ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

বাউল সম্রাটকে হারানোর এক যুগ

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
বাউল সম্রাটকে হারানোর এক যুগ বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম

সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার ও কুসংস্কার দূর করতে সুরে সুরে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত সংগ্রাম করে গিয়েছেন বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম। তার গানে রয়েছে আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া, যা মুহূর্তেই যে কাউকে মোহাবিষ্ট করতে পারে।

২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে দেহ ত্যাগ করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এই কিংবদন্তি বাউল, কিন্তু রেখে গিয়েছেন নিজের অসংখ্য সৃষ্টি। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) শাহ আবদুল করিমের জীবনাবসানের এক যুগ পূর্ণ হয়েছে।  

১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাউল সুফি সাধক শাহ আব্দুল করিম। দারিদ্রের সঙ্গে সংগ্রাম করে কালনী নদীর তীরে বেড়ে ওঠা তার। ইব্রাহীম আলী ও নাইওরজানের ঘরে জন্ম এই বাউল সম্রাটের। ছেলেবেলা থেকেই তিনি শুরু করেন সঙ্গীত সাধনা। শাহ আবদুল করিমের প্রেরণা স্থান ছিল তার স্ত্রী আফতাবুন্নেসা। তিনি তাকে আদর করে ডাকতেন ‘সরলা’। স্ত্রীর প্রয়াণের পর সরলাকে নিয়ে গান রচনা করেছেন বাউল সাধক।   

গানের মাঝেই স্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টায় মগ্ন ছিলেন শাহ আবদুল করিম। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার কথাও উঠে এসেছে তার গানে। প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহ’র দর্শন থেকে তিনি গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। যদিও দারিদ্র তাকে বাধ্য করে কৃষিকাজে শ্রম ব্যয় করতে। কিন্তু কোনো কিছু তাকে গান থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

তিনি আধ্যাত্মিক ও বাউল গানের দীক্ষা লাভ করেছেন কামাল উদ্দীন, সাধক রশীদ উদ্দীন, শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশ-এর কাছ থেকে। তিনি শরীয়ত, মারফত, নবুয়ত, বেলায়াসহ সবধরনের বাউল গান এবং গানের অন্যান্য শাখার চর্চা করেছেন।

অধ্যাত্মিকতার দিক থেকে হাসনরাজা, রাধারমণ, ফকির দুরবীন শাহ ও মওলানা ইয়াসিনের আধ্যাত্মিক গানের ভাবার্থের সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে বাউল করিমের গানের।

‘কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু’, ‘গানে মিলে প্রাণের সন্ধান’, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘কোন মেস্তরী নাও বানাইছে’সহ প্রায় দেড় সহস্রাধিক গান বাউল সম্রাটকে কিংবদন্তির আসনে বসিয়েছে। তার রচিত গানেই ছিল সৃষ্টিকর্তার উপাসনা।   

বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। কিশোর বয়স থেকে গান লিখলেও এক সময় শুধু এসব গান ভাটি অঞ্চলের মানুষের কাছেই জনপ্রিয় ছিল। তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো নতুন করে গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে, তিনি দেশব্যাপী আরও বেশি পরিচিতি লাভ করেন।

২০০৬ সালে সাউন্ড মেশিন নামের একটি অডিও প্রকাশনা সংস্থা তার সম্মানে ‘জীবন্ত কিংবদন্তি: বাউল শাহ আবদুল করিম’ নামে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া তার জনপ্রিয় ১২টি গানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে। শিল্পীর চাওয়া অনুযায়ী ২০০৯ সালের প্রথম দিকে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে বাউল আব্দুল করিমের সমগ্র সৃষ্টিকর্ম নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।