ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিদেশি সহযোগিতা নেবে না সরকার

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিদেশি সহযোগিতা নেবে না সরকার

ঢাকা: নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন এবং আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো প্রক্রিয়াতে বিদেশি সহযোগিতা, পরামর্শ বা হস্তক্ষেপের সুযোগ দেবে না সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে এবং সে সিদ্ধান্তে তারা অনড় থাকবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা ও নতুন দাবি সামনে আসার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সেই প্রেক্ষাপটে সরকারও কোনো আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বা পরামর্শ নেবে কি না সে প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আগামী নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। পাশাপাশি দলটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কথা বলছে।

এদিকে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনের কথা বলা হয়েছে। সম্প্রতি জাপা চেয়ারম্যান এবং সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, ইসি গঠনে দেশে আইন নেই। অথচ ইসি গঠনে সংবিধানে আইন প্রনয়নের কথা স্পষ্টভাবে বলা আছে। আইনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ইসি গঠন করা হলে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর হবে।

ঠিক এ সময়ই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ চাইলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবে তারা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‌‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো এ কথা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার যদি জাতিসংঘের সহযোগিতা চায় তাহলে আমরা দেবো।

সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, ইসি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা বা দেশের সহযোগিতা চাইবে না সরকার। পাশাপাশি এ কাজে সরকার কোনো আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপেরও সুযোগ দেবে না। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থানে থাকবে সরকার ও আওয়ামী লীগ। ইসি গঠন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠান বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়। এসব বিষয়ে বাইরের শক্তি সহযোগিতা বা হস্তক্ষেপের সুযোগ না পায় সে বিষয়ে আগে থেকেই সরকার সতর্ক ও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশি সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষক পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারের কোনো আপত্তি থাকবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশি সংস্থাগুলো পর্যবেক্ষক পাঠায়, সেটা তারা পাঠাবে, নির্বাচন সুষ্ঠ হচ্ছে কিনা দেখবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু কারও খবরদারি আমরা এ্যালাউ করবো না। স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ, নির্বাচিত সরকার। সেখানে তারা তদারকি, হস্তক্ষেপ করবে এটা আমরা করতে দেবো না।

বর্তমান ইসি গঠনের আগেও কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিলো। তখনও সরকার অনুমতি দেয়নি। বর্তমান ইসি গঠিত হয় ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন এই কমিশনের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি। বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন কমিশন গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে ইতোমধ্যে কমিশন গঠনের অনানুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বর্তমান একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। আর সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হবে ৬ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ি সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারই নির্বাচনের সময়ও দায়িত্বে থাকবে। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের পর গত দুইটি নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরকার দায়িত্ব পালন করেছে। আগামী নির্বাচনেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকাই দায়িত্বে থাকবে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ, ইসি স্বাধীন। স্বাধীন ইসির অধীনে অনেকগুলো নির্বাচন হয়েছে। কে অংশ নিলো, কে নিলো না সেটা বিষয় না। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে। যারা নির্বাচিত হয়েছে তারা দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করছে। নির্বাচনের স্টেক হোল্ডার রাজনৈতিক দল। প্রয়োজন হলে রাজনৈতিক দলের পরামর্শ নেওয়া হবে। কোনো বিদেশি সংস্থার পরামর্শের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১
এসকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।