বুধবার (২৪ অক্টোবর) কলকাতার বাড়ির মহিলা সমেত গৃহকর্তারা ব্যস্ত লক্ষ্মী দেবীর আরাধনায়। তবে বাঙালীর চিরকালই আগ্রহ থাকে বিনোদন জগতের তারকাদের বাড়ির লক্ষ্মীপূজা নিয়ে।
আর সেটা যদি হয় উত্তমকুমারের বাড়ির, তাহলে তো কথাই নেই। ভবানীপুরের গিরিশ মুখার্জি রোডের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের ঐতিহ্যমণ্ডিত লক্ষ্মীপূজা এবার ৬৮তম বর্ষে।
এ বছর পূজার প্রস্তুতির কথা জানালেন পশ্চিমবাংলার মহানায়ক উত্তমকুমারের নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায় এবং সৌরভ চট্টোপাধ্যায়।
পূজার আগের দিন থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন গৌরব। কুমোরটুলি থেকে ঠাকুর আনা থেকে শুরু করে লক্ষ্মীপূজার সব খুঁটিনাটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন তিনি। দাদুর মতো পূজার দিন সকাল থেকে নির্জলা উপোসে শুরু হয় প্রস্তুতি। ব্যস্ততা বাড়ে দুপুরের পর থেকে। সাদা ধুতি ও চাদরে তিনি নিজেও পূজায় বসেন।
গৌরব বলেন, আমাকে তিন ভাগে পূজায় বসতে হয়। পুরোহিতরা সাহায্য করেন। পাশাপাশি অতিথিদেরও আপ্যায়ন করতে হয়।
তাদের বাড়ির পূজায় অতিথি তালিকাও নক্ষত্রখচিত। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পূজা দেখতে আসেন। গৌরবের কথায়, প্রতিবছরই আমাদের পরিবারের তরফ থেকে নিমন্ত্রণ করা হয়।
প্রতি বছর অতিথি তালিকায় থাকে আত্মীয়স্বজনসহ নিকট বন্ধুবান্ধব। তাদের মধ্যে সেলেব্রিটিও রয়েছেন-জুন মালিয়া, সুদীপা বসুরা, জিৎ, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অনুপম রায়ও সময় পেলেই পূজার দিন ঘুরে যান। জি বাংলায় ‘রাণী রাসমণী’ ধারাবাহিকে মথুরের চরিত্রে অভিনয় করে গৌরব দর্শকমন জয় করেছেন। এই ধারাবাহিকের নতুন বন্ধুরাও এসেছেন পূজায়।
সন্ধ্যায় দেবীর অন্নভোগের পাশাপাশি অতিথিদের জন্য থাকে আলাদা খাবারের আয়োজন। লুচির সঙ্গে থাকে বেগুন বাসন্তী, পনির ও আলুর দম, সবজি, চাটনি, পায়েস ও মিষ্টিসহ অনেক রকম খাবার। সেই সঙ্গে গৌরবের ঠাট্টা ‘এখন তো সবাই স্বাস্থ্য সচেতন। তাই ইদানীং সবজির পদ বাড়াতে হচ্ছে। ’
ছোটবেলায় লক্ষ্মীপূজার কোনও স্মৃতি? একটু ভেবে বললেন, তখন আমার বয়স কম। সবে দেখেছি সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’। পূজার দিন সন্ধ্যায় বাড়িতে রবি দাদু (রবি ঘোষ) হাজির। অমন গম্ভীর মানুষটাকে দেখেই আমি ফিক করে হেসে ফেলেছি। মনে আছে, রবি দাদু এগিয়ে এসে আমার হাসির কারণ জানতে চেয়েছিলেন। আমি তখন ছবিটার কথা বললাম। পরে নাকি আমার ছোটদাদুকে (তরুণ কুমার) রবি ঘোষ বলেছিলেন, তোর নাতি ভালো কমেডিয়ান হবে!
‘রবি ঘোষ কেন এই মন্তব্য করেছিলেন তা অবশ্য আজও অজানা। কিন্তু অভিনয়কে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পেরেছি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ’পূজা নিয়ে নাতি সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমাদের বাড়ির লক্ষ্মীপূজা একটা ঐতিহ্য বহন করে চলছে। একটা সময় টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ার বড় পূজা ছিলো আমাদের বাড়ির পূজা। আমাদের প্রতিমা আসে কুমারটুলি থেকে। আগে ঠাকুর গড়তেন নিরঞ্জন পাল। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ভাইপোই প্রতিমা তৈরি করছেন। আমাদের প্রতিমার বিশেষত্ব হল দেবীর মুখ। আমার ঠাকুমা (গৌরীদেবী) মুখের আদলেই হয় প্রতিমার মুখ। সেই ট্র্যাডিশনই এখনও চলে আসছে।
‘এক সময় মহানায়ক নিজেই বসতেন পূজায়। তিনি মারা যাবার পর তার ছোট ভাই তরুণ কুমার বসতেন। তারপর উত্তমকুমারের ছেলে আর এখন আমার দাদা গৌরব বসেন পূজায়’।
ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে সৌরভ বলেন, তখন ফাইভ-সিক্সে পড়ি। লক্ষ্মীপূজার দিনে আনন্দের হাটবাজার বসত বাড়িতে। পূজা উপলক্ষে বাড়িতে প্রচুর আত্মীয়স্বজন আসেন। আমাদের আদিবাড়ি বারাসত থেকেও অনেকে আসেন। দাদুর (উত্তমকুমার) মামারবাড়ি আহিরীটোলা থেকেও আত্মীয়রা আসেন। খুব মজা হয়। প্রতিবারই ৬শ’র বেশি অতিথি আসেন। আমাদের প্রসাদী অন্নভোগ বাইরে বের হয় না। তাই সাধারণের জন্য লুচিভোগ করা হত।
‘এবছরও তাই। সঙ্গে ছোলার ডাল, ভাজা, বেগুন বাসন্তী, ছানার ডালনা, পায়েস, মিষ্টি, চাটনি। আমাদের পূজার আরেকটি বিশেষত্ব হল প্রতিমার বিসর্জন। লক্ষ্মী ঠাকুর বরণের শেষে কনকাঞ্জলি দেওয়ার পর ঠাকুর নিয়ে সারা পাড়া প্রদক্ষিণ করা হয়। আমরা সবাই মিলে পায়ে হেঁটে ঠাকুরের সঙ্গে যাই। তার সঙ্গেই শুরু হয় পরের বছরের পূজার জন্য অপেক্ষা। এসবই দাদু যেরকম ভাবে শুরু করেছিলো সেভাবেই চলে আসছে,’ ইতি টানলেন সৌরভ।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, ২৪ অক্টোবর ২০১৮
ভিএস/জেআইএম