ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

সুচিত্রা সেন নেই সাত বছর

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
সুচিত্রা সেন নেই সাত বছর সুচিত্রা সেন

জমকালো সেলুলয়েড সেনসেশন ছিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। তার নাম শুনলে এখনো মুগ্ধতা প্রকাশ করতে দেখা যায় দর্শকদের।

কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী রোববার (১৭ জানুয়ারি)।

রূপ, লাবণ্য, আকর্ষণীয় শারীরিক গড়ন এবং অতুলনীয় অভিনয় দিয়ে কোটি হৃদয় আজও সমুজ্জ্বল সুচিত্রা সেন। বাংলা সিনেমাকে তিনি নিয়ে গেছেন এক অন্য উচ্চতায়।  

তিনি ছিলেন রহস্যময়ী। তবে সব রহস্যের ইতি টেনে কোটি ভক্তকে চোখের জলে ভাসিয়ে ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮২ বছর বয়সে দেহ ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি।

সুচিত্রা সেনের প্রকৃত নাম রমা দাশগুপ্ত। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের বৃহত্তর পাবনার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙাবাড়ি গ্রামে নানাবাড়িতে তার জন্ম। পাবনা শহরের বাড়িতে কেটেছে তার শৈশব-কৈশোর। তবে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে যান তিনি।  

বড় পর্দায় সুচিত্রার যাত্রা শুরু হয় ১৯৫২ সালে। সব মিলিয়ে ৬০টি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে বাংলা ৫৩টি এবং হিন্দি ভাষার ৭টি সিনেমায় তাকে দেখা গেছে। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘শেষ কোথায়’ হলেও মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম বাংলা সিনেমা ‘সাত নম্বর কয়েদি’। আর প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘দেবদাস’ মুক্তি পায় ১৯৫৫ সালে।

১৯৫৪ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ও ‘অগ্নিপরীক্ষা’ সিনেমা সুচিত্রাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়।

রূপালি পর্দায় সুচিত্রা সেনের নায়ক হিসেবে অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার। উত্তম-সুচিত্রা জুটির ৩০টি বাংলা সিনেমা সাফল্য পায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘সবার উপরে’, ‘পাপমোচন’, ‘শিল্পী’, ‘সাগরিকা’, ‘পথে হল দেরি’, ‘হারানো সুর’, ‘গৃহদাহ’, ‘প্রিয় বান্ধবী’ ইত্যাদি।  

অভিনয়ে আসার আগেই সংসার জীবন শুরু হয় সুচিত্রার। ১৯৪৮ সালে কলকাতার শিল্পপতি আদিনাথ সেন তনয় দিবানাথ সেনের সঙ্গে তিনি ঘর বাঁধেন। তার একমাত্র মেয়ে মুনমুন সেন। দুই নাতনি রাইমা সেন ও রিয়া সেনও অভিনেত্রী।

১৯৬৩ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সাত পাকে বাঁধা’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান মহানায়িকা। ১৯৭২ সালে পান ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’। এছাড়া ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাংলাবিভূষণ সম্মাননা দেওয়া হয় তাকে।  

সুচিত্রা সেন ছিলেন অভিমানী। কোন এক অজানা কারণে প্রায় ৩৬ বছর তিনি ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। কলকাতায় একাকী থাকতেন বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে। স্বেচ্ছা নির্বাসনে গিয়ে রহস্যময়ী ছিলেন আমৃত্যু।

তবে গোপাল কৃষ্ণ রায় নামের এক সাংবাদিক বলেছিলেন, ১৯৭৮ সালে সুচিত্রা সেন প্রণয় পাশা নামে একটি সিনেমায় সবশেষ অভিনয় করেন, যেটি ফ্লপ হয়। এতে তিনি দারুণভাবে ভেঙে পড়েন, কষ্ট পান এবং চলে যান বেলার মাঠে রামকৃষ্ণ মিশনে- যেটা কলকাতার বাইরে অবস্থিত। সেখানে তার সঙ্গে দেখা হয় পবিত্র ধর্মগুরু ভারত মহারাজের। দীর্ঘ সময় সুচিত্রা তার সঙ্গে কথা বলেন।  আমি তার মুখে শুনেছি, তিনি ভারত মহারাজের পায়ের কাছে বসে অনেক কেঁদেছিলেন। ভারত মহারাজ তাকে বলেছিলেন, মা অর্থলিপ্সু লোভী হইও না। এবং আমি মনে করি, এটাকে সুচিত্রা সেন আমলে নিয়ে নিজেকে নিভৃতচারী করে রাখেন।  

২০১৪ সালে দখলমুক্ত কর হয় পাবনা শহরে সুচিত্রা সেনের বাড়ি। ২০১৭ সালের ০৬ এপ্রিল দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেন সংগ্রহশালাটি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২১
জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।