভিন্ন পর্যায়ে ভোট বিভিন্ন পক্ষে গেছে। যেটা আন্দাজ করা যায় এখানকার জনপ্রতিনিধিদের দিকে দেখলেই। কাহালু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াতের। পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগের। নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াতের। পৌরসভার মেয়র বিএনপির। আবার বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) জাসদের।  

২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে পরাজিত করে জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন জয়লাভ করেন। অবশ্য এর আগের টানা কয়েকবার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
 
বোঝাই যাচ্ছে, বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটারদের মত বদলেছে প্রার্থী দেখে। এবারের নির্বাচনেও ভোটাররা যদি প্রার্থী বিবেচনা করে ভোট দেন, তবে এলাকা ‘অধ্যুষিত’ বলে কোনো দল দাবি করে এলেও সেটি আর ধোপে টিকবে না।

কয়েকজন ভোটার বাংলানিউজকে বলেন, এই দুই উপজেলার রাজনীতিবিদদের মধ্যে সমঝোতা করে চলার গল্প প্রচলিত আছে। যে কারণে আসনটি বিএনপির দুর্গ হলেও এখানে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন আওয়ামী লীগ-জামায়াতের নেতারাও। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তথা তাদের জোট অংশ না নিয়ে প্রতিহতের ঘোষণা দেওয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসেন জাসদের প্রার্থীও।
 
এবারের নির্বাচনে জাসদের হয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য রেজাউল করিম তানসেন, বিএনপির মোশাররফ হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের ইদ্রিস আলী, তরিকত ফেডারেশনের কাজী এম এ কাশেম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আয়ুব আলী, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের জীবন রহমান লড়বেন। মাঠে থাকবেন আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমও।
 
ইতোমধ্যেই প্রার্থীরা প্রতীকও বরাদ্দ পেয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েছেন সবাই। বিএনপির মোশাররফ হোসেন রোববারই (৯ ডিসেম্বর) কাহালু উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় স্থানীয় জাপা নেতা আব্দুল হান্নানের নেতৃত্বে তার অনুগতরা বিএনপিতে যোগ দেন।    
 
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এবারের নির্বাচনে বিএনপির মোশাররফ হোসেন ও বর্তমান এমপি রেজাউল করিম তানসেনের মধ্যে মূল লড়াইটা হবে। কিন্তু বিগত দিনের অন্যান্য ভোটের হিসাব অনুযায়ী কাউকে বেশি এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না।

চা দোকানি ইব্রাহিম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, লোকমুখে শুনেছি এই আসন থেকে এবার হিরো আলমও নির্বাচনে লড়ছেন। আদালত নাকি তার পক্ষে আদেশ দিয়েছেন। তাই বিনোদনে জগতে ব্যাপক সাড়া জাগাতে পারলেও ভোটের মাঠে ভোটাররা তাকে কিভাবে গ্রহণ করবেন তা দেখতে ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৮
এমবিএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।