ঢাকা, শনিবার, ২৮ চৈত্র ১৪৩১, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

টমেটো ব্যাঙ, কচ্ছপ ব্যাঙ ...

সাজিদুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১২
টমেটো ব্যাঙ, কচ্ছপ ব্যাঙ ...

ঢাকা: কুনো ব্যাঙ, সোনা ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ, সুন্দরী ব্যাঙ এমন অনেক ধরণের ব্যাঙের নামের সঙ্গেই আমরা পরিচিত। কিন্তু টমেটো ব্যাঙ, কচ্ছপ ব্যাঙ এসব নাম সচারচর আমরা শুনি না।

এমন কিছু অদ্ভুত ব্যাঙের সঙ্গে চলুন এবার পরিচিত হই।

madagascar_tomato

madagascar_tomato

টমেটো ব্যাঙ

শুধু নাম শুনলে কেন, দেখলেই এর নামের যথার্থতা বোঝা যায়। ‘টমেটো ব্যাঙ’ বা ইংরেজিতে Tomato frog। টমেটো কেচাপের মতোই লাল রঙ। হয়তো এই রঙই বুঝিয়ে দেয় এটা শিকারীদের জন্য নিরাপদ নয়। মাদাগাস্কারের এ বাসিন্দা দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার জন্য শিকারীর চোখে আঠালো পদার্থ ছিটিয়ে দেয়।

গ্লাস ফ্রগglass-frog

glass-frog


নাম শুনলেই বোঝা যায় এটি দেখতে কেমন হবে। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার আর্দ্র বনাঞ্চলের এ বাসিন্দার শরীর এতটাই স্বচ্ছ যে এর ভেতরের সব কিছু দেখা যায়। এর জন্যই এর নাম ‘গ্লাস ফ্রগ’। গাছে চড়ে বেড়ানো নিশাচর এ প্রাণিটির কিছু জাত ভাই এতটাই স্বচ্ছ যে এর নড়তে থাকা হৃদপিণ্ড পর্যন্ত দেখা যায়। এ ব্যাঙের এ স্বচ্ছতাই জঙ্গলের সঙ্গে এদের মিশিয়ে রাখে।

ornate_horned_frog

ornate_horned_frog

শিংওয়ালা অরনেট ব্যাঙ

শিংওয়ালা অরনেট ব্যাঙ। এর বিশাল মুখ আর অপরিসীম ক্ষুধার জন্য এর আরেকটি নাম-Pac-Man frog (ভিডিও গেম Pac-Man অনুসারে)।

এই ব্যাঙ ছদ্মবেশ ধরে ঘাপটি মেরে মাটিতে বা গাছের মরা অংশের ওপরে শুয়ে শিকার ধরে। শিং ওয়ালা এই ব্যাঙ পাখি, কীট-পতঙ্গ ইঁদুর এমনকি অন্য ব্যাঙ গিলে খায়। উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলে সহজেই এদের দেখা পাওয়া যায়।

কচ্ছপ ব্যাঙturtle-frog

turtle-frog


কচ্ছপ ব্যাঙ। নাম শুনলেই বোঝা যায়, ব্যাঙ নামের যে প্রাণীটিকে সচারচর আমরা দেখি তার সঙ্গে এর অমিল রয়েছে। কচ্ছপের মতো এরও পিঠের খোল রয়েছে। এই ব্যাঙের ছোট, গুটির মতো চোখ এবং চর্বিযুক্ত পা রয়েছে। কচ্ছপ ব্যাঙ বেলে মাটিতে গর্ত করে থাকে। উই পোকার গর্তের আশেপাশে এরা থাকতে পছন্দ করে। কারণ তাহলে খাওয়ার আর চিন্তা থাকে না।
যারা এই কচ্ছপ ব্যাঙ স্বচক্ষে দেখতে চান তাদের কে একটু কষ্ট করে দক্ষিণ-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার গহীনের উপকূলীয় সমতলভূমি এবং বনে যেতে হবে। কারণ এরা শুধু এ অঞ্চলেই বসবাস করে।

pinocchio-nosed-frog

pinocchio-nosed-frog

লম্বা নাকের ব্যাঙ

ইতালিয়ান লেখক কার্লো কলোডির বিখ্যাত চরিত্র পিনোকিও’র কথা আমরা অনেকেই জানি। ওই যে, সেই ছেলেটি যে মিথ্যা বললেই নাক বড় হয়ে যেতো। আমাদের এবারের ব্যাঙটির নাম Pinocchio-nose frog।

খুব সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার ফোজা পর্বতমালায় বণ্যপ্রাণী খোঁজার সময় এই ব্যাঙটি পাওয়া যায়। লম্বা নাকের এ ব্যাঙটির বৈজ্ঞানিক নাম এখনো দেওয়া হয়নি। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাঙ গবেষক পল অলিভার এ ব্যাঙটিকে প্রথম খুঁজে পান। এরপর আরো খোঁজাখুঁজির পরও অলিভার দ্বিতীয় আরেকটিকে খুঁজে পাননি। পরে দেখা যায়, এটি মূলত গাছের ওপরে বাস করে। সুতরাং যারা এ প্রাণিটিকে দেখতে চান তাদের একটু কষ্ট করে শেষমেষ গাছেই চড়তে হবে।

পেছন পকেট ব্যাঙhip-pocket-frog

hip-pocket-frog


‘হিপ পকেট ফ্রগ’ নাম যেমন অদ্ভুত এদের জীবন যাত্রাও তেমনি। ক্যাঙ্গারুর মতো এরাও উপজঠরী (মারসুপিয়াল)। তবে পুরুষ ব্যাঙ এদের শরীরের ছোট থলিতেই বাচ্চাদের বহন করে। মা ব্যাঙ ডিম দেওয়ার সময় পুরুষটি পাহারা দেয়। স্যাঁতসেঁতে বালিতে ডিম পাড়ার পর ব্যাঙাচি আপনমনে বাবার পেছনের থলিতেই মোচড়ানোর ভঙ্গিতে চলতে চলতে ঢুকে যায়। এখানেই এরা বড় হতে থাকে। স্থলজ এ প্রাণিটি মরা পাতার মধ্যে বাস করে। পাঠক দেখতে চান এদের। একুট কষ্ট করে চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়।

পেটে বড় হওয়া ব্যাঙgastric-brooding-frog

gastric-brooding-frog


এদের ইংরেজি নাম Southern gastric-brooding frog। ব্যাঙের এ প্রজাতির বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পদ্ধতি সত্যিই অবাক করার মতো। মা ব্যাঙ ডিম দেওয়ার পর সেগুলো খেয়ে ফেলে। এরপর তার হজম প্রক্রিয়া ধীর গতির হতে থাকে। এক পর্যায়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয় মা ব্যাঙ। ডিম ফুটে পাকস্থলীতেই ব্যাঙাচি বড় হতে থাকে। ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর মা তার মুখ খোলে। তখন খাদ্যনালী বিস্ফোরিত হয়ে ব্যাঙাচিরা বেরিয়ে আসতে থাকে।

১৯৭২ সালে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের রেইন ফরেস্টের পুকুর আর পাথুরে নালায় আবিষ্কৃত এ ব্যাঙটি বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়। ১৯৮১ সালে এটিকে সর্বশেষ দেখতে পওয়া যায়। খাঁচায় থাকা অবস্থায় ১৯৮৩ সালে এ প্রজাতির সর্বশেষ বংশধরটি মারা যায়।

সুরিনাম টডSurinam-toad-pipa

Surinam-toad-pipa


সুরিনাম টড বা পিপা ব্যাঙ পৃথিবীর সবচেয়ে চ্যাপ্টা উভচর প্রাণী। দেখলে মনে হবে যেন এর গায়ের ওপর দিয়ে ৯ টনের ট্রাক চলে গেছে। অদ্ভুত আকারের কারণেই এরা পাতা বা গাছের ভাঙা অংশের নীচে লুকিয়ে থাকতে পারে। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন বেসিনে এদের বসবাস।

এদের বাচ্চা জন্ম দেওয়া পদ্ধতিও বেশ চমৎকার। মা ব্যাঙ ডিম পাড়ার পর পুরুষটি সেগুলো মায়ের পিঠে লাগিয়ে দেয়। মায়ের ত্বকের সঙ্গেই ডিমগুলো লেগে থাকে। তখন এখানে একটি পকেটের মত তৈরি হয়। ২০ সপ্তাহের মধ্যে ব্যাঙাচি বড় হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১২
এসএইচ/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।