ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

কুসিক নির্বাচন: মেয়র-কাউন্সিলরের ব্যয়সীমা নির্ধারণ

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২২
কুসিক নির্বাচন: মেয়র-কাউন্সিলরের ব্যয়সীমা নির্ধারণ

ঢাকা: আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ব্যয় ৭৫ হাজার টাকা এবং নির্বাচনী ব্যয় হবে ১৫ লাখ টাকা।

আর কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটার সংখ্যার অনুপাতে সর্বোচ্চ ব্যয় করতে পারবেন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান বিষয়টি প্রার্থীদের অবহিত করতে ইতোমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়সীমা:

নির্বাচন বিধিমালায় বলা হয়েছে- মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ব্যক্তিগত খরচ বাবদ, অনধিক পাঁচ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পঁচাত্তর হাজার টাকা, পাঁচ লাখ এক হতে ১০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা, ১০ লাখ এক থেকে ২০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২০ লাখ এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় বাবদ অনধিক পাঁচ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা, পাঁচ লাখ এক থেকে ১০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা, ১০ লাখ এক থেকে ২০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং ২০ লাখ এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০জন। অর্থাৎ মেয়র পদের প্রার্থীরা ব্যক্তিগত খাতে ৭৫ হাজার টাকা এবং নির্বাচন খাতে ১৫ লাখ টাকা, মোট ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

বিধিমালায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর ব্যয়:

কাউন্সিলর প্রার্থী ব্যক্তিগত খরচ বাবদ, অনধিক ১৫ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা, ১৫ হাজার এক থেকে ৩০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা, ৩০ হাজার এক থেকে ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার এবং ৫০ হাজার এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় বাবদ, অনধিক ১৫ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা, ১৫ হাজার এক থেকে ৩০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা, ৩০ হাজার এক থেকে ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা এবং ৫০ হাজার এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে, ১৬ হাজার ৪৭৪ জন। আর সবচেয়ে কম ভোটার রয়েছে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে, ৩ হাজার ৮৯৪ জন।

অর্থাৎ কাউন্সিলর প্রার্থীরা ওয়ার্ড ভেদে ব্যক্তিগত খাতে সর্বনিম্ন ১৫ হাজার ও সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা এবং নির্বাচন খাতে সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা ও সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

ভোটের প্রচারপত্র বা প্রকাশনার মাধ্যমে অথবা অন্য কোনভাবে ভোটারদের কাছে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভিমত, লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য উপস্থাপনের জন্য ব্যয়িত অর্থসহ তাহার নির্বাচন পরিচালনার জন্য দান, ঋণ, অগ্রিম জমা বা অন্য কোনোভাবে পরিশোধিত অর্থ ‘নির্বাচনী ব্যয়’ বলে গণ্য হবে।

আত্মীয়-স্বজনের (স্বামী বা স্ত্রী, মাতা, পিতা, পুত্র, কন্যা, ভ্রাতা বা ভগনি) কাছ থেকে ধার, কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার স্বেচ্ছা প্রদত্ত দান গ্রহণ করাকে ব্যয়ের উৎস দেখানো যাবে। এক্ষেত্রে কোনো উৎস থেকে কোনো অর্থ প্রাপ্ত হলে অর্থ প্রাপ্তির পর তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনকে জানাবে হবে।

এদিকে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনী এজেন্ট ব্যতীত অন্য কারো মাধ্যমে নির্বাচন বাবদ কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে পুরো ব্যয় পরিচালনা করতে হবে তফসিলি ব্যাংকের নির্দিষ্ট একটি অ্যাকাউন্ট থেকে।

এছাড়া নির্বাচনে পর ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ব্যয়ের রিটার্ন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে।

এ নির্বাচনে মেয়র পদে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এরা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুইবারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। অর্থাৎ মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন পাঁচ জন প্রার্থী।

এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ জনের মতো প্রার্থী থাকছেন ভোটের মাঠে। সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের ক্ষেত্রে ৫ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দু'জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

এ সিটিতে ভোটগ্রহণ হবে সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি ভোটকক্ষে। আগামী ১৫ জুন এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে প্রার্থী প্রচার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন, যা চলবে আগামী ১৩ জুন মধ্যরাত ১২ টা পর্যন্ত।

২০১৭ সালের ৩০ মার্চ সর্বশেষ কুসিক নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই বছর ১৭ মে। এক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ করার শেষ সময় ছিল চলতি বছরের ১৬ মে। কিন্তু বিগত কমিশন বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসায় আর তফসিল দেয়নি। ফলে অতি অল্প সময়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এই সিটি পরিচালনায় দায়িত্ব দিতে হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে। নির্বাচনের পর নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যন্ত তিনি করপোরেশন পরিচালনা করবেন।

২০১৭ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু দ্বিতীয়বারের মতো এ সিটিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কুসিকের প্রথম নির্বাচনে ২০১২ সালে তিনিও জয়লাভ করেছিলেন। প্রথমবার বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় সাক্কু স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরেরবার বিএনপির টিকিটে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েও জয়লাভ করেন। এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে এবং আজীবন দল থেকে বহিষ্কার করায় সাক্কু হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

দু’টি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করে সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২২
ইইউডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।