ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নির্বাচনে কূটকৌশল করা হলে টলারেট করা হবে না: সিইসি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২২
নির্বাচনে কূটকৌশল করা হলে টলারেট করা হবে না: সিইসি

ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনে কূটকৌশল কেউ করতে পারবেন না। সেটা টলারেট করা হবে না।

আমার এবং আমার সহকর্মীদের অতটুকু সাহস রয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপের সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটারদের সচেতন করতে হবে। আমার ভোট আমি দেবো, এমন উদ্ভাবনী বাক্য দিয়ে যদি ভোটারদের সচেতন করতে পারি, পর্যবেক্ষকদেরও ভোটারদের সচেতন করার ভূমিকা রাখতে হবে।  

তিনি বলেন, নৈতিকতা যে শাসন, নৈতিক দিক থেকেও আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। সংস্কৃতি, কৃষ্টি কিন্তু গঠিত হয়, নৈতিক মূল্যবোধ দিয়ে। এই জিনিসটা আমাদের চর্চা করতে হবে। আমাদের নৈতিক মূল্যবোধগুলো কেবল নির্বাচন বিষয়ক নয়, সব বিষয়ে সততা, অসততা, বিনয়; মূল্যবোধ যেটা ক্ষয়ে গেছে সেটা পুনরুদ্ধার করতে হবে।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আছে। অনেকেই হাফ হলেও ব্যবহার করতে বলেছেন। আমরা এটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। ইসির পক্ষ থেকে বলছে আমাদের জন্য খুব সুবিধাজনক একটা জিনিস। সহিংসতার কথা যেটা বলা হচ্ছে, সেই রূপটা ধারণ করে ভোটের দিন ভোটের সময়। কেন্দ্রে গিয়ে যে সহিংসতা হয়, সেটা নিয়ন্ত্রণ অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। ইভিএম মেশিন যেটা আমি নিজেও পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখেছি, এটি ব্যবহারের সমর্থন যদি পাই, সন্দেহ দূরীভূত করতে পারি, তাহলে এটার একটা যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ ব্যবহার করে নির্বাচনকে অহিংস করে তুলতে পারি। সহিংসতা থেকে উত্তরণ হয়ে কিছুটা অহিংস করতে পারি। ওখানে আমি গিয়ে ১০টা ভোট দিতে পারবো না কোনোভাবেই। ছিনতাই করে ওটা দিতে পারবো না। কারণ আইডেন্টিফাই হতে হবে, বায়োমেন্ট্রিক দিতে হবে। বায়োমেন্ট্রিক দিতে না পারলেও ওখানে একটা উপায় বিধিমালায় আছে। সবকিছুরই একটা নেতিবাচক, ইতিবাচক দিক আছে।

তিনি বলেন, ব্ল্যাক আউটের কথা বলা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট নির্বাচনের সময় কেন করা হয়, কি কারণে করা হয় এটা হয়ে থাকতে পারে ওই সময়ে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করবো যে নির্বাচনকে অস্বচ্ছ করার জন্যই যদি ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করা হয়, আমরা নির্বাচনটাকেই ব্ল্যাক আউট করে দিতে পারি। হয়তো আমাদের এমন পদক্ষেপ নিতে হতে পারে, আমরা কিন্তু নির্বাচনটাকেই ব্ল্যাক আউট করে দেবো। কারণ আমরা কিন্তু স্পষ্ট করে বলতে চাচ্ছি নির্বাচন স্বচ্ছ হতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো কূটকৌশল কেউ করতে পারবেন না। যদি নির্বাচনকে আড়াল করার জন্য কেউ ব্ল্যাক আউট করেন, তবে আমাদের তরফ থেকে স্পষ্ট বক্তব্য থাকবে, সেটা টলারেট করা হবে না। আমার এবং আমার সহকর্মীদের অতটুকু সাহস রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন গত মার্চ মাস থেকে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংলাপ করছে। গত ১৩ ও ২২ মার্চ এবং ৬ ও ১৮ এপ্রিল যথাক্রমে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজ এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী/প্রধান বার্তা সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিকদের সংলাপ করেছে ইসি। নিবন্ধিত ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে ৩২টিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। যার মধ্যে ২০ জন পর্যবেক্ষক সংলাপে অংশ নিয়েছেন।  

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ভোটার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন না। ভোটার ছলনার শিকার হয়। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতন করার পরামর্শ দেন।

মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ভুইয়া বলেন, ইভিএমের ভেতরে জ্বীনের উপস্থিতি আছে। সেই জ্বীন দূর করতে হবে৷ 

মুভ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাইফুল হক বলেন, বিগত কয়েক নির্বাচনে ভোট না দিতে পারার কারণে নতুন ভোটারদের মধ্যে অনীহা ও ভীতি জন্মেছে। তাই নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহী করতে দেশব্যাপী ভোটার উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।  

লুৎফুর রহমান ভুইয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা রাজিয়া বলেন, ভোটের আগের দিনে যদি ভোট হয়ে যায়, তাহলে তো জনগণ আস্থা পাবে না৷ এক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০০ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরামর্শ দেন তিনি।  

ইলেকশন স্পেশালিস্ট আব্দুল আলীম বলেন, ভোটে সব দলের অংশগ্রহণ না থাকলে বিদেশি অনেক পর্যবেক্ষক সংস্থা ভোট পর্যবেক্ষণে আসে না। প্রার্থীদের সামনে ইভিএম কাস্টমাইজেশন দেখানোর উদ্যোগ বেশ ভালো। এটার সিকিউরিটি অ্যানালাইসিস করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এছাড়া ইভিএমের সোর্স কোড উন্মুক্ত করতে হবে। এছাড়া ইভিএমে আস্থা ফেরাতে হ্যাকিং কম্পিটিশন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে।  

ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, আপনাদের কাজটা প্রচণ্ড কঠিন৷ ভোটের মাঠে সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে ভোট অংশগ্রহণমূলক হয় না। সহিংসতা কমাতে পারলে ভোটে নারীর অংশগ্রহণ বাড়তে পারে।  

জানিপপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, পর্যবেক্ষকদের মান বাড়াতে হবে। তাদের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।  

সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২২
ইইউডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।