ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৯ সফর ১৪৪৭

বিনোদন

আমার মনে হয় আম্মাজানের জন্যই মান্নার জন্ম: শবনম

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৫৩, আগস্ট ১৩, ২০২৫
আমার মনে হয় আম্মাজানের জন্যই মান্নার জন্ম: শবনম

‘মান্না একটা ভালো আটিস্ট ছিল। লোকও খুব ভালো ছিল।

অনেক মিস করি মান্নাকে। যদিও একটা সিনেমাতেই কাজ করেছি। তবুও আমার মনে হয় আম্মাজানের জন্যই ওর জন্ম। এত সুন্দর কাজ করেছিল। ’ প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্নাকে নিয়ে কথাগুলো বলেছেন চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী শবনম।

১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘আম্মাজান’ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। সিনেমাটিতে মান্নার মায়ের ভূমিকায় অন্যবদ্য অভিনয় করেছিলেন এই অভিনেত্রী।  

সিনেমাটিতে মা-ছেলের ভূমিকায় শবনম ও মান্নার অভিনয় আজও দর্শকহৃদয়ে গেঁথে আছে। তবে এই সিনেমার অভিনয়ের আগে নাকি তাদের পরিচয় ছিল না। বহু বছর পর একটি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী।  

কীভাবে মান্নার সঙ্গে পরিচয়, সে বিষয়ে তিনি বলেন, যেদিন আমি প্রথম ‘আম্মাজান’ সিনেমায় শুটিংয়ে যাই তখনও মান্নার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়নি। সেটে গিয়ে যখন আমি রেডি হয়ে গেছি হঠাৎ মান্না এসে পা জড়িয়ে ধরে। ভয় পেয়ে গিয়ে আমি বলি ‘কে আপনি কে?’ তখন হায়াৎ ভাই (কাজী হায়াত) বলল, ‘এটাই হিরো আমাদের মান্না। ওই আপনার ছেলের রোল করতেছে। ’

সেই সময়ের অনুভূতি জানিয়ে শবনম বলেন, তখন মনে হয়েছিল এটা আমারই ছেলে, যেভাবে পা জড়িয়ে ধরে আম্মাজান বলেছে। তখন মান্না বলল, ‘আজকে থেকে আপনি আমার আম্মাজান। আপনাকে আমি আম্মাজান বলেই ডাকব। ’ তখন বললাম, ‘ডাক বাবা’।

যোগ করে এই অভিনেত্রী বলেন, এই ছোট অনুভূতি বলে বোঝানো যায় না। এগুলো ফিল করতে হয়, নিজের বুঝতে হয়।  

মাত্র একটি সিনেমাতেই মান্নার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন শবনম। তবুও অনেক মিস করেন এই নায়ককে। আর তার চলে যাওয়া খুবই দুঃখের বলে জানান এই অভিনেত্রী। তার কথায়, এই যে জলদি মান্না চলে গেল, এটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুব খারাপ। অলমোস্ট এই ইন্ডাস্ট্রি শেষই হয়ে গিয়েছিল। এত সুন্দর একটা আটিস্ট, এত জলদি চলে গেল খুবই দুঃখের ব্যাপার ছিল।  

অভিনেত্রী শবনমকে ‘আম্মাজান’ সিনেমার পর আর কোনো সিনেমায় অভিনয়ে দেখা যায়নি বিগত ২৬ বছরে। এটা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়ই বটে। তবে এটাই সত্যি যে, দীর্ঘ এই সময়ে তার কাছে এমন কোনো মৌলিক গল্পের সিনেমাতে অভিনয়ের প্রস্তাব যায়নি যে, তাতে তিনি মুগ্ধ হয়ে অভিনয় করবেন- এমনটাই জানিয়েছিলেন গত বছরের শেষের দিকে।  

একটা সময় ছিল যখন শবনমকে বাংলাদেশের দর্শক ‘হারানো দিন’, ‘চান্দা’, ‘তালাশ’, ‘নাচের পুতুল’-এর নায়িকা হিসেবেই বেশি চিনতেন। তারপর অবশ্য তিনি বাংলাদেশের ‘সন্ধি’, ‘শর্ত’, ‘সহধর্মিণী’, ‘যোগাযোগ’, ‘জুলি’,‘ বশিরা’, ‘দিল’সহ আরও অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তবে ‘আম্মাজান’ সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে আজ অবধি দর্শক তাকে ‘আম্মাজান’ হিসেবেই খুব সহজে চেনেন।

দীর্ঘদিন তিনি পাকিস্তানের সিনেমাতে অভিনয় করেছেন বলে অনেকেই মনে করতেন তিনি পাকিস্তানের নায়িকা। কিন্তু এই ধারণাও ভুল। শবনমের আসল নাম ঝরনা বসাক। চলচ্চিত্রে আসার অনেক আগে থেকেই নাচের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নাচ শিখতেন।

এহতেশাম পরিচালিত ‘এদেশ তোমার আমার’ সিনেমাতে তখন একটি গানে বেশ কয়েকজন নাচের মেয়ের দরকার হয়ে পড়ে। তখন বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকেই কয়েকজনকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই দলে শবনমও ছিলেন। এরপর ‘রাজধানীর বুকে’ সিনেমাতে তিনি একটি একক নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন। তার পরপরই এহতেশাম তাকে আর রহমানকে নিয়ে শুরু করেন ‘হারানো দিন’ সিনেমাটি। এরপর একে একে অনেক সিনেমাতে অভিনয় করেন শবনম।

দেশের বাইরে পাকিস্তানের সিনেমায় তার অবদান এতটাই যে সেখানকার মহানায়িকা বলা হয়ে থাকে শবনমকে। তার অভিনয়ের গুণে দেশটির চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার নিগার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ১৩ বার।  

এনএটি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।