ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বছরের পর বছর যায়, নির্বাচন হয় না চুয়াডাঙ্গার ৭ ইউনিয়নে

জিসান আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২২
বছরের পর বছর যায়, নির্বাচন হয় না চুয়াডাঙ্গার ৭ ইউনিয়নে

চুয়াডাঙ্গা: সম্প্রতি কয়েক ধাপে চুয়াডাঙ্গার প্রায় সব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হলেও ৭টি ইউনিয়নে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে না এক দশকেরও বেশি সময়। ফলে বিগত ১০ থেকে ১১ বছর পরও এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি ৭ ইউনিয়নের লাখ লাখ ভোটার।

দীর্ঘদিন ধরে একই নেতৃত্বের কারণে ভাটা পড়েছে উন্নয়ন কাজে। ব্যহত হচ্ছে নাগরিক সব সুযোগ সুবিধা। কৌশলে ভোট আটকে রাখা নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে তীব্র ক্ষোভ। যদিও নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আইনি জটিলতায় আটকে আছে নির্বাচন। তাই মামলা নিষ্পত্তি হলেই এসব ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়ন পরিষদে সবশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালের ২১ জুন। টানা ১১ বছরে বারবার তফসিল ঘোষণার পরও স্থগিত হয়েছে ভোটগ্রহণ। উপ-নির্বাচন ও চেয়ারম্যানের মৃত্যুর কারণে দু’দফায় পাল্টেছে চেয়ারম্যানও। বর্তমানে প্যানেল চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তবুও ভোটের স্বাদ পাইনি এ ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

একই অবস্থা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র, মাখালডাঙ্গা, বেগমপুর, নেহালপুর। দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা, হাউলী ও জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নে। নানা কারণে এ ৭ ইউনিয়নে নির্বাচন হয় না বছরের পর বছর।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নে সবশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালের ৫ জুন, বেগমপুর ইউনিয়নের ভোট হয় ২০১১ সালের ৫ জুন, মাখালডাঙ্গা ও নেহালপুর ইউনিয়ন নবগঠিত হওয়ায় সেখানেও হয় না নির্বাচন। দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন এবং হাউলী ইউনিয়নে সবশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১১ সালের ২১ জুন। আর জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নে ভোট হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৮ মে।  

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে এসব ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় ভাটা পড়েছে এলাকার উন্নয়ন কাজে। ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সব সুযোগ সুবিধা। এ নিয়ে ক্ষোভ জন্মেছে ভোটারদের মধ্যে।

হাউলী ইউনিয়নের ভোটার রফিকুল শেখ বলেন, একই চেয়ারম্যান-মেম্বর থাকার কারণে তাদের কাছ থেকে সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। পরিষদে গিয়েও সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। যদি নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হয় তাহলে তাদের কাছ থেকে আচরণ পাওয়া যেত না।

শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের ভোটার মেহের আফরোজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভোট না হওয়ায় এলাকায় উন্নয়ন কাজে জোয়ার নেই। আগের সব প্রকল্পেই কাজ হচ্ছে। নতুন কোনো উন্নয়ন কাজের প্রকল্প পাওয়া যায়নি।

হিজলগাড়ি এলাকার নতুন ভোটার রনি আলম বলেন, সীমানা ভাগাভাগির কারণে ভোট থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমরা। ভোটার হয়ে এ পর্যন্ত একবারও ইউনিয়ন ভোট দিতে পারিনি। ইউনিয়ন ভাগাভাগি করে লাভ কী হলো? সেই তো ভোট বঞ্চিত হতে হলো।

হাউলী ইউপির তারিনিপুর গ্রামের মাজেদুল ইসলাম জানান, কৌশলে মামলা ঠুকে নির্বাচন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তাদেরকে। বছরের পর বছর একক নেতৃত্বে অবমূল্যায়িত হচ্ছেন ভোটররা। তারা এত মামলা বোঝেন না, তারা ৫ বছর অন্তর ভোটের আয়োজন চান।

এদিকে জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, সীমানা নির্ধারণ ও আইনি জটিলতা নিয়ে থমকে আছে এসব ইউনিয়নের ভোট। মামলা নিষ্পত্তি হলে তবেই ভোটের আগ্রহ তাদের। তবে মামলার ব্যাপারে দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছেন চেয়ারম্যানরা।

শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, মামলার কারণে ভোট আটকে আছে। এখানে পরিষদের কোনো দায় নেই। মামলা নিষ্পত্তি হলেই ভোটে অংশ নিতে প্রস্তুত হয়ে আছি।

একই কথা বললেন হাউলী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দীন। তিনি জানান, সীমানা জটিলতা নিয়ে দুই গ্রামের দুইজন হাইকোর্টে মামলা করেছেন। সে মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হবে না।

তবে কৌশলে মামলা করানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, এর আগের চেয়ারম্যান থাকাকালীন মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বাদী তৎকালীন চেয়ারম্যান মিন্টু শাহের একজন অনুসারী।
 
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহমেদ জানান, মামলা জনিত কারণে বেশীরভাগ ইউয়িন ভোটের বাইরে রয়েছে। সেসব মামলা নিষ্পত্তি হলেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই ৭ ইউনিয়নে অন্তত দেড়লাখ ভোটার রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।