তারপরের গল্প সব দারুণভাবে বদলে যাওয়ার। অভিনেত্রী পরিচয়ের অপর্ণা সেনের খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার হয়ে ওঠার।
এই চলচ্চিত্র বানিয়েই বাজিমাত করেন অপর্ণা। অভিষেকে সিনেমার জন্যই জিতে নেন পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চতুর্থ দিনে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন অপর্ণা। এর ফাঁকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান এ নির্মাতার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।
উৎসব সম্পর্কে ‘পরমা’ নির্মাতা বলেন, ‘বিশ্বের অনেক বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবে আমি গিয়েছি, কিন্তু এই উৎসবে এসে যে উষ্ণতা আমি পেয়েছি, তেমনটি আর কোথাও পাইনি। উৎসবে আমি আমার পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘সোনাটা’ নিয়ে এসেছি প্রদর্শনের জন্য। উৎসব পরিচালকদের প্রজেকশনের দিকটা আরেকটু খেয়াল করা উচিত। প্রত্যেকটা চলচ্চিত্রই তো একজন পরিচালকের কাছে সন্তানতুল্য; সেক্ষেত্রে তিনি নিশ্চয়ই চাইবেন তার ছবি প্রদর্শনের সময় যেন সাউন্ড, ভিডিও কোয়ালিটি ঠিক থাকে। ’‘সোনাটা’ চলচ্চিত্রে নারীবাদী বিষয়বস্তুর বিষয়ে নির্মাতা অর্পণা বলেন, ‘আমি মনে করি মানব সমাজের একটি অংশ নারী সমাজ। তাই আমার কাছে নারীবাদ মানবতাবাদেরই অংশ মনে হয়। ‘সোনাটা’র তিনটি নারী চরিত্র রয়েছে। আর এই তিনজনই ওয়ার্কার। এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে, নারীবাদ হচ্ছে মানবতার একটা অংশ। আর এই অর্ধেক অংশ অবদমিত হলে পুরো সমাজ এবং রাষ্ট্রই অবদমিত থাকবে। ’
নারী হিসেবে চলচ্চিত্র নির্মাণে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’ নির্মাতা জানান, ‘নারী নির্মাতা হিসেবে নয়, বরং ছবির গল্পের বিষয়বস্তু না বোঝার কারণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। আমার ছবি যত মানুষের কাছে পৌঁছানো দরকার, তত মানুষের কাছে পৌঁছেনি, এটাই হচ্ছে বড় কষ্টের। '
অপর্ণার সঙ্গে কথা হয় দুই বাংলার চলচ্চিত্রের উন্নয়ন প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের ভাষা যেহেতু এক, সেজন্য দু’দেশের চলচ্চিত্রের আদান-প্রদান আরও বেশি হওয়া উচিত। ’
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিনিময়ের বিষয়ে অপর্ণা সেন বলেন, ‘ভারত একটি রাষ্ট্র আর বাংলাদেশও একটি রাষ্ট্র, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ হচ্ছে ভারতের একটি রাজ্য। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের ছবি বিনিময় হয়, রাজ্যের সঙ্গে রাষ্ট্রের নয়। এই জটিলতার কারণেই সহযোগিতাটা ঠিকভাবে হচ্ছে না। তবে আমি চাই পশ্চিমবঙ্গের ছবির সঙ্গে বাংলাদেশের ছবির বিনিময় হোক। কারণ, ভাষা ও সংস্কৃতির মিলের কারণে দুই বাংলার ছবি বিনিময় অনেকটাই যুক্তিসঙ্গত। ’
‘গুন্ডে’সহ ভারতের বেশ কয়েকটি তামিল ও হিন্দিভাষী ছবিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখের বিষয়ে এ অভিনেত্রী ও নির্মাতা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে (তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী) ইন্দিরা গান্ধীর বিশাল ভূমিকা ছিলো। সেই কারণেই হয়তো এটা উল্লেখ করা হয়েছে। তখন তো বাংলাদেশ ছিলো না, ছিলো ভারত আর পাকিস্তান। বৃহত্তর ভারতবর্ষের ছবিতে সেটা দেখানো যেতেই পারে। তবে আমি কিন্তু আমার ‘গয়নার বাক্স’তে তেমন কিছু দেখাইনি। আর যেসব ছবিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, সেসব ছবিগুলো আমি দেখিইনি। সুতরাং এসব বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। ’
সিনেমার ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে ১৯৮১, ১৯৮৪, ১৯৯৫, ২০০০, ২০০১ ও ২০০৫ সালে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অপর্ণা সেন বলেন, ‘সিনেমা এখন নেটেও চলছে। সেলফোনেও এখন ছবি তৈরি হচ্ছে। ওয়েবেও এখন অনেকে ছোট ছোট ছবি ছাড়ছে। এসব থাকবেই। নেট দুনিয়াতে ছবি চলবেই। আর নেট থেকে অনেকে ইনকামও করছে। এটা দোষের কিছু না। তবে সিনেপ্লেক্স আর ব্লকবাস্টারের আবেদন চিরন্তন। ’
বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
এইচএমএস/এইচএ/