ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

‘আয়নাবাজি’র তৃষার গল্প শুনি

জান্নাতুল মাওয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
‘আয়নাবাজি’র তৃষার গল্প শুনি মডেল: ইফাত তৃষা ছবি: বাপ্পি চৌধুরী বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

‘আয়নাবাজি’ ছবির প্রধান নায়িকা নাবিলা হলেও নজর কেড়েছেন ইফফাত তৃষা। তিনি এতে অভিনয় করেছেন তানিশা চরিত্রে।

সে ধর্ষিতা নারী। সমাজে ধর্ষিতা নারীর জীবন-সংগ্রাম তানিশা চরিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সংলাপের চেয়ে তাকে মুখের অভিব্যক্তিই কাজে লাগাতে হয়েছে বেশি। মেয়েটির চোখেমুখে রাগ, অভিমান, ঘৃণা, সুখ-দুঃখ সবকিছুর ছাপ স্পষ্ট। দারুণ অভিনয়ের জন্য তিনি এখন কুড়াচ্ছেন বাহবা।
 
গত ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তির পর থেকে ২৫ দিন পেরিয়েও প্রেক্ষাগৃহগুলোতে ‘আয়নাবাজি’ দেখতে দর্শকের ভিড় লক্ষণীয়। টিকিট পেতেও তাদেরকে ঝরাতে হচ্ছে ঘাম। এমন সাফল্যে তৃষা উচ্ছ্বসিত। তিনিও টিকিট পেতে হিমশিম খেয়েছেন। অবশেষে বন্ধুরা টিকিট কেটে তাকে চমকে দিয়েছে।
 
প্রথম ছবিতেই প্রশংসা কুড়ানো তৃষা এলেন বাংলানিউজ কার্যালয়ে। এরপর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশে পড়ন্ত বিকেলে কাশফুলের ছায়ায় লাল রঙা গাউনে উদ্ভাসিত হলেন আলোকচিত্রীর সামনে। কাশফুলের চাদরে ঢাকা চারপাশের সাদা ও সবুজ প্রকৃতিতে লাল রঙে তিনি যেন হয়ে উঠলেন লাল পরী!
 
ছবি তোলা শেষে মেলে দিলেন বিনোদন অঙ্গনে আসার শুরুর গল্প। মা-বাবার আদরের কন্যা ও বড় ভাইয়ের আদুরে বোন তৃষা। অনেকে ছোটবেলায় ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলেও এই মেয়েটি টেলিভিশন জগত নিয়ে ভাবতেন। সাজগোজ করতেও ভালো লাগতো। বেড়ে ওঠার সঙ্গে বিনোদন অঙ্গনের প্রতি তার আকর্ষণ বাড়তে থাকে।
 
অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০১২ সালে তৃষা নাম লেখান ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতায়। কিন্তু প্রথম পর্বের বাছাইয়ের পর দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই শরীরে বাসা বাঁধে অসুখ। তবে দমে যাননি তিনি। অডিশন ঠিকই দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ হলো না। এই অতৃপ্তি তাকে ভুলিয়ে দিয়েছে ‘আয়নাবাজি’র অডিশন।
 
অমিতাভ রেজা চৌধুরীর পরিচালনায় রূপালি পর্দায় অভিষেক হলো তৃষার। এজন্য নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করেন তিনি। তার আগে বিজ্ঞাপন ও নাটকে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। একদিন তাকে ফোন করে জানানো হয়, ‘আয়নাবাজি’র একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের জন্য নতুন মুখ দরকার। আগ্রহ থাকলে অবশ্যই অডিশনের জন্য যেতে হবে। ভয়ে ভয়ে তিনি গিয়ে দেখেন আরও অনেকেই আছে। ভয় থাকলেও স্বপ্নটাও ছিলো। তাই মন জয় করার মতো অডিশন দিয়ে চলে আসার আড়াই মাস পর আবার তার কাছে ফোন এলো। তখনই জানতে পারেন তানিশা চরিত্রের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।
 
অডিশনে কিন্তু অমিতাভ রেজার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হয়নি তৃষার। ‘আয়নাবাজি’র শুটিংয়ের প্রথম দিন জনপ্রিয় এই নির্মাতার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। পরিচয়ের পর পরিচালক জানতে চাইলেন, ‘তুমি কি চরিত্রটি বুঝেছো?’ তৃষার মুখ থেকে হ্যাঁ শোনার পর তিনি বলেন, ‘তাহলে এবার দেখাও। ভয় না পেয়ে সাবলীলভাবে নিজের চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করো। ’


 
‘লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন’ শব্দের মাঝে মনোবল নিয়ে তৃষা শুরু করলেন তার বড়পর্দার যাত্রা। তানিশা চরিত্রটির উপস্থিতি স্বল্প হলেও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এর আগে নিজেকে বহুবার ছোটপর্দায় দেখেছি। তবে বড়পর্দায় দেখার ইচ্ছা সব অভিনয়শিল্পীরই থাকে। আমারও স্বপ্ন ছিলো চলচ্চিত্রে কাজ করার। সেই স্বপ্নটা পূরণ হলো অমিতাভ রেজার হাত ধরে। অল্প সময়ে এমন সুযোগ পাবো ভাবিনি। এখন থেকে নিজেকে সুঅভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এটাই আমার চ্যালেঞ্জ। ভালো গল্পের ছবিতে ছোট চরিত্র হলেও কাজ করতে আমি প্রস্তুত। গ্ল্যামারাস নয়, চরিত্রনির্ভর অভিনেত্রী হতে চাই। ’
 
২০১৩ সালে হাসান মোর্শেদের ‘হাটা বাবা রিটার্ন’ নাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয়ের আঙিনায় পা রাখেন তৃষা। এতে নায়িকার বান্ধবীর চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। এরপর থেকে নিয়মিত অভিনয় করে চলছেন। মডেল হয়েছেন কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য- ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী’, ‘উজালা পেইন্টস’, ‘মিস্টার নুডলস’, ‘গ্রামীণফোন’ ইত্যাদি।
 
গত ২ অক্টোবর থেকে এনটিভিতে প্রচারিত হচ্ছে তৃষার ধারাবাহিক নাটক ‘সানফ্লাওয়ার’। এতে তারিনজাহানের ছোট বোন নিশির চরিত্রে আছেন তিনি। তার কথায়, ‘এটা আমার জন্য সৌভাগ্যের যে, তারিন আপুর মতো গুণী অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি। ’
 
সহশিল্পী হিসেবে চিত্রনায়ক রিয়াজকেও পেয়েছেন তৃষা। তাদেরকে দেখা গেছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক টেলিছবি‘বিজয়গাঁথা’য়। এতে কাজ করার দিনগুলো সবসময় মনে পড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গুণী সহশিল্পীদের সঙ্গে অভিনয় করলে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে নিজেকেও সেভাবে উপস্থাপন করতে হয়। চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে দর্শকদের আরও ভালো ভালো কাজ উপহার দেওয়ার আশা রাখি। ’
 
ইফফাত তৃষা এখন ব্যস্ত কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকের কাজ নিয়ে। তিনি নিয়মিত অভিনয় করছেন আল হাজেনের ‘অলসপুর’, ‘লড়াই’, শামীম জামানের ‘ঝামেলা আনলিমিটেড’ এবং এশিয়ান টিভির ‘তুই কে আমার’ ধারাবাহিক নাটকে। তার অভিনীত উল্লেখ্যযোগ্য ধারাবাহিকের তালিকায় আছে ‘ঝালমুড়ি’, ‘কুয়াশার ফুল’, ‘অপূর্বা’, ‘কালো মকমল’ ইত্যাদি।
 
তৃষার অবসর সময় কাটে বিভিন্ন ছবি দেখে। ঢাকা কমার্স কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শেষ বর্ষের এই ছাত্রীর সামনে ফাইনাল পরীক্ষা, তাই এখন পড়ার টেবিলেও অনেকটা সময় থাকতে হচ্ছে তাকে। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগোনোর পথটা তার জন্য দুর্গম হলেও ধৈর্য হারাননি তিনি। ফলও পাচ্ছেন। নতুন প্রজন্মের মডেল-অভিনেত্রীদের তালিকায় তার নাম ধীরে ধীরে চলে আসছে সামনের সারিতে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
জেএমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।