সোমবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
এরপর প্রিয় শিল্পীকে একনজর দেখতে রাজশাহীর মহিষবাথান এলাকায় থাকা বড় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়ির সামনে ভিড় করছেন সবাই। মরণঘাতী ক্যান্সারের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে এই বাড়িতেই জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত এই সঙ্গীত তারকা।
বড় বোন ও বোনের স্বামী দু’জনই স্বনামধন্য চিকিৎসক। বাড়িটি একটি অংশেই রয়েছে ক্লিনিক। সেখাসে গত ২০ জুন থেকে চিকিৎসা চলছিল কিংবদন্তি এন্ড্রু কিশোরের। তাই ওই বাড়িটি ঘিরেই সবার কৌতুল। কিভাবে ছিলেন, কেমন ছিলেন, কি খেয়েছেন, কি বলে গেছেন- একে অপরে কথোপকথনের মাধ্যমে এসব প্রশ্নই আজ জানার চেষ্টা করছেন সবাই।
>>>চলে গেলেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর
তাই এখন তার স্বজন, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড়ে গমগম করছে রাজশাহী দীগন্ত প্রসারী সংঘের মোড়ে থাকা ওই বাড়ির পুরো এলাকা। বাড়ির মধ্যে চলছে তার শেষ গোসল ও কফিনে রাখার প্রক্রিয়া। বাড়ির বাইরে রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। এখান থেকে রাতেই তার মরদেহ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই রাখা হবে এই শিল্পীর মরদেহ।
সন্ধ্যা থেকে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দেই শেষবারের মতো এন্ড্রু কিশোরকে দেখতে তার বোনের বাসায় গিয়েছেন।
প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের বন্ধু রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. দীপকেন্দ্র নাথ দাস বাংলানিউজকে জানান, এন্ড্রু কিশোরের বাবার নাম ক্ষিতিশ চন্দ্র বাড়ই। মায়ের নাম মিনু বাড়ই। এন্ড্রু কিশোর সংসার জীবনে স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু এবং সজ্ঞা (২৬) নামে এক মেয়ে ও সপ্তক (২৪) নামে এক পুত্র সন্তান রেখে গেছেন। তার দুজনই বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা করছেন। সজ্ঞার পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। তারা দেশের পথে রয়েছে। মূলত তারা ফিরলেই এন্ড্রু কিশোরের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। একই সঙ্গে তাকে কোথাও সমাহিত করা হবে সেই বিষয়েও সিদ্ধান্ত হবে। যা পরে গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই পর্যন্ত তার বন্ধু এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিম ঘরে রাখা হবে। রাতেই তার মরদেহ সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে।
১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। সেখানেই কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর খ্যাতনামা ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমায় ‘অচিনপুরের রাজকুমারি নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয়।
সেই শুরুর পর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এন্ড্রু কিশোরের খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল’প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
এন্ড্রু কিশোর ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের আরও অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন উপমহাদেশের খ্যাতনামা এই শিল্পী।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০২০
এসএস/এনটি