ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নির্বাচনী কন্ট্রোল রুমে পাল্টে গেল ভোটের ফল!

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২১
নির্বাচনী কন্ট্রোল রুমে পাল্টে গেল ভোটের ফল!

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বাঙালা ইউনিয়নের পশ্চিম সাতবাড়ীয় এবতেদায়ি মাদরাসা ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২৫৮৯।  

গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত তৃতীয় দফায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে এ কেন্দ্রটিতে ভোট পড়েছে ২২৫০।

বৈধ ভোটের সংখ্যা ১৮৯৪ ও বাতিল দেখানো হয়েছে ৩৫৬ ভোট। ভোট গণনা শেষে প্রিজাইডিং অফিসার ও পূর্ব দেলুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মাজেদ যে ফলাফল ঘোষণা করেন, তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু হানিফ মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ১২৮৫ ভোট এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী সোহেল রানা নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬৯ ভোট।  

অথচ রিটার্নিং অফিসার স্বাক্ষরিত পূর্ণাঙ্গ ফলাফলে ওই কেন্দ্রে মোটরসাইকেল প্রতীকে ১২৮৫ ভোটের স্থলে দেখানো হয়েছে ৫৪৪ ভোট এবং নৌকা প্রতীকে ৩৬৯ এর স্থলে ১১১০ ভোট দেখানো হয়েছে। সেখানে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ১৮৯৪ এর স্থলে দেখানো হয় ১৯৬৮ ও অবৈধ ৩৫৬ এর স্থলে ২৮২ দেখানো হয়েছে।  

ঠিক একইভাবে দক্ষিণ গাইলজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার স্বাক্ষরিত ফলাফলে দেখা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কেফায়েত উল্লাহর ঘোড়া প্রতীকে ১৭২৫ ও নৌকা প্রতীকে ৩০৯ ভোট পড়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত পূর্ণাঙ্গ ফলাফলে সম্পূর্ণ উল্টে গিয়ে নৌকা প্রতীকে ১৭২৫ এবং ঘোড়া প্রতীকে ৩০৯ ভোট দেখানো হয়েছে।  

আবার মালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে মোটরসাইকেল প্রতীকে ৯৩৩ ভোট, ঘোড়া প্রতীকে ৩৯১ ও নৌকা প্রতীকে পড়েছে ৪০৩ ভোট। রিটার্নিং কর্মকর্তার মূল ফলাফল শিটে মোটরসাইকেল প্রতীকে ২৬৩, ঘোড়া প্রতীকে ৯০ ও নৌকা প্রতীকে ১৩৬৯ ভোট দেখানো হয়েছে।  

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বাঙালা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী ফলাফল এভাবেই পাল্টে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবু হানিফের। ওই ফলাফল বাতিল ও ভোট পূণরায় গণনার দাবিতে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছেন তিনি।  

এছাড়াও ফলাফল বাতিল, গেজেট প্রকাশ বন্ধ, ভোট পূণঃগণনা ও ব্যালট পেপার যাচাই-বাছাইয়ের দাবি জানিয়ে  প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার, উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা (উদুনিয়া-বাঙালা) বরাবরও আবেদন করেছেন।  

নির্বাচনী কন্ট্রোল রুমে ভোটের ফলাফল সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলা হয়েছে দাবি করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবু হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, সবগুলো কেন্দ্রের ফলাফলে আমি ৪৩৩ ভোটে বিজয়ী হয়েছি। তিনটা কেন্দ্রের রেজাল্ট টেম্পারিং করা হয়েছে। দক্ষিণ গাইলজানি কেন্দ্রে ১৭২৫ ভোট পেয়েছে ঘোড়া আর ৩০৯ ভোট পেয়েছে নৌকা। এ ফলাফল সম্পূর্ণ উল্টে ফেলা হয়েছে। মালিপাড়া ও পশ্চিম সাতবাড়ীয় কেন্দ্রেও রেজাল্ট পাল্টে দেওয়া হয়েছে। আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর আবেদন করেছি। আদালতের দ্বারস্থও হয়েছি। গেজেট প্রকাশ বন্ধ রেখে ভোট পূণর্গণনা করে আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।  
 
এদিকে প্রিজাইডিং অফিসার স্বাক্ষরিত ফলাফলের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তার ফলাফলের গড়মিলের বিষয়ে জানতে চাইলে মালিপাড়া কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ও বড় পাঙ্গাসী সবুজ সংঘ কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. খলিলুর রহমান বলেন, কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফলে আমার স্বাক্ষর নেই।  

ফলাফল শিটে তার সিলমোহরযুক্ত স্বাক্ষর এলো কীভাবে, জানতে চাইলে তিনি ফোন কল কেটে দেন। পরে বার বার ফোন কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

পশ্চিম সাতবাড়ীয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ও পূর্ব দেলুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মাজেদ বলেন, আমার ওই কেন্দ্রে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
 
রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ ফলাফলের সঙ্গে গড়মিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে আমার সঙ্গে ইন্টারফেয়ার করবেন না। এসব বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।  

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন জানান, কন্ট্রোল রুমে ইউএনও, ডিজিএফআই, এনএসআই, র‌্যাব ও মিডিয়ার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। প্রিজাইডিং অফিসার সরাসরি আমার কাছে এসে বসে নিজে ক্যালকুলেট করে সব কিছু মিলিয়ে স্বাক্ষরিত কপি জমা দিয়ে চলে গেছেন। প্রিজাইডিং অফিসার স্বাক্ষরিত কপি আমাকে যেটা দেওয়া হয়েছে, ওইটা দেখে আমি রেজাল্ট শিট তৈরি করেছি। এর বাইরে-ভেতরে আর কী হয়েছে, সেটা আমার জানার বিষয়ও না এবং জানিও না। কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার রেজাল্ট কী দিয়েছেন, কী দেননি, ওটা কার স্বাক্ষর, সেটা আমি বলতে পারব না। যেহেতু বিষয়টা আদালতে গড়েছে, আদালতের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হোক।   

জেলা নির্বাচন অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, রোববার (৫ ডিসেম্বর) একটি লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। ২৮ নভেম্বর নির্বাচন হয়েছে। এখন এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। অভিযোগকারীকে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।  

তৃতীয় দফার ইউপি নির্বাচনে বাঙালা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. সোহেল রানাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নৌকা প্রতীকে তার ভোট দেখানো হয় ৯৭১৮। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবু হানিফের (মোটরসাইকেল প্রতীক) ভোট দেখানো হয়েছে ৫৭১৪ ভোট। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবু হানিফের দাবি, প্রকৃত ফলাফলে তিনি ৪৩৩ ভোটে জয়লাভ করেছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২১
এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।