ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বিপন্ন তালিকায় ‘নাপতে কৈ’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৪ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
বিপন্ন তালিকায় ‘নাপতে কৈ’ আশুলিয়ার ডিয়াখালি নামাবিলে পাওয়া ‘নাপতে কৈ’। ছবি: এ কে জহিরুল ইসলাম

মৌলভীবাজার: বিলুপ্তপ্রায় দেশি সুস্বাদু অনেক মাছ। দশ বছর আগে যে দেশি মাছগুলো দেখা যেতো, এখন আর সেগুলো চোখে পড়ে না।

পানিপূর্ণ কৃষিজমিতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, শিল্পায়নের ফলে পানিদূষণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ এবং পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে দিন দিন কমছে এসব দেশি মাছের প্রজাতির সংখ্যা ।

এ ধরনেরই একটি মাছ ‘নাপতে কৈ’।

সাধারণ কৈ এর চেয়ে এরা কিছুটা ছোট।    

নাপতে কৈ মিঠা পানির মাছ। সাধারণত নদী, খাল, বিল, হাওরে পাওয়া যায়। এদের মাথা শক্ত, কানকোতে কাঁটা থাকে। এ প্রজাতির মাছগুলো কখনো কখনো কানকোতে ভর করে ডাঙায় উঠে পড়ে।

এদের ফুলকা পানি ও বাতাস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করতে পারে বলে এরা ডাঙ্গায়ও দীর্ঘ সময় জীবিত থাকতে পারে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওর এলাকার মিন্নত আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এ মাছটির নাম নাপিত কৈ। সর্বশেষ এ মাছের প্রজাতিটিকে আমি বছর পাঁচেক আগে দেখেছিলাম। এখন আর চোখেই পড়ে না। খেতে সুস্বাদু’।

মৎস্য গবেষক রাজধানীর উত্তরার ট্রাস্ট কলেজের জীববিজ্ঞানের প্রভাষক এ কে জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিপন্ন প্রজাতির মাছ ‘নাপতে কৈ’। একে অনেকে ‘নাপিত কৈ’ও বলে থাকেন। এর ইংরেজি নাম Badis ও বৈজ্ঞানিক নাম Badis badis। দেখতে কৈ মাছের মতো, কিন্তু তার মুখটি খুব ছোট।

এ মাছের গায়ের রং পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত এরা কালচে অথবা গাঢ় বাদামি রঙের হয়ে থাকে। কানকো, লেজের গোড়া ও উদরের কাছে বেশ কয়েকটি নীল রঙের ফোঁটা থাকে বলেও জানান জহিরুল।

তিনি আরো বলেন, ‘এই ছবিটি আমি আশুলিয়ার ডিয়াখালি নামাবিল থেকে তুলেছি। আগে এদের খাল, বিল, হাওড়-বাওড় এবং পুকুরে বেশি দেখা যেতো। কিন্তু বর্তমানে এদের তেমন একটা দেখা যায় না। এদের আবাসস্থল ধ্বংস ও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারই এজন্য দায়ী’।

‘নাপিত যে ছোট বাটিতে পানি রেখে কাজ করেন, সে বাটিতে এ কৈ মাছ ছেড়ে দিলেও তা ধরে যাবে। এতো ছোট বলেই এ মাছের নামকরণ করা হয়েছে ‘নাপতে কৈ’।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০০০ সালের ‘রেডলিস্ট’ অনুসারে এ মাছটি বিপন্ন তালিকাভুক্ত বলেও জানান তিনি।     

জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘পানিতে প্রচুর কীটনাশক ও শিল্প-কারখানার বর্জ্যের দূষণ, অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ, নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার, জলাশয় দখল ও ভরাট ইত্যাদি আমাদের দেশের সুস্বাদু মাছ বিলুপ্তির জন্য দায়ী। এছাড়াও কার্ফু, তেলাপিয়া, থাই সরপুঁটি, আফ্রিকান মাগুর ইত্যাদি বিদেশি মাছের অবাধ চাষাবাদের ফলেই দেশি প্রজাতির মাছগুলো মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে’।  

এ মৎস্য গবেষক বলেন, দেশি মাছ ফিরিয়ে আনতে দেশজুড়ে দীর্ঘমেয়াদি জরিপের পাশাপাশি স্থানীয় জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার ও কীটনাশকের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও উন্নত পুরুষ মাছের হিমায়িত শুক্রাণু (স্পার্ম প্রিজারভেশন) সংগ্রহ করে সংরক্ষিত জলাভূমিগুলোতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
বিবিবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।