বাগেরহাট: সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বিলুপ্তপ্রায় বাটাগুর বাসকার (কচ্ছপ) ডিম ফুটে ৬৫টি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে।
সোমবার (৫ মে) ভোরে বাচ্চাগুলোকে বিশেষ ইনকিউবেটর থেকে তুলে কেন্দ্রের কচ্ছপ লালনপালন কেন্দ্রর সংরক্ষণ প্যানে রাখা হয়।
এর আগে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনটি বাটাগুর বাসকা মোট ৮২টি ডিম দেয়। পরে সেগুলো সংগ্রহ করে বিশেষ ইনকিউবেটরে (পুকুরপাড়ের বালুর চর) রাখা হয়। রোববার (৪ মে) থেকে বাচ্চাগুলো ফুটে বের হতে শুরু করে। সব মিলিয়ে সোমবার সকাল পর্যন্ত ৬৫টি বাচ্চা হয়। অবশিষ্ট ডিমগুলো নষ্ট হয়েছে।
এ পর্যন্ত সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে ৫২১টি ডিম থেকে ৪৭৫টি বাচ্চা ফুটেছে বলে জানান সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী ও প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির।
তিনি বলেন, তিনটি বাটাগুর বাসকা মোট ৮২টি ডিম দিয়েছিল। নিবিড় পরিচর্যা ও বিশেষ ইনকিউবেটরে বালুর মধ্যে রেখে আমরা বাচ্চা ফুটানোর চেষ্টা করেছি। মোট ৬৫টি বাচ্চা ফুটেছে। বাচ্চাগুলোকে কচ্ছপ লালনপালন কেন্দ্রর সংরক্ষণ প্যানে রাখা হয়েছে। বড় হলে এগুলো সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হবে।
বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, পৃথিবীতে প্রায় তিনশ প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। একসময় এ অঞ্চলে প্রায় ২৬টি প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যেতো। এর মধ্যে বাটাগুর বাসকার প্রজাতির কচ্ছপ আর দেখা যাচ্ছিল না। দুই হাজার সালের দিকে বন্যপ্রাণী গবেষকরা মনে করেন পৃথিবীতে আর বাটাগুর বাসকার কোনো অস্তিত্ব নেই। পরে ২০০৮ সালে গবেষকরা প্রকৃতিতে বাটাগুর বাসকা আছে কি না তা খুঁজতে শুরু করেন। খুঁজতে খুঁজতে নোয়াখালী ও বরিশালের বিভিন্ন জলাশয়ে আটটি বাটাগুর বাসকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে চারটি পুরুষ ও চারটি স্ত্রী। প্রজননের জন্য গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হয় কচ্ছপগুলোকে। বনবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকেরা নিবিড়ভাবে লালনপালন ও প্রজননের চেষ্টা করে বাটাগুর বাসকা এগুলোকে। তারপরও তেমন সাফল্য পাওয়া যায়নি। তবে কয়েক বছরে গাজীপুরে প্রায় ৯৪টি বাচ্চা দিয়েছিল আটটি মা কচ্ছপ। সেখানে ভালো সাড়া পাওয়ায় ২০১৪ সালে মূল আটটি বাটাগুর বাসকা ও তাদের জন্ম দেওয়া ৯৪টি ছানাসহ করমজল কৃত্রিম প্রজননকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। ২০১৭ সালে দুটি কচ্ছপের ৬৩টি ডিম থেকে ৫৭টি বাচ্চা হয়। ২০১৮ সালে দুটি কচ্ছপের ৪৬ ডিম থেকে ২১টি বাচ্চা পাওয়া যায়। ২০১৯ সালে একটি কচ্ছপের ৩২টি ডিম থেকে ৩২টি বাচ্চা পাওয়া যায়।
২০২০ সালে ১০ মে একটি কচ্ছপের ৩৫টি ডিম থেকে ৩৪টি বাচ্চা পাওয়া যায়। এ বাচ্চা থেকে ২০১৭ সালে দুটি, ২০১৮ সালে পাঁচটি, ২০১৯ সালে পাঁচটি কচ্ছপ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে অবমুক্ত করে বন বিভাগ। ২০২০ সালে ১০টি কচ্ছপ সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়।
এএটি