ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

‘কলকাতার সঙ্গে বাংলাদেশের সংগীতে আদান-প্রদান বাড়াতে হবে’

সুবল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭
‘কলকাতার সঙ্গে বাংলাদেশের সংগীতে আদান-প্রদান বাড়াতে হবে’ সোমঋতা মল্লিক

চট্টগ্রাম: ‘নজরুলের গানে যে বহুমাত্রিকতা, তা অন্য কোথাও নেই। তার গানের যে মূলকথা সেই বিষয়টি অনুধাবন করে চর্চা চালিয়ে যাচ্ছি। যদিও ভারত ও বাংলাদেশে সুর আর কথায় পার্থক্য দেখা যায়। এজন্য নজরুলের গানগুলো আরও যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা উচিত। ঢাকার নজরুল ইনস্টিটিউট ছাড়া বর্তমানে আর কোথাও নজরুল গীতি নিয়ে কাজ করতে খুব একটা দেখা যায় না। নজরুলের গানের চর্চা আরও বাড়াতে হবে। কলকাতার সঙ্গে বাংলাদেশের আদান-প্রদান বাড়াতে হবে। ’

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) একান্ত আলাপচারিতায় কলকাতা ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক ও স্বনামধন্য নজরুল সংগীত শিল্পী সোমঋতা মল্লিক বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।

শিল্পী সোমঋতা মল্লিক বলেন, কলকাতায় আগে খুব কম শিল্পী নজরুল গীতি গাইতো।

তবে আগের চেয়ে বর্তমানে অনেকটা বেড়েছে। নজরুলের গানের অনেক বৈচিত্র্য। তার সৃষ্টিতে নানা ঘরনার গান পাওয়া যায়। রাগমিশ্রিত থাকায় অনেকের কাছে নজরুলের গান কঠিন মনে হয়। তা আসলে নয়। সংগীতাঙ্গনে ক্লাসিক্যাল চর্চা ও একাগ্রতার মাধ্যমে সব কিছুই সম্ভব। ক্লাসিক্যাল চর্চা শিল্পীকে তরান্বিত করে এবং গান গাওয়ার পূর্ণতা দেয়। কাজী নজরুল ইসলাম তার রচিত গানে ক্লাসিক্যালকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

ক্ল্যাসিক্যালের পাশাপাশি তিনি লোক আঙ্গিকের গানও করেছেন। যেখানে গ্রাম বাংলার মাটি ও মানুষের চিন্তা চেতনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাগমিশ্রিত করে তা সুর দিয়েছেন। যা অন্য গানে পাওয়া দুষ্কর। নিজস্ব সুরের মূর্ছনায় তিনি গানগুলো সাজিয়েছেন। যদিও নজরুলের গানকে নির্দিষ্ট সুরের বাইরে গিয়ে অনেক শিল্পী নিজ আঙ্গিকে গেয়ে বেড়াচ্ছেন। যা নজরুল গীতির সাথে অসামঞ্জস্য।

নজরুলের গান নিয়ে খুব একটা কাজ হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার জানামতে ঢাকার নজরুল ইনস্টিটিউট ছাড়া আর কোথাও নজরুল গীতি নিয়ে কাজ করতে খুব একটা দেখা যায় না। সংগীতাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করতে এ বিষয়ে আমাদের সকলের এগিয়ে আসা উচিত। নজরুলের অনবদ্য সৃষ্টি ধরে রাখতে হলে, তার রচিত সকল গীতিকাব্য ও রচনাকে যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা জরুরি। এক্ষেত্রে শিল্পী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।

ঢাকার নজরুল ইনস্টিটিউটের সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক। নজরুলের গানের টানে সেখানে আমি বহুবার গিয়েছি। নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্য ধন্য শিল্পীদের গাওয়া ৫০টির অধিক সিডি সংগ্রহ করেছি এবং নজরুলের বহু বই নিয়ে এসেছি। যা আমার নজরুলগীতি চর্চাকে আরও বেগবান করতে অনুপ্রাণিত করছে।

তিনি আরও বলেন, সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের উদ্যোগে কলকাতায় বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা ৩ থেকে ৪ দিনব্যাপী নজরুল মেলার আয়োজন করছি। যেখানে বাংলাদেশের অনেক গুণী শিল্পীরা আসেন। বাংলাদেশের নজরুল চর্চা আমাকে মুগ্ধ করে। নজরুলকে নিয়ে বাংলাদেশ অনেক কাজ করেছে। ঢাকার নজরুল ইনস্টিটিউট এর জ্বলন্ত উদাহরণ।

সোমঋতা মল্লিক ইতোমধ্যে ৬টি অ্যালবাম করেছেন। এর মধ্যে- তবু ভালবাসি (২০১০), ঠাম্মা, তোমার সঙ্গে (২০১২), বিরহ মধুর হলো আজি (২০১৩), মাটির কাছে ও বুলবুল কাঁদে গজল গানে (২০১৪) ও রাঙ্গামাটির পথে (২০১৭)। যা কলকাতার বিহান মিউজিক, কুয়েস্ট ওয়ার্ল্ড মিউজিক, কজমিক হারমোনি থেকে রিলিজ হয়ে ইতোমধ্যে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করার সুবাদে সোমঋতা মাত্র আড়াই বছর বয়স থেকে আজ অবধি সংগীত চর্চা করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি কলকাতার ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে তিনি সংগীত পরিবেশন করে সকলের প্রিয়ভাজন হয়েছেন। সংগীতাঙ্গনে প্রিয়ভাজন হওয়ার পেছনে মা (সুরূপা মল্লিক), বাবা (সমর কুমার মল্লিক) ও ছোট বোনের (সোমদত্তা মল্লিক) কাছে তিনি ঋনী থাকার বিষয়টি জানিয়েছেন।

নজরুল সংগীত শিল্পী মায়ের হাতেই সোমঋতার হাতেখড়ি। পরবর্তীতে কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্য, অপরাজিতা ঘোষ, শুভঙ্কর ভাস্করসহ আরও বেশ কয়েকজন গুণী সংগীতজ্ঞের কাছে তিনি তালিম নিয়েছেন। সংগীতই সোমঋতার চলার পরমব্রত, এ প্রত্যয় সামনে রেখে আমৃত্যু সংগীত চর্চা করে যেতে চান তিনি। পাশাপাশি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে আগামীর জন্য কিছু কাজ করে যেতে চান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭

এসবি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।