ব়্যাকেট হাতে পৃথিবীর যে-প্রান্তেই থাকুন না কেন সানিয়া, একাকিত্ব অনুভব করেন না৷ ‘অড্স’ তাঁর চলার পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে না, এমন খোলামেলা কথা তিনি বলেছিলেন আত্মজীবনীতে।
বলিউড তারকা পর্দায় যতই সাহসী হোন, হোন দুষ্টের দমনে নিয়োজিতপ্রাণ, বাস্তবে তিনি তা নন৷ জনসমক্ষে নিজেই এই কথা স্বীকার করেছিলেন সালমন খান, টেনিস-সুন্দরী সানিয়া মির্জার আত্মজীবনী ‘এস এগেনস্ট অড্স’-এর প্রকাশনা উৎসবে এসে।
সেই বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ অনুষ্ঠানে সালমন খান জানিয়েছিলেন, তিনি কখনো আত্মজীবনী লিখবেন না৷ কারণ, ‘আমি যদি কলম ধরি তা হলে অনেককে ঘিরে অনেক পুরনো ক্ষত প্রকাশ হয়ে পড়বে৷ আমি কাউকে বিব্রত করতে চাই না৷ আমার জীবনকাহিনী তাই শেষ পর্যন্ত আমার সঙ্গে কবরেই শুয়ে থাকবে৷’
সানিয়ার আত্মজীবনী ‘এস এগেইনস্ট অডস’-এ কী আছে? আছে সানিয়া মির্জার ভারতের সর্বকালের সেরা নারী টেনিস-তারকা হয়ে ওঠার কথা৷ আন্তর্জাতিক সার্কিটে সাফল্য তাঁর পেছনে দৌড়েছে ছায়ার মতো৷ বিতর্কও অবশ্য পিছু ছাড়েনি৷ চলার পথে পড়তে হয়েছে নানা সমস্যার সামনে৷ টেনিসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, পক্ষপাতিত্ব, বিভিন্ন হুমকি, অযাচিত অনুশাসন৷ এছাড়া, খেলোয়াড়দের স্বাভাবিক চোট-আঘাত তো আছেই৷ চলার পথে সব অড্-ই সানিয়া তাঁর জোরালো ফোরহ্যান্ডে উড়িয়ে দিয়েছেন৷ যেখানে মনে হয়েছে, সত্যিটা তুলে ধরেছেন অকপটে৷
জীবনের সব থেকে বড় হৃদয়ঘটিত ঘটনাটি আত্মজীবনীতে সানিয়া উল্লেখ করেছেন বেশ বিস্তারিতভাবে৷ রাখঢাক করেননি৷ লিখেছেন, ‘টেনিস আমার প্যাশন৷ কিন্তু আমিও একজন মেয়ে৷ আমিও ভাবতাম, একদিন টেনিস ছাড়ব৷ বিয়ে করব, মা হব৷ আমাকে ঘিরে আমার মা-বাবা, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবরাও নিশ্চয় এইরকমই ভাবতেন৷ কিন্তু বড় হতে-হতে চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে অনেক ফাঁক থাকে৷ আমার বন্ধুদের প্রায় সবারই বিয়ে হয়ে গিয়েছে৷ কেউ-কেউ মা’ও হয়ে গিয়েছে৷ আমাকেও এ নিয়ে ভাবতে হবে৷”
কিন্তু কাকে মন দেবেন টেনিস-সুন্দরী?
কলেজের সহপাঠী সোহরাব মির্জার সঙ্গে তাঁর একটু মন দেওয়া-নেওয়ার পর্ব শুরু হয়েছিল৷ ঘটনাচক্রে সোহরাব আবার সানিয়ার বাবার বন্ধুর ছেলে৷ এমনিতেই দীর্ঘ দিনের জান-পহ্চান৷ টেনিস-ব্যস্ততায় নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ না-হলেও সম্পর্কটা ছিলই৷ তিনিই হঠাৎ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতে শুরু করলেন৷ সানিয়া তখন তাঁর জীবনের সব থেকে কঠিন সময় কাটাচ্ছেন৷ কবজির চোটে টেনিস কোর্টের বাইরে চলে গিয়েছেন বেশ কয়েক দিন৷ সদ্য অপারেশন হয়েছে৷ হাত দিয়ে কিছুই করতে পারেন না৷ খাওয়া, চুল বাঁধা–কিছুই না৷ সেই কঠিন সময়ে সোহরাব বেশ কিছু দিন সঙ্গ দিয়েছিলেন তাঁকে৷ বাড়িতে আসা-যাওয়া ছিল৷ এইরকম মেলামেশার সুযোগ আগে হয়নি৷ কিন্তু একটা সময় দু’জনেই বুঝতে পারেন, তাঁদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের লক্ষ্মণরেখায় আটকে গিয়েছে৷ ফলে সোহরাব আর প্রেমিক হয়ে উঠতে পারলেন না, ‘ভাল বন্ধু’ হয়েই থেকে গেলেন৷
তারপর বিয়ে এবং অন্যান্য বিষয়ে টেনিস মাঠ ও মাঠের বাইরে আলোচিত-সমালোচিত এই তারকা। ১৫ নভেম্বর ১৯৮৬ সালে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি মুম্বাইতে। বসবাস করেন হায়দ্রাবাদ। এই পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় ও গ্ল্যামার গার্ল ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এক দশক ধরে ভারতীয় টেনিস অঙ্গনে এক নম্বর অবস্থান করা সর্বোচ্চ রেকর্ডধারী ভারতীয় খেলোয়াড়। পরবর্তীতে একক প্রতিযোগিতায় থেকে তার অবসর গ্রহণের পর অঙ্কিতা রায়না শীর্ষ স্থান দখল করেন।
ক্রীড়া সাংবাদিক ইমরান মির্জা এবং নাসিমার ঘরে তার জন্ম। তিনি ভারতের সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক গুলাম আহমেদ এবং পাকিস্তানের আসিফ ইকবাল এর আত্মীয়।
৩০ পেরুনো সানিয়া জীবনের শুরুটাতেই বিভিন্নভাবে শীর্ষ স্পর্শ করেছেন। বাকি বছরগুলো তিনি কি করবেন বা তাকে ঘিরে কি হয়, সেটাও কমবেশি সবার মনে আসে সানিয়ার নাম উঠলেই। এই হলো সানিয়া মির্জা, আলোচনা-সমালোচনা, যার জীবনকে ছুঁবেই। এজন্যই তিনি নিজের আত্মজীবনীর নাম দিয়েছেন, এস এগেইনস্ট অড্স’।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, নেভম্বর ১৫, ২০১৭
এমপি/জেডএম