ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

কুসিক ভোট: ১০৫ কেন্দ্রে ৮৫০ সিসি ক্যামেরা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২২
কুসিক ভোট: ১০৫ কেন্দ্রে ৮৫০ সিসি ক্যামেরা

ঢাকা: কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে পুরো ভোটকেন্দ্র থাকছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে লাগানো হচ্ছে ৮৫০টি ক্যামেরা।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ নির্বাচনে মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি ভোটকক্ষের প্রতিটিতে বসানো হচ্ছে এই যন্ত্র। এতে মোট ৮৫০টি সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করবে ভোটারসহ সবার গতিবিধি। ভোটকেন্দ্রের প্রবেশ পথ ও ভোটকক্ষের প্রবেশ পথে থাকবে সিসি ক্যামেরা।

জানা গেছে, ২০১০ সালে এক-এগার সময়কার এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে মোতাবেক তখনকার বড় বড় নির্বাচনগুলোতে সিসি টিভি ব্যবহারের পাশাপাশি অনলাইনেও ভোটগ্রহণ মনিটরিং করা হয়। ২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনসহ বেশকিছু নির্বাচনে এতে ব্যাপক সাফল্য আসে। সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে পরবর্তীতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশনও সীমিত পরিসরে অনলাইনে ভোটকেন্দ্র মনিটরিং করেন।

অনলাইনে ভোটকেন্দ্র মনিটরিংয়ের জন্য সে সময় ব্যবহার করা হয় জনপ্রিয় প্ল্যাটফরম ‘স্কাইপি’। এতে সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রে ল্যাপটপের মাধ্যমে ভিডিও ক্যামেরা সংযোগ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুরো ভোটকক্ষ ক্যাপচার করা হতো। আর তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের একটি টিম তৎপর থাকতো সার্বক্ষণিক। পুরো বিষয়টি দেখভাল করা হতো ইসির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাধ্যমে।

সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেই বিষয়টিকে ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে পাশ কাটিয়ে চলেছে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি নির্বাচনের পর আর সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়নি।

প্রায় চার বছর পর ফের এই যন্ত্রে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিল কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।

বুধবার (১৫ জুন) কুসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তাঁরা হলেন—বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুইবারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। অর্থাৎ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে পাঁচ প্রার্থী।

এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ জন প্রার্থী আছে ভোটের মাঠে। নির্বাচনে ৫ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

এ সিটিতে ভোটগ্রহণ হবে সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে। ভোটগ্রহণ চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০জন। এদের মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ভোটার এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। এছাড়া হিজড়া ভোটার দুজন।

ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬ হাজার ৪৭৪ জন। আর সবচেয়ে কম ভোটার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ হাজার ৮৯৪ জন।

২০১৭ সালের ৩০ মার্চ সর্বশেষ কুসিক নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই বছর ১৭ মে। ভোটগ্রহণ করার শেষ সময় ছিল চলতি বছরের ১৬ মে। কিন্তু বিগত কমিশন বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসায় আর তফসিল দেয়নি। ফলে অতি অল্প সময়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এই সিটি পরিচালনায় দায়িত্ব দিতে হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে। নির্বাচনের পর নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যন্ত তিনি করপোরেশন পরিচালনা করবেন।

২০১৭ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু দ্বিতীয়বারের মতো এ সিটিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কুসিকের প্রথম নির্বাচনেও ২০১২ সালে তিনি জয়লাভ করেছিলেন। প্রথমবার বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় সাক্কু স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরের বার বিএনপির টিকিটে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েও জয়লাভ করেন। এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে এবং আজীবন দল থেকে বহিষ্কার করায় সাক্কু হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করে সরকার।

১৫ জুন ছয়টি পৌরসভা নির্বাচনও অনিষ্ঠিত হবে। এসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সিসি টিভি আওতাধীন।

এ বিষয়ে ইসির আইডিইএ-২ প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক (কমিউনিকেশন) স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম শাওন জানিয়েছেন, কুমিল্লা সিটি ও ছয়টি পৌর নির্বাচনে আমরা এক হাজার ৪৪০টি সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করছি। কুসিক নির্বাচনে থাকছে ৮৫০টি ক্যামেরা। প্রতিটি কেন্দ্রের প্রবেশ পথে ও ভোটকক্ষের প্রবেশ পথে ক্যামেরা থাকবে। তবে ভোটকক্ষের গোপন বুথ অর্থাৎ যেখানে ভোটাররা ভোট দেন সেই বুথ সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২২
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।