ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ইসি নিয়োগ: রাষ্ট্রপতির ইচ্ছাই চূড়ান্ত

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২১
ইসি নিয়োগ: রাষ্ট্রপতির ইচ্ছাই চূড়ান্ত

ঢাকা: স্বাধীনতা পর ‘নির্বাচন কমিশন’ গঠনের জন্য কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়নি। রাষ্ট্রপতির আদেশেই নিয়োগ পেয়েছে ১২টি কমিশন, যদিও সংবিধানে বলা হয়েছে আইন অনুসারে তাদের নিয়োগ করা হবে।

আর আইন-বিধি না থাকায় এবারও রাষ্ট্রপতির আদেশেই নিয়োগ হবে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা নিয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে। সেখানে ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—“প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন। একাধিক নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া নির্বাচন কমিশন গঠিত হইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাহার সভাপতিরূপে কার্য করিবেন। এই সংবিধানের বিধানাবলি-সাপেক্ষে কোনো নির্বাচন কমিশনারের পদের মেয়াদ তাঁহার কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরকাল হইবে। ”

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সেনা সমর্থিত এক-এগার সরকারের সময়কার এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ইসি গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের একটি উদ্যোগ নিয়েছিল। এর আগে-পরে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে বিগত দুই মেয়াদ থেকে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হচ্ছে নতুন কমিশন। এ ক্ষেত্রে আইন না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই কোনো বিধিমালাও নেই। তাই এবারও রাষ্ট্রপতি যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই নিয়োগ হবে।

সার্চ কমিটি গঠন করে ইসি নিয়োগের বিষয়টি আসে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সময় থেকে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করেন তিনি। দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে তিনি পরবর্তীতে সার্চ কমিটি গঠন করেন। চার সদস্যের ওই কমিটিতে প্রধান ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সদস্য হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যানকে রাখা হয়েছিল। কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

২০১২ সালে গঠিত সার্চ কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতি পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেন ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে সে সময় নিয়োগ পান কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। এই কমিশনের মেয়াদ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে শেষ হয়।

আবারও নতুন কমিশন নিয়োগের প্রশ্ন সামনে এলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. আবদুল হামিদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপে বসেন। পূর্বের পদ্ধতি অনুসরণ করে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তিনি নিয়োগ দেন ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি নিয়োগ দেন নতুন কমিশন। এতে সিইসি হিসেবে নিয়োগ পান কেএম নূরুল হুদা।

সার্চ কমিটি দলগুলোর দেওয়ার নামের তালিকা, অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব/ মুখ্য সচিবদের নামের তালিকা, সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাঠানো অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের তালিকা এবং নিজেদের বিবেচনায় তৈরি তালিকা থেকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে। এদের মধ্যে দু’জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আট জনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সুপারিশ করা হয়। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি পাঁচজনকে নিয়ে গঠন করে নির্বাচন কমিশন।

ইসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন, আইন না থাকলেও সার্চ কমিটি একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে দলগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব নেওয়া উচিত নয়। কেননা, নির্বাচন কমিশন হবে নিরপেক্ষ। এ ক্ষেত্রে দলের বা কোনো একটি গ্রুপের কাছ থেকে তালিকা নিয়ে কাউকে সুপারিশ করলে, সেটা আর নিরপেক্ষ থাকে না। কেননা, যাকে সুপারিশ করা হচ্ছে তিনি কোনো না কোনো গ্রুপ থেকেই আসেন। তাই সার্চ কমিটির উচিত তাদের বিবেচনায় নিরপেক্ষ লোক খুঁজে নেওয়া।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, রাজনৈতিক ঐক্যের ভিত্তিতে নতুন কমিশন গঠন হওয়া উচিত। সেটা মহামান্য রাষ্ট্রপতি করতে পারেন। যেমন গতবার মহামান্য রাষ্ট্রপতি সব দলের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন। তবে সেটা রাষ্ট্রপতির বিষয়। আমাদের করণীয় কিছু নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০২১
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।