ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ভোট থেকে বিএনপির ছিটকে গেলেন যারা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮
ভোট থেকে বিএনপির ছিটকে গেলেন যারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ছবি: বাংলানিউজ গ্রাফিক্স

ঢাকা: ঋণ খেলাপিসহ বিভিন্ন কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে ছিটকে পড়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিএনপির কয়েকজন প্রার্থী।

সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ থেকে তাদের প্রার্থীতার ওপর স্থগিতাদেশ এবং অন্য প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশের ফলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

উপজেলা চেয়ারম্যানরা হচ্ছেন- ধামরাই উপজেলা চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন, নবাবগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক, আদমদিঘী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুহিত তালুকদার, শাহজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সরকার বাদল ও গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটন।

ঋণ খেলাপির অভিযোগে ২ জনের প্রার্থীতা স্থগিত হয়েছে। তারা হলেন- মানিকগঞ্জ-৩ আসনের আফরোজা খান রিতা ও চাঁদপুর-৪ আসনের আব্দুল হান্নান।

এছাড়া দলীয় প্রার্থী অধ্যাপক নজরুল ইসলামের রিটের প্রেক্ষিতে ধানের শীষ প্রতীক হারাচ্ছেন রাজশাহী-৫ আসনের নাদিম মোস্তফা। এ আসনে নজরুল ইসলামকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

তমিজ উদ্দিন
ধামরাই উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে তমিজ উদ্দিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণের আগেই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা তা বাতিলের পর তিনি আপিল করলে ইসি আপিল মঞ্জুর করে তাকে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করে।

পরে ইসির আদেশের বিরুদ্ধে রিট করেন ওই আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী বেনজীর আহমেদ। ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তমিজ উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন।

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে তমিজ উদ্দিনের আবেদনের পর ১২ ডিসেম্বর চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন। সোমবার আপিল বিভাগ চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ তুলে দেন। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকায় তিনি আর নির্বাচন করতে পারছেন না।

মুহিত ও সরকার বাদল
উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ না করায় বগুড়া-৩ আসনে আদমদিঘী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুহিত তালুকদার ও বগুড়া-৭ আসনে শাহজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার বাদল মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।

এরপর প্রার্থীতা ফিরে পেতে তারা হাইকোর্টে আবেদন করেন। ৯ ডিসেম্বর হাইকোর্ট পৃথক রিটের শুনানি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন। একইসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।  

সোমবার পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ চলমান রেখেছেন। ফলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।  

আশফাক
ঢাকা-১ আসনে নবাবগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাকের (ধানের শীষ) মনোনয়নপত্র বৈধ বলে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

ওই আসনে কুলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা বিকল্প ধারার জালাল উদ্দিনের করা রিট শুনানি নিয়ে সোমবার হাইকোর্ট এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার শামীম আহমেদ মেহেদী ও ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম।

আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ গৃহীত হওয়ার আগেই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যদিও নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়নপত্র বৈধ করেছিলো। নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন।

মোরশেদ মিলটন
বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটনের মনোনয়ন বৈধ বলে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর করা রিট আবেদনের শুনানি বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও সেলিনা আক্তার।

পরে সেলিনা আক্তার বলেন, ২৮ নভেম্বর ছিলো মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। ওই দিনই তিনি মনোনয়নপত্র দাখিলে (মিলটন) একটি পদত্যাগপত্র দেখান। অথচ এ পদত্যাগপত্র মন্ত্রণালয়ে গৃহীত হতে হবে। গৃহীত হওয়ার আগে মনোনয়ন দাখিল করায় তা বাতিল হয়।  

এর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিলে এসে ওই আসনে প্রার্থীতা ফিরে পান মোরশেদ মিলটন। আপিলে নির্বাচন কমিশনের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ডাব প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস আরা বেগম।

রিতা
মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী আফরোজা খান রিতার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে ইসি। ঋণ খেলাপির অভিযোগে ইসির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট করা হয়। হাইকোর্ট রিতার মনোনয়নপত্র স্থগিত করে দেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রিতা চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করলে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। সোমবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ ‘নো-অর্ডার’ বলে আদেশ দেন। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকে। এ কারণে রিতা প্রার্থীতা স্থগিতই থাকলো।

আব্দুল হান্নান
চাঁদপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল হান্নানের মনোনয়নপত্র বৈধ করায় ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট আবেদন করে সোনালী ব্যাংক। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার আব্দুল হান্নানের মনোনয়নপত্র স্থগিত করে রুল জারি করেন।

ফলে তিনি আর নির্বাচন করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

নাদিম মোস্তফা
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে নাদিম মোস্তফার পরিবর্তে অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

নজরুল ইসলামের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন বলে জানান আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী।

আইনজীবী মিনহাজুল হক জানান, নাদিম মোস্তফাকে রিটার্নিং অফিসারের দেওয়া ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ কেন বাতিল করা হবে না এ মর্মে রুল জারি করে তা স্থগিত করেন। একই সঙ্গে অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে ওই আসনেই ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলামই।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আশরাফ আলী ও মিনহাজুল হক চৌধুরী। নাদিম মোস্তফার পক্ষে ছিলেন আঞ্জুম আরা বেগম।

গত ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিনে ঋণ খেলাপসহ কয়েকটি কারণে নাদিম মোস্তফার মনোনয়ন বাতিল করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। ০৮ ডিসেম্বর আপিলে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থীতা ফিরে পান অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা। এরপর রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে বিএনপির এই সাবেক সংসদ সদস্যকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে বিএনপি দলীয় হাই কমান্ড।  

এর আগে, ২ ডিসেম্বর নজরুল ইসলাম চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। নাদিম মোস্তফার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় তার পরিবর্তে এই আসনে নজরুল ইসলামকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেছিলো বিএনপি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে আপিল করে নাদিম মোস্তফা রাজশাহী-৫ আসনে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ায় দলের পক্ষ থেকে নজরুল ইসলামকে বাতিল করে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এটি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের পরিপন্থী বলে হাইকোর্টে রিট করেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮
ইএস/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।