ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

‘সুস্থ হওয়ার আগে আর অভিনয় করতে পারবো না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৮
‘সুস্থ হওয়ার আগে আর অভিনয় করতে পারবো না’ অভিনেতা প্রবীর মিত্র

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পোগোজ স্কুলের ছাত্র খ্যাতিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্র। অষ্টম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় স্কুলটির শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রথম অভিনয় করার সুযোগ পান। এরপর জড়িয়ে পড়েন মঞ্চ নাটকের সঙ্গে। সেই থেকে নিয়মিত নিজের প্রতিভা দর্শকদের সামনে মেলে ধরতে থাকেন তিনি। হঠাৎ একদিন সুযোগ পেয়ে যান বড় পর্দায়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’খ্যাত এই অভিনেতাকে। চলচ্চিত্রে তার প্রায় অর্ধশত বছরের ক্যারিয়ার। স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। কিন্তু এখন লাইট-ক্যামেরার ঝলমলে দুনিয়ায় একদমই হাজির হতে পারেন না প্রবীর মিত্র। বেশ কয়েকমাস ধরে অসুস্থ হয়ে ঘরবন্দি কিংবদন্তি এই অভিনেতা। হাঁটুর আর্থ্রাইটিস রোগে ভুগছেন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলেন জে আই মোহসান। ছবি তুলেছেন রাজীন চৌধুরী

বাংলানিউজ: আপনার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?
প্রবীর মিত্র: শরীর ভালো নেই। তিন মাস ধরে আমার দুই হাঁটুতে প্রচণ্ড ব্যথা।

যার জন্য স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারি না। খুব সমস্যা হয়। পায়ের একটি স্টেপের জায়গায় তিনটি স্টেপ দিয়ে হাঁটতে হয়। এ কারণে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে পারি না। বাইরেও যেতে পারি না। ঘরেই বন্দি হয়ে আছি। এ ধরনের রোগ পুরোপুরি ভালো হয় না। যতদিন জীবিত থাকবো, এভাবেই বাঁচতে হবে।

বাংলানিউজ: অভিনয় করার জন্য এখনো নির্মাতাদের ডাক পান?
প্রবীর মিত্র: মাঝেমধ্যে ডাক আসে। যখন আমার অসুস্থতার কথা বলি তখন তারা পিছিয়ে যান।  

বাংলানিউজ: শেষ কবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন?
প্রবীর মিত্র: চলতি বছরের শুরুতে এসডি রুবেলের ‘বৃদ্ধাশ্রম’ নামে একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলাম। এরপর আর কোনো ছবিতে কাজ করতে পারিনি। এই ছবিরও আর খবর জানি না।

বাংলানিউজ: চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কেউ দেখতে আসেন?
প্রবীর মিত্র: তেমন একটা কেউ দেখতে আসেন না। আমাকে দেখার সময় হয়তো কারও কাছে নেই। যদি কখনো কেউ আমার বাসার সামনে দিয়ে যায়, তখন হয়তো এমনি দেখা করে যান। প্ল্যান করে আমাকে কেউ দেখতে আসেন না। আসলে না আসাটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে আমার দুঃখ বা কোনো আক্ষেপ নেই। এটিই পরিস্থিতি ও বাস্তবতা। আমিও কাউকে দেখতে যাইনি। তাহলে অন্যের উপরে কীভাবে রাগ করবো? তবে মাঝেমধ্যে কেউ কেউ ফোন করে খবর নেন। তাও হাতে গোনা কয়েকজন।

বাংলানিউজ: সুস্থ হয়ে আবারও অভিনয় ফেরার ইচ্ছে আছে?
প্রবীর মিত্র: ইচ্ছে অবশ্যই আছে। মরার আগ পর্যন্ত অভিনয় করার ইচ্ছেটা থাকবে। সেই ইচ্ছে আর পূরণ হবে কিনা জানি না। সবই তো ভবিতব্য। উপরওয়ালার ইচ্ছেতেই সব হয়। তিনি কি লিখে রেখেছেন সেটা তিনি নিজেই ভালো জানেন। তাই তা নিয়ে এখন আর চিন্তা করে লাভ নেই। তবে সুস্থ হওয়ার আগে আর অভিনয় করতে পারবো না।  

বাংলানিউজ: এতো বছরের ক্যারিয়ারে কোনো কিছু অপ্রাপ্তি আছে?
প্রবীর মিত্র: অনেককিছুই প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি আছে। তবে সেগুলো বলতে চাই না। যা পেয়েছি তা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট, যা পাইনি তা নিয়ে আক্ষেপ নেই।

বাংলানিউজ: অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান আপনার স্কুলের বন্ধু। তার সঙ্গে এখন যোগাযোগ হয়?
প্রবীর মিত্র: ওর সঙ্গে অনেকদিন যোগাযোগ হয় না। ও নিজেও অসুস্থ, কানে কম শোনে। আর হয়তো দেখা করার সময় পায় না।  

বাংলানিউজ: চলচ্চিত্রের প্রতি কোনো আক্ষেপ আছে?
প্রবীর মিত্র: কোনো আক্ষেপ নেই। আমি যা নই, তার চেয়ে বেশি আমি চলচ্চিত্র থেকে পেয়েছি। এই চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি ছিলাম একজন বিএসসি পাস সাধারণ ছেলে। কে চিনতো আমাকে? এখন কোটি কোটি মানুষ আমাকে চেনেন। সবই সম্ভব হয়েছে চলচ্চিত্রের কারণে। চলচ্চিত্র আমাকে সব দিয়েছে।

বাংলানিউজ: দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আপনি ৩০০’র বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে কোন ছবিটি এখনও আপনার মনে দাগ কেটে আছে?
প্রবীর মিত্র: এমন অনেকগুলো ছবি আছে। তবে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘জয় পরাজয়’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘প্রতিহিংসা’ ও ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ চলচ্চিত্রগুলোর কথা এখনো মনে পড়ে।

বাংলানিউজ: আপনার ব্যাপারে কেউ কখনো কোনো অভিযোগ করতেন?
প্রবীর মিত্র: আমার বিষয় কেউ কখনো একটি অভিযোগ করতে পারেননি। কেউ বলতে পারবেন না তার সঙ্গে কখনো আমি খারাপ ব্যবহার করেছি। সেটা প্রডিউসার হোক অথবা প্রোডাকশন বয়। আমি নিজে বিশ্বাস করি, আমি একজন ভালো মানুষ। এবং আমি সব সময় ভালো মানুষের সন্ধানে থাকি।

বাংলানিউজ: আপনার দৃষ্টিতে ভালো মানুষের সংজ্ঞা কী?
প্রবীর মিত্র: তিনিই ভালো মানুষ যিনি তার কাজটি সৎভাবে করেন। কথা ও কাজে পুরোপুরি মিল থাকবে। কারও সঙ্গে কখনো কথার বরখেলাপ করবেন না।  

বাংলানিউজ: চলচ্চিত্রের আগে আপনি দীর্ঘদিন মঞ্চে কাজ করেছেন। কোথায় অভিনয় করাটা বেশি মিস করেন, মঞ্চ না চলচ্চিত্রে?
প্রবীর মিত্র: অভিনয় করাটাকেই মিস করি। সেটা মঞ্চে হোক, টিভিতে হোক অথবা চলচ্চিত্রে। আমি অভিনয়ের মানুষ। স্থান যেটাই হোক অভিনয় করার স্বাদ নিতে পারলেই তৃপ্ত হই।  

বাংলানিউজ: এইচ আকবরের ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে আপনি চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। কীভাবে ছবিটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন? 
প্রবীর মিত্র: আকবর সাহেবের সঙ্গে আমার অনেকদিনের সখ্যতা ছিল। একসঙ্গে আমরা মঞ্চে অভিনয় করতাম। একদিন ‘জলছবি’ ছবির শুটিং দেখতে গিয়েছিলাম। ডাক্তারের চরিত্রের নির্ধারিত একজন শিল্পী অনুপস্থিত ছিলেন। তখন আমাকে আকবর সাহেব বললেন, এই চরিত্রটিতে অভিনয় করেন। তখন আমি বেশ অবাক হয়ে বললাম, ভাই আমার কাছে তো ডাক্তারের পোশাক নেই। তখন তিনি পোশাক ব্যবস্থা করে দিলেন ও আমাকে দিয়ে অভিনয় করালেন।  

বাংলানিউজ: ক্যারিয়ারের শুরুতে ‘চাবুক’ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে পর্দায় উপস্থিত হয়েছিলেন। সে সময়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রবীর মিত্র: ১৯৬৮ সালে আমি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করি। একই বছর ‘চাবুক’ ছবিতে নায়ক হওয়ার সুযোগ পাই। তখন অন্যরকম এক অনুভূতি ছিল। অল্পতেই এতো বড় একটি সুযোগ পাবো সেটি কখনও ভাবিনি। ‘চাবুক’র প্রডিউসার ছিলেন চিত্ত বর্ধন। ইলতুত মিশ ও শেখ নজরুল যৌথভাবে ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন। তারা আমাকে চেয়েছিলেন বলে কাজ করতে পেরেছি। ছবিটিতে আমার নায়িকা ছিলেন কবরী।  

বাংলানিউজ: নতুন হিসেবে কবরীর কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছিলেন?
প্রবীর মিত্র: তখন তিনি এক নম্বর নায়িকা ছিলেন। প্রচুর জনপ্রিয়তা ছিল তার। বলা যায় সহযোগিতা করেছিলেন, আবার করেননি।

বাংলানিউজ: আপনার দর্শক ও ভক্তদের কিছু বলতে চান? 
প্রবীর মিত্র: সবার কাছে দোয়া চাই। সবার ভালোবাসায় আজকের আমি এই অবস্থায় এসেছি। সবাই দোয়া করবেন যাতে আমি সুস্থ হয়ে আবারও অভিনয় ফিরতে পারি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৮

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।