ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

মুরাদের এমপি পদ বাতিল করতে যে নজির আছে

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২১
মুরাদের এমপি পদ বাতিল করতে যে নজির আছে

ঢাকা: জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের বিতর্কিত সংসদ সদস্য ও সদ্য পদত্যাগী তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছেন। আলোচনা হচ্ছে দলীয় পদ সর্বস্তর থেকে হারালে তার এমপি পদ যাবে কিনা।

কিংবা কে করবে সেই পদ বাতিল।

অনেকেই বলছেন সরাসরি স্পিকার তার পদটি শূন্য করে দিতে পারেন দলীয় পদ না থাকলে। কিন্তু সংবিধানে এমন কোনো বিধান নেই। আবার এমন কোনো নজিরও নেই। তবে সংসদ সদস্য পদ নিয়ে কোনো বিরোধ উত্থাপন হলে, তা শূন্য করে দেওয়ার নজির আছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)।

নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটিকে এই ক্ষমতা সংবিধানের ৬৬ (৪) অনুচ্ছেদে দেওয়া আছে। একই সঙ্গে সেখানে বলা হয়েছে—বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ইসির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

নজির বলছে—সংবিধানের অনুচ্ছেদটির বলে স্পিকার কোনো সংসদ সদস্যের সংসদ সদস্য পদ থাকা-না থাকা প্রশ্নে বিরোধ উত্থাপিত হলে, তা নিষ্পত্তির জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেবেন। সিইসির নেতৃত্বে কমিশন একটি শুনানির আয়োজন করবে। এতে বিরোধ উত্থাপনকারী এবং যার বিরুদ্ধে বিরোধ উত্থাপন করা হয়েছে, দুই পক্ষকেই ডাকা হবে। তারা নিজেদের আইনজীবীসহ শুনানিতে অংশ নিয়ে স্ব-স্ব বক্তব্য তুলে ধরবেন। সবকিছু পর্যালোচনা করে রায় দেবে ইসি।

ইসি সূত্র জানায়, ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো এমন বিষয়ে রায় দিয়েছিল সংস্থাটি। সে সময় বিএনপি থেকে নির্বাচিত কিশোরগঞ্জ-২ আসনের তৎকালীন এমপি মো. আখতারুজ্জামানকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর তার এমপি পদ শূন্য ঘোষণার জন্য স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে অনুরোধ করেছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। পরবর্তীতে সিইসিকে সিদ্ধান্ত দিতে বলেছিলেন স্পিকার। এরপর শুনানি করেই আখতারুজ্জামানের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করার রায় দিয়েছিল ইসি।

প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটেছিল ২০১৫ সালে। সে সময় টাঙ্গাইল-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও ডাক, টেলিযোগযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলের সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার আগে হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল মন্ত্রিত্ব থেকে।

সে সময় তার সংসদ সদস্য পদ বাতিলে দলটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিরোধ উত্থাপন করেন। তিনি সিইসি ও স্পিকারকে টাঙ্গাইল-৪ আসনটি শূন্য ঘোষণার জন্য ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান। স্পিকার সিইসিকে বিরোধটি নিষ্পত্তির জন্য চিঠি দেন।

পরবর্তীতে কমিশন দুই পক্ষকেই ডেকে শুনানি করে। তবে শুনানিতে অংশ নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগের ঘোষণা দেন। কয়েকদিন পর ইসির রায় ঘোষণার আগেই স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। পরবর্তীতে কমিশন রায়ে–লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করায় আসন শূন্য হওয়ার বিতর্ক নিষ্পত্তি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

সংসদ সদস্য (বিরোধ নিষ্পত্তি) আইন ১৯৮০ অনুযায়ী, স্পিকার কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য ঘোষণার কোনো বিতর্ক সম্পর্কিত কোনো বিবৃতি ইসিকে পাঠালে এর চৌদ্দ দিনের মধ্যে তা বিরোধ উপস্থাপনকারী ও যার বিরুদ্ধে বিরোধ উপস্থাপন হয়েছে, উভয়পক্ষকে জানাতে হয়। এবং তাদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা ইসিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দিতে হয়। এরপর ইসিকে দুই পক্ষের শুনানি করে রায় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে আইনে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, এমপি মুরাদের সংসদ সদস্য পদ শূন্য করতে হলে, প্রথমে তাকে দলের সর্বস্তরের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। পরবর্তীতে দলীয় পদ না থাকায় তিনি এমপি থাকার অযোগ্য মর্মে দল থেকে স্পিকারের কাছে বিরোধ উত্থাপন করতে হবে। স্পিকার বিষয়টি সিইসিকে জানাবেন। এরপর ইসি বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া হাতে নেবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের সরাসরি কিছু করার নেই। আমরা তো কেবল নির্বাচন করে দিই। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে দল থেকে। সেই অনুযায়ী, ব্যবস্থা নেবেন স্পিকার।

গত কয়েক মাস ধরে একের পর এক বক্তব্য দিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার পরিবার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নিজ দলের নেত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে নিজ দলের ভেতরেই ব্যাপক তিরস্কারের পাত্র হয়ে ওঠেন। এরপর নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে আপত্তিকর কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুরাদ হাসানকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর মঙ্গলবার (০৭ ডিসেম্বর) সকালে পদত্যাগ করলে বিকেলে তাকে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এমনকি দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে সুপারিশ করে জেলা আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ নিয়ে বলেছেন, আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেব। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদককে (জাহাঙ্গীর আলম) নিয়ে আমরা যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তার ক্ষেত্রেও একইভাবে সিদ্ধান্ত হবে। কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। তাই কার্যনির্বাহী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রী কার্যনির্বাহী কমিটির পরবর্তী বৈঠক কবে হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।

আগের নিউজের লিংক:
লতিফের এমপি পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত জানাতে সিইসিকে চিঠি
নিজ অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিতে আশরাফুল-লতিফকে চিঠি
আশরাফ-লতিফের শুনানি ২৩ আগস্ট
লতিফের পদত্যাগে আসন শূন্য নিষ্পত্তি

বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২১
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।