ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

মিডিয়ার কাউকে অসুস্থ মুখ না দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন এন্ড্রু

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৩ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২০
মিডিয়ার কাউকে অসুস্থ মুখ না দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন এন্ড্রু

না ফেরার দেশে চলে গেলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে রোববার ( ৬ জুলাই) ৬টা ৫৫ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। 

দেশে ফেরে প্লেব্যাক সম্রাট রাজশাহী মহানগরের মহিষবাথান এলাকায় থাকা তার বড় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় ছিলেন। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল।

সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসার পর প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেন এন্ড্রু কিশোর। কিন্তু হঠাৎ ২ জুন তার হালকা জ্বর আসে। ৩ জুন রাতে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। ৪ জুন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন ডাক্তার। কিন্তু জ্বর বারবার আসতে থাকে। কোনো ওষুধ তার শরীরে কাজ করছিল না।  

এরপর ৯ জুন ডাক্তার এন্ড্রু কিশোরের PET SCAN করেন, তার শরীরে Lymphoma (ভাইরাস) আবার back করেছে কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য।  শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের সন্দেহ’ই ঠিক হয়। হ্যাঁ, ১০ জুন এন্ড্রু কিশোরের স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রুকে সেখানের ডাক্তার লিম জানান তার শরীরে Lymphoma Back করেছে (Lymphoma  ভাইরাস ডান দিকের লিভার এবং স্পাইনালে ছড়িয়ে গিয়েছে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বাসা বেঁধেছে)। ডাক্তার দুঃখ প্রকাশ করেন। নিশ্চিত হয়ে যায় এন্ড্রু কিশোরের আর বাঁচার সম্ভবনা নেই। গোপন না রেখে এন্ড্রু কিশোরকে বিষয়টি অবগত করেন তার স্ত্রী। কিন্তু এমন খবরেও বিন্দুমাত্র ভেঙে পড়েননি প্লেব্যাক সম্রাট। বরং স্ত্রীকে স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলে উঠেন, ‘আমি বাংলাদেশে মরতে চাই, ফিরে যেতে চাই নিজ দেশে। এখানে আর থাকতে চাই না। ’

এরপর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে ৯ মাস পর গত ১১ জুন মধ্যরাতে দেশে ফেরেন তারা। তার আগে এন্ড্রু কিশোর সিদ্ধান্ত নেন, দেশে ফিরে জীবিত মুখ মিডিয়াঙ্গনের কাউকে দেখাবেন না। তাই গুণী এই শিল্পীর দেশে ফেরার খবরটিও মিডিয়াতে প্রকাশ পায় বেশ কিছুদিন পর। তবে, জীবিত অবস্থায় তার মুখ না দেখানোর কারণ সম্পর্কে তার পরিবার কিছু বলতে নারাজ।  
 
দেশে ফিরে কিছুদিন ঢাকার মিরপুরের বাসায় থাকার পর চলে যান গ্রামের বাড়ি রাজাশাহীতে। আর  এন্ড্রু কিশোর যে বাঁচবেন না, সে বিষয়টিও পরিবার গোপন রাখে। তাই তার শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হতে দেখেই রাজশাহীতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার।  বিষয়টি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন এন্ড্রু কিশোরের চাচাতো ভাই রেমন্ড তপু।

তিনি বলেন, ‘বাঁচার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছেন তিনি। পারলেন না। মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন। তার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া-প্রার্থনা ছাড়া আর কিছুই আমাদের চাওয়ার নেই। ’

এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন এন্ড্রু কিশোর। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসাপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। কিডনি ও হরমোনজনিত সমস্যার পাশাপাশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন গুণী এই শিল্পী।  

এন্ড্রু কিশোর সংসার জীবনে স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু এবং সজ্ঞা (২৬) নামে এক মেয়ে  ও সপ্তক (২৪) নামে এক পুত্র সন্তান রেখে গেছেন। তার দুজনই বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা করছেন। সজ্ঞার পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে।

১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। সেখানেই কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর খ্যাতনামা ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।

১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমায় ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয়।  

সেই শুরুর পর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এন্ড্রু কিশোরের খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।  

এন্ড্রু কিশোর ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের আরও অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন উপমহাদেশের খ্যাতনামা এই শিল্পী।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২০
ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।