ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পাখির প্রেমে বন্দি যে বাগান ব্যবস্থাপক

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
পাখির প্রেমে বন্দি যে বাগান ব্যবস্থাপক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাহুবল (হবিগঞ্জ) থেকে ফিরে: নামেই প্রকাশিত সৌন্দর্য। চা বাগানটির নাম ‘শ্রীবাড়ি’।

বাঙলোটি অনেকটাই সবুজে সবুজময়। নানান ফুল আর ফলের গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ। প্রধান ফটকটি পেরিয়ে সামান্য উঁচু স্থানে সুদৃশ্য বাঙলোটি। বেশ বনেদি একটা ভাব! তাতে আরণ্যক আভা। চা বাগানের ব্যবস্থাপকদের বাসভবনকে অনাদিকাল ধরে বাঙলো বলে।

বাঙলোর চারপাশে অপূর্বভাবে টাঙানো বেশ কয়েকটি কৃত্রিম পাখির বাসা। এ যেন এক পাখিপ্রেমীর ভালোবাসার নীড়!

কাঠের বাক্সের এ পাখির বাসাগুলো মানুষের তৈরি। নান্দনিক ও শোভাবর্ধনকারী। দেখলেই ‘ছোটঘর’ বলে গভীর মায়া জন্মে। পাখিদের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে এক পাখিপ্রেমী পাখিদের এমন বসবাসের সুব্যবস্থা করে দিয়েছেন। শুধু কাঠের বাক্সে নয়, গাছে গাছে তিনি মাটির কলসও বেঁধে দিয়েছেন। তাতে পাখিরা ছানাও ফুটিয়েছে।

নিভৃত এ পাখিপ্রেমীর নাম ইবাদুল হক। তিনি শ্রীবাড়ি চা বাগানের ম্যানেজার (অপারেশন)। চা বাগান ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত দীর্ঘদিন ধরে। পাশাপাশি ভালোবাসেন পাখি আর প্রকৃতি।

গাছের গায়ে পাখির বাসা টাঙিয়ে রাখার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নেচারকে নেচার রক্ষা করবে। নেচারকে কিন্তু কেউ ফার্টিলাইজার দেয় না। অর্থাৎ, প্রকৃতিকভাবে যেসব গাছপালা বেড়ে ওঠে সেখানে কিন্তু কেউ কোনো সার দেয় না। পাখির বাসার আশপাশে এক প্রকারের ‘ফুড চেইন সিন্টেম’ বা খাদ্যশৃঙ্খল বাস্তবায়ন হবে। ঘন ঘন পাখিরা আসবে। পাখি খায় পোকামাকড়। পোকামাকড়কে খায় আরও কিছু পোকামাকড়। পাখির বিষ্ঠার সঙ্গে বিভিন্ন গাছপালার বীজ থাকে। সেগুলো মাটিতে পড়ে চারদিকে নতুন গাছ উৎপন্ন হবে। মাটির উর্বর ক্ষমতা বাড়বে। এভাবে পাখিদের প্রজনন করার সুযোগ করে দিয়ে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টাই আমার উদ্দেশ্য।

কাঠের বাক্সের সফলতা সম্পর্কে তিনি বলেন, শালিক ও চড়ুই প্রজাতির পাখিরা কলস এবং কাঠের বাক্সে বাসা করে ছানা ফোটায়। আমার এখানেও কয়েকটি বাক্সে তারা ছানা ফুটিয়েছে। শালিক মূলত চৈত্র-বৈশাখ মাসে খড়কুটো নিয়ে এসে বাসা করে।

গাছ প্রসঙ্গে ইবাদুল হক বলেন, আমার এলাকায় আমি প্রচুর জাম ও নিম গাছ লাগিয়েছি। এর বীজ পাখিরা খায়। আমাদের দেশীয় ফলের গাছগুলোতে পাখিরা বেশি করে আসে। সময় কাটায়। তাই পাখিদের বাঁচানো হলে বেশি করে দেশীয় ফল গাছের চারা রোপণ করতে হবে।

একাশিয়া মেজিয়াম, ইউকালিপটাস প্রভৃতি বিদেশি গাছে পাখিরা বসে না, বাসাও বাঁধে না। তাই এসব গাছ বাদ দিয়ে দেশি গাছের চারা আমাদের বেশি করে লাগাতে হবে বলে মন্তব্য করেন শ্রীবাড়ি চা বাগানের এ ব্যবস্থাপক।

পর্যটকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, যারা ভ্রমণপিপাসু প্রকৃতিপ্রেমী রয়েছেন আমাদের দেশে তাদের একটি মেসেজ দেওয়া জরুরি। পাখিদের রক্ষা করুন, পাখিকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিন। বাঁচবে আমাদের প্রিয় প্রকৃতি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।