ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

আত্মবীক্ষণমূলক আলোচিত্র প্রদর্শনী ‘আমার প্রামাণ্যীকরণ’

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৯
আত্মবীক্ষণমূলক আলোচিত্র প্রদর্শনী ‘আমার প্রামাণ্যীকরণ’ ‘আমার প্রামাণ্যীকরণ’ অনুষ্ঠানে অতিথিরা

বাংলাদেশে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা মানজারে হাসীন মুরাদের তোলা আত্মবীক্ষণমূলক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘আমার প্রামাণ্যীকরণ’ সোমবার (২১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের মাইডাস ভবনে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়।

উদ্বোধনের পর থেকেই মিলনায়তনে উপচেপড়া দর্শক-শ্রোতার আনন্দময় সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই আয়োজন রাত ৮টায় শেষ হয়। প্রামাণ্যচিত্র বিষয়ে সরস মননশীল আলাপ-আলোচনা-মতবিনিময় হয় দিনভর।

অনুষ্ঠান শুরু করেন প্রামাণ্যচলচ্চিত্র নির্মাতা, বাংলাদেশ প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ। তিনি মঞ্চে আহ্বান করেন মানজারে হাসীন মুরাদকে।  অনুষ্ঠানে শুভ্র দোলনচাঁপা ফুল উপহার দিয়ে বরণ করা হয় প্রামাণ্যকার, বিকল্প ধারা চলচ্চিত্র আন্দোলনের সংগঠক, চলচ্চিত্রবিষয়ক প্রাজ্ঞশিক্ষক মানজারে হাসীনকে।  ঠিক এরপরই মোমবাতি জ্বালিয়ে দিনব্যাপি আয়োজন ‘ডকুমেন্টিং মি’ সূচনা করেন মুরাদ। বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক মাকসুদুল বারী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। আলোকচিত্রের এই উদ্বোধনীতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম।

আত্মবীক্ষকমূলক আলোচিত্র প্রদর্শনী ‘আমার প্রামাণ্যীকরণ’এরপর শুরু হয় আত্মকথন। এই অংশে চলচ্চিত্রবিষয়ক মননশীল লেখক মাহমুদুল হোসেনের সঞ্চালনায় মানজারে হাসীন মুরাদ স্বাধীন প্রামাণ্যচলচ্চিত্র নির্মাতা এবং বিকল্পধারায় চলচ্চিত্র আন্দোলন সংগঠক হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা উপস্থিতির সঙ্গে শেয়ার করেন। দর্শকদের মুক্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই পর্ব।  

‘বর্তমান সময়ে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের চ্যালেঞ্জগুলি’ বিষয়ে গোলটেবিল বৈঠক শুরু হয় দুপুরের খাবার বিরতির পর। স্বাধীনপ্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ফৌজিয়া খানের সঞ্চালনায় এই আসরের মুখ্য আলোচক ছিলেন মানজারে হাসীন। আরও অংশগ্রহণ করেন সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল, শবনম ফেরদৌসী, ব্রাত্য আমীন, পলাশ রসুল এবং ফরিদ আহমেদ।  সুদূর যুক্তরাজ্য থেকে অনলাইনে যুক্ত হন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা মকবুল চৌধুরী।  নির্ধারিত এই বক্তাদের সঙ্গে যোগদেন তরুণ প্রামাণ্য নির্মাতা ঝুমুর জুঁই, জুয়েরি, জাহিদ হাসান, সাইফুল জার্নাল ও অভি। প্রামাণ্যকার রাজিয়া কাদেরসহ সচেতন দর্শক গণআলোচনায় অংশ নিয়ে বৈঠকটি সরস প্রাণবন্ত করে তোলেন।

আয়োজকগণ কেক কাটার এক অনির্ধারিত পর্ব রেখেছিলেন দিনব্যাপী এই আয়োজনে। সোমবার (২১ অক্টোবর) ছিলো মানজারে হাসীন মুরাদের জন্মদিন। উপস্থিত সকল প্রিয়জনের সঙ্গে তিনি উদযাপন করেন ৬৫তম জন্মদিন।

দিনের শেষ আয়োজন ছিলো ‘আমার প্রামাণ্যীকরণ’ বিষয়ে মাস্টারক্লাস। এই পর্বে নিজের আত্মবীক্ষণমূলক আলোকচিত্র ধারণ ও প্রামাণ্যচিত্রকর হিসেবে অভিজ্ঞতা শোনান মানজারে হাসীন মুরাদ। মাস্টারক্লাসটিও জমে ওঠে আগ্রহী দর্শক-শ্রোতার প্রশ্ন-উত্তর পর্বের মধ্য দিয়ে।

ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে মাইডাস ভবনের দশমতলায় অবস্থিত ইএমকে সেন্টারের ‘আড্ডা’ নামের মিলনায়তনটি সোমবার (২১ অক্টোবর) ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। আসন না পেয়ে অনেকে মেঝেতে বসে, দাঁড়িয়ে থেকে দিনব্যাপী প্রামাণ্যচিত্র বিষয়ে নানান বাদ-বিবাদে মগ্ন ছিলেন মানজারে হাসীন মুরাদের সঙ্গে। এককথায় এটি ছিলো সৃজনশীলতায় সক্রিয়জনের জন্মদিবস উদযাপনের অনন্য এক অনুষ্ঠান।

প্রামাণ্যচিত্রকর মানজারে হাসীন ইদানিং মোবাইল ক্যামেরায় স্থিরচিত্র ধারণ করেন। নিয়মিত সেগুলো ফেসবুকে পোস্টও করেন। ফেসবুকে তার পোস্ট করা ছবিগুলো বিশেষভাবে নজর কাড়ে কানাডা প্রবাসী প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল, ঢাকার প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ফৌজিয়া খান এবং চলচ্চিত্রবিষয়ক মননশীল লেখক মাহমুদুল হোসেনের। তারা তিনজন মুরাদের আত্মবীক্ষণমূলক আলোকচিত্রগুলোর একটি প্রদর্শনী করার প্রাথমিক পরিকল্পনা করেন।  ক্রমে তাদের পরিকল্পনায় সাজানো হয় ‘ডকুমেন্টিংমি’ বা ‘আমার প্রামাণ্যী করণ’। আলোকচিত্র প্রদর্শনীর সঙ্গে দিনব্যাপী মানজারে হাসীন মুরাদের শিল্পচর্চা কাছ থেকে জানাবো এবং দিনময় প্রামাণ্যচিত্রের একটি মননশীল আড্ডা আয়োজনের পরিকল্পনা করেন তারা।  

আমার প্রামাণ্যীকরনের প্রদর্শনী পরিকল্পনায় যুক্ত হন ঢাকার বিশিষ্ট প্রকাশনা নোকতার স্বত্বাধিকারী আলোচিত্রী আরিফুর রহমান। আরও যুক্ত হন ভাস্কর নাসিমা হক মিতু। তাদের দুজনের দৃষ্টি নন্দন গ্রাফিকসজ্জা পুরো আয়োজনটি সমৃদ্ধ করেছে।

এই মানুষগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদ। বাংলাদেশ প্রামাণ্যচিত্র পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ এবং সহ-সভাপ্রধান মৃদুল মামুন সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন ‘আমার প্রামাণ্যীকরণ’ আয়োজক দলে।  মূলত তাদের আগ্রহেই এই আয়োজনের জন্য বেছে নেওয়া হয় মানজারে হাসীন মুরাদের জন্মদিবসকে।  

চলচ্চিত্র শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রামাণ্যচিত্রকর, আলোকচিত্রি, চলচ্চিত্রনির্মাতা, চলচ্চিত্র গবেষক, চলচ্চিত্র আন্দোলন কর্মী এবং মানজারে হাসীন মুরাদের পরিবার ও বন্ধুদের সরব অংশগ্রহণে একটি সুপরিকল্পিত, সুসমন্বিত আয়োজনে মুখর থেকেছে ইএমকে সেন্টারের ‘আড্ডা’ মিলনায়তন।  ইএমকে সেন্টার মিলনাতয়ন ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছে।

সকলের স্বেচ্ছাশ্রমে, মাহমুদুল হোসেনের নেতৃত্বে ‘আমার প্রামাণ্যীকরণ’র আয়োজক দিনব্যাপি একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল অনুষ্ঠান ঢাকার শিল্পানুরাগী মানুষদের উপহার দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৯
ওএফবি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।