ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বৈচিত্র্যহীন ষড়ঋতু, শীত-গ্রীষ্মই প্রধান

ইসমাইল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৩
বৈচিত্র্যহীন ষড়ঋতু, শীত-গ্রীষ্মই প্রধান

ঢাকা: শরতে শেফালি নেই, কদম ফোটে না বর্ষায়। হেমন্তের সকালে সূর্যকে দেখে ঘাসের ডগায় হাসে না শিশির কণা।

ঋতুরাজ বসন্তে কোকিলের কুহু কুহু ডাকও নেই। কালবৈশাখী ছোবল মারে না গ্রীষ্মের প্রখরতাকে!

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে প্রতি দুই মাসকে এক একটি ঋতু হিসেবে গণনা করা হলেও এখন তা বৈচিত্র্যহীন। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে প্রতিটি ঋতু। পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের অনেক দেশের মতো শীত-গ্রীষ্ম প্রধান হয়ে উঠছে বাংলাদেশের ঋতুচক্রে।

অসময়ে বৃষ্টি কিংবা অতিবৃষ্টি, ফসলের প্রয়োজনে বৃষ্টিহীন আকাশ-প্রকৃতির এমন রুদ্ররূপ এখন মনুষ্যজীবনকে করে তুলেছে অতীষ্ঠ।

আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতির ওপর অপ্রাকৃতিক আচরণই প্রকৃতির এই কঠোরতা। এখন ঋতু বদলের গতি-প্রকৃতিতেও পরিবর্তন এসেছে, পরিবর্তন এসেছে জলবায়ুতে।

আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাসের গ্রীষ্মের প্রখর রূপ বদল হয়ে আষাঢ়-শ্রাবণের বর্ষার সময়ে চলে এসেছে। নদী-নালা, খাল-বিল জলে টুইটম্বুর হওয়া বর্ষার জলাশয় শাপলা-পদ্মহীন।

আবহাওয়া অফিসের হিসেবে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসকেই বর্ষাকাল গণনা করা হয়। ঋতুচক্রের আষাঢ়-শ্রাবণে অঝোরে বৃষ্টি হয় না। এ বছর বর্ষার প্রথম তিন মাসে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের তুলনায় কমেছে ৪৯ দশমিক ১ ভাগ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সেপ্টেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগস্ট মাসে কোনো লঘুচাপ বা নিম্নচাপ দেশের উপকূল অতিক্রম না করায় এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) দেশের ওপর বেশিরভাগ সময় কম সক্রিয় থাকার কারণে সারাদেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

গ্রীষ্ম ও বর্ষার মতো পরিবর্তন হয়েছে অন্য ঋতুতেও। সুনির্মল আকাশ শরতের বৈশিষ্ট্য হলেও এখন তা নেই। মনোলোভা কাশফুল, শিউলি ফুলও দেখা যায় না। নববধূর সজ্জায় সাজে না শরৎ। বাংলার কৃষকেরা হেমন্তকালে মনের আনন্দে আমন ধান কাটে না। নবান্ন উৎসবও হারিয়েছে ঐতিহ্য।

গাছে গাছে নতুন পাতা কিংবা নাগেশ্বর, মাধবীলতা, শিমুল, বকুল, অপরাজিতা, অশোক, আকন্দ, স্বর্ণলতাসহ মৌসুমী ফুলের সমারোহে বসন্ত আসে না এ কালের বাংলাদেশে।

প্রকৃতিকে নিজস্ব গতিতে চলতে না দেওয়ায় ষড়ঋতুর দেশ বৈচিত্র্য হারিয়েছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট পানি গবেষক ড. আইনুন নিশাত। পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনও এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন তিনি।

পরিবেশ বিধ্বংসী কালো ধোঁয়া, কলকারখানার বর্জ্য মাটি-পানিকে দূষণ করছে প্রতিনিয়ত। দিন দিন কমছে গাছপালা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কার্বন নির্গমণ।

বাংলা পঞ্জিকায় ভাদ্র মাসে সেপ্টেম্বর শরৎকাল হলেও এ মাসে আরও বৃষ্টিপাত হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়া বিন্যাস, বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়া মানচিত্র, জলবায়ু রিগ্রেশন, উপগ্রহ ও রাডার চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অফিস জানায়, সেপ্টেম্বরে ১০ থেকে ১৮ দিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত এ মাসে ১২ থেকে ১৬ দিন পর্যন্ত বৃষ্টি হয়।

সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমার্ধে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে স্বাভাবিক বন্যারও আভাস আছে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের।

গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ছাড়াও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে কুড়িগ্রামসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পদ্মাসহ বিভিন্ন নদীর পাড় ভাঙছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসময়ে বন্যার ফলে মাটির বন্ধন ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। এজন্য ভাঙন বাড়ছে বলে জানান মাটি ও পানি বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্টামফোর্ডের উপাচার্য অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ।

বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি ফিরোজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘অসময়ে বন্যার কারণে মাটিতে লবণাক্ততাও বাড়ছে। কমে যাচ্ছে, পলির পরিমাণ। এতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ’

ড. আইনুন নিশাত বাংলানিউজকে বলেন, ‘সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় পানি-প্রকৃতির শৃঙ্খল ভেঙে যাচ্ছে। এর প্রভাব মানুষ ও প্রকৃতির ওপর বার বার বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এই পরিবর্তন মানুষের শারীরিক ও মনোদৈহিক পরিবর্তনের ওপরও প্রভাব রয়েছে। ’

ঋতুচক্রের পরিবর্তন পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৩
এমআইএইচ/এসএফআই/এবি/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।