ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

সতিনকে জেতাতে ভোটের মাঠে অন্য দুই সতিন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২১
সতিনকে জেতাতে ভোটের মাঠে অন্য দুই সতিন

বগুড়া: গল্প, উপন্যাসে ‘সতিন’ মানেই খল চরিত্র, ঝগড়াটে বা খারাপ কিছু বোঝায়। কিন্তু বাস্তবে এর ব্যতিক্রমও আছে।

বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মাজেদা বেগম ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর মাজেদার জয়ের জন্য তার সতিনরা দিনরাত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

গতবারের পৌর নির্বাচনের কৌশল এবারও কাজে লাগিয়েছেন মাজেদা। চার সতিনের সংসারে তিনিসহ তিনজন এক হয়ে এবারও প্রচারণায় নেমেছেন। সঙ্গে আছেন তাদের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আব্দুস সামাদ মাস্টার। গত পৌর নির্বাচনে এ কৌশলে মাঠে নেমেই বিজয়ী হয়েছিলেন মাজেদা।

রোববার (২৪ জানুয়ারি) নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিবগঞ্জ পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা পাঁচ হাজার ৪৯৫ জন। তৃতীয় ধাপে আগামী ৩০ জানুয়ারি এ পৌরসভার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।  সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে মাজেদার প্রতিদ্বন্দ্বী আরও দুই জন রয়েছে।

এদিকে তিন সতিন একই সঙ্গে ভোটারের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়ায় বিষয়টি ভোটারদের মধ্যেও আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।  কয়েকজন ভোটার বলেছেন, বর্তমান সময়ে যখন সতিনদের মধ্যে মুখ দেখা-দেখি পর্যন্ত হয় না, তখন এক সতিনের জয়ের জন্য আরও দুই সতিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভোট চাওয়ার বিষয়টি একটি বিরল ঘটনা।

জানা যায়, আব্দুস সামাদের চার স্ত্রী। এর মধ্যে বড় স্ত্রী সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করার জন্য নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারছেন না। তবে এতে তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তিনি টাকা ও পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। মাজেদা বর্তমানে ওই সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন। গতবারেও একইভাবে প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের মন জয় করেছিলেন মাজেদা।

ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাজেদা শিবগঞ্জ পৌরসভার নারী আসনের দুই নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে ‘আনারস’ প্রতীক নিয়ে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদিন ভোরে তারা তিন সতিন মিনু বেগম, রেনু বেগম ও মাজেদার স্বামী আব্দুস সামাদকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। গভীর রাত পর্যন্ত জয়ের আশায় ওয়ার্ডের এ-বাড়ি থেকে ও-বাড়ি ক্লান্তিহীনভাবে ছুঁটে বেড়াচ্ছেন।

ভোটারা বলছেন, ‘সতিন মানেই যে খারাপ কিছু নয় তা আব্দুস সামাদের স্ত্রীরা প্রমাণ করেছেন। তাদের এ তিন সতিনের প্রচারণা ভোটারদের মধ্যে আলাদা একটা উৎসাহ নিয়ে এসেছে। মাজেদা বেগম এখন এ পৌরসভার আলোচিত প্রার্থী। ’

প্রার্থীর মেজো সতিন মিনু বেগম বলেন, ‘আমাদের আলাদা আলাদা হাঁড়ি। কিন্তু সবাই আপন বোনের মতো। শুধু ভোট নয়, সব সুখে-দুঃখে আমরা একে অন্যের পাশে দাঁড়ায়। ’

প্রার্থী মাজেদা বেগম বলেন, ‘সতিন মানেই মনে করা হয় শত্রু। কিন্তু এক্ষেত্রে আমি সৌভাগ্যবান। সতিনরা আমার কাছে বোনের মতো। অতি আপনজন। আমি নির্বাচিত হতে পারলে এলাকায় নারী নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবো। ’

মাজেদার স্বামী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমার স্ত্রীদের নিয়ে আমি খুশি। তারা সব সমস্যাকে মিলেমিশে মানিয়ে নিতে পারেন। আর তাদের এ মধুর সম্পর্কের কথা ভোটাররা জানতে পেরে সবাই অনেক খুশি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২১
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।