দেশের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার পপি (ববিতা) ছয় মাসের জন্য গেল জুলাইয়ে কানাডা গেছেন। একমাত্র পুত্র কানাডা প্রবাসী অনিককে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশটির বিভিন্ন জায়গায়।
কয়েক দিন আগে হ্যালিফ্যাক্সে গিয়েছিলেন মা-ছেলে। সেখানে পাঁচ দিন ছিলেন তারা। ববিতা জানিয়েছেন, সেখানে সুন্দর সময় কেটেছে তাদের।
অভিনেত্রীর কথায়, অনিকের কাছে হ্যালিফ্যাক্সের গল্প শুনেছি। আমার কাছে অচেনা ছিল। এবার গিয়ে রীতিমতো মুগ্ধ হয়েছি। পাঁচ দিন কীভাবে পার হয়ে গেল, টেরই পাইনি।
তিনি আরও বলেন, হ্যালিফ্যাক্সের অনেক ঐতিহাসিক জায়গায় গিয়েছি। সামুদ্রিক খাবার বেশ মজার ছিল। শহরটি আয়তনে ছোট হলেও প্রাণবন্ত এবং আশপাশে রয়েছে দারুণ সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
ববিতা জানালেন, হ্যালিফ্যাক্স কানাডার নোভা স্কশিয়া প্রদেশের রাজধানী। এটি শুধু ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও সমুদ্রের অসাধারণ মেলবন্ধনের জন্য বিখ্যাত।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতা এখন আর অভিনয়ে নিয়মিত নন। ১০ বছর আগে তার অভিনীত সিনেমা মুক্তি পায়। এরপর কয়েকটি সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও গল্প-পরিচালক ও সার্বিক আয়োজন তাঁকে টানেনি বলে জানান।
১৯৬৮ সালে নির্মাতা জহির রায়হানের ‘সংসার’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিষেক হয় ববিতার। এখানে তিনি রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। পরে ফরিদা আক্তার পপি থেকে ‘ববিতা’ হয় ওঠেন জহির রায়হানের উর্দু সিনেমা ‘জ্বলতে সুরুজ কি নিচে’র মাধ্যমে।
নায়িকা হিসাবে ববিতার প্রথম সিনেমা ‘শেষ পর্যন্ত’। এটি মুক্তি পায় ১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্ট, যেদিন ববিতার মা মারা যান। এতে তার নায়ক ছিলেন রাজ্জাক।
আলোচিত সিনেমা ‘টাকা আনা পাই’ ববিতাকে চলচ্চিত্রের শক্ত আসন দিলেও তার জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সিনেমা বলা হয় সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’কে। এ সিনেমায় অভিনয় করে ববিতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দারুণ প্রশংসা অর্জন করেন। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পতাকা যে নায়িকা প্রথম উড়িয়েছিলেন তিনি ববিতা।
১৯৭৩ সালে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার ‘গোল্ডেন বিয়ার’ এবং এর পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে ‘গোল্ডেন হিউগো’ জিতে নেয় সিনেমাটি। পাশাপাশি ভারতের রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকসহ আরও বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে ‘অশনি সংকেত’।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ২৫০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেন এ অভিনেত্রী। স্বীকৃতিস্বরূপ একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
ববিতা অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে- ‘অশনি সংকেত’, ‘নিশান’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’, ‘মায়ের জন্য পাগল’, ‘টাকা আনা পাই’, ‘স্বরলিপি’, ‘তিনকন্যা’, ‘শ্বশুরবাড়ি’, ‘মিস লঙ্কা’, ‘জীবন সংসার’, ‘লাইলি মজনু’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘লাঠিয়াল’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি, ইত্যাদি।
এনএটি