এক সময় এখানে ২৭ জন স্টাফ ছিল। সেই লাউয়াছড়ায় জাতীয় উদ্যানে এখন লোকবল কমতে কমতে মাত্র ৭ জনে এসে ঠেকেছে।
একদিকে এই উদ্যান যেমন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর, অন্যদিকে এতে রয়েছে মহামূল্যবান সেগুন ও আগর গাছ। যার একেকটির আর্থিক মূল্য অর্ধকোটি টাকার উপরে।
সাড়ে ১২’শ হেক্টরের এই উদ্যানের বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে হাজার হাজার মূল্যবান বৃক্ষের সমারোহ। অথচ সেখানেএখন শুধু নেই আর নেই। উদ্যানটিতে একটি বিটের অধীনে দু’টি ক্যাম্প রয়েছে। এতে মোট ২১জন লোকবল থাকার কথা। অথচ এখানে সহকারি বিট অফিসার নেই পনের বছর ধরে। ডেপুটি রেঞ্জার নেই তারও এক বছর আগে থেকে। সিনিয়র রেঞ্জ অফিসার নেই ১২ বছর ধরে। বনপ্রহরী থাকার কথা ৫ জন। আছেন মাত্র ০২ জন। বনপ্রহরীর ৩টি পদ শুন্য রয়েছে পনের বছর ধরে।
ক্যাম্প অফিসের শীর্ষ পদটি হচ্ছে ক্যাম্প অফিসারের পদ। জানকিছড়া ক্যাম্প অফিসের শীর্ষপদ শুন্য রয়েছে ২০০৬ সাল থেকে। গার্ড/বাগান-মালি থাকার কথা ৪ জন। রয়েছে মাত্র দু’জন। অর্থাৎ ক্যাম্প অফিস চলছে মাত্র দু’জন গার্ডের তত্ত্বাবধানে।
আরেকটি ক্যাম্প অফিস রয়েছে বাগমারায়। এখানেও ক্যাম্প অফিসার নেই দীর্ঘদিন ধরে। স্টাফ রয়েছেন মাত্র দু’জন। সব মিলিয়ে মাত্র সাত জন লোকবল রয়েছে পুরো উদ্যানে। যখন লোকবল বাড়ানোর দাবি রয়েছে, ঠিক সেই সময়ে একজনকে বদলি করা হয়েছে সম্প্রতি।
সংশ্লিষ্টরা আক্ষেপ করে বলেছেন, দিনে বিশ্রাম নেই। রাতে ঘুম নেই। এভাবে চলছে পাহারা। কিন্তু কতদিন এভাবে চালানো সম্ভব। বিশাল এলাকা দিনে-রাতে মাত্র ৪ জন গার্ড দিয়ে রক্ষা করা খুবই কঠিন। একদিকে গেলে অন্যদিকে হানা দিচ্ছে ছিঁকে চোরের দল। বসে নেই চোরা শিকারীরাও। চোরা শিকারীদের ভোগে যাচ্ছে মায়া হরিন ও বনমোরগ।
কাঠ সংগ্রহকারীও পানচাষী খাসিয়ারাও কম হুমকি নয় বনপ্রহরীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে গাছের ডাল কেটে বনসাই করে দিচ্ছে গাছগুলোকে।
লাউয়াছড়া বাংলাদেশের একমাত্র উদ্যান যেখানে রয়েছে অনেক দুর্লভ প্রাণী। চশমাপরা হুনুমানসহ অনেক বিপন্ন প্রাণীর দেখা পাওয়া যায় এখানে গেলে।
যে কারণে শুধু বাংলাদেশিরা নন, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা ছুটে আসছেন লাউয়াছড়ায়। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে প্রথম দশ মাসে প্রবেশ ফি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা।
বিট অফিসার আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, লোকবল সংকটের কারণে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে তাদেরকে। এতে করে অনেকের শরীর ভেঙ্গে পড়েছে। নানা রকম অসুখে ভুগছে প্রহরীরা।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ওয়াইল্ডলাইফ) মিহির কুমার দো বাংলানিউজকে জানান, লোকবল সংকটের কারণে সঠিকভাবে তদারকি করা যাচ্ছে না। যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনবল বাড়ানোটা জরুরি।
লোকবল বৃদ্ধির প্রসঙ্গ এলে বলা হয়, সিপিজির (কো-পেট্রোলিং গ্রুপ) ৬০ জন সদস্যের কথা। যাদের বন প্রহরীদের সঙ্গে থেকে রোটেশন পদ্ধতিতে ডিউটি করার কথা। যাদেরকে হাজিরা বাবদ দৈনিক ১’শ টাকা ভাতা দেয় বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত একটি এনজিও। সিপিজির একেকজন সদস্য মাসে ডিউটি পান ১০ দিন। সে হিসেবে তাদের মাসিক আয় মাত্র এক হাজার টাকা।
এই সামান্য আয়ে তাদের সংসার চলে না। যে কারণে ডিউটিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে। বাধ্য হয়ে অসৎ পন্থা অবলম্বন করছেন কেউ কেউ। পাহারা দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে গাছের ডাল, বাঁশ কেটে নিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন তারা। এতে সংকুচিত হয়ে আসছে জঙ্গল।
সামাজিক বনায়নে এরকম যৌথ টহলের ভালো ফল পাওয়া গেছে। সেখানে নির্দিষ্ট সময় শেষে গাছ বিক্রির হিস্যা পান সহব্যবস্থাপনায় থাকা স্থানীয়রা। কিন্তু লাউয়াছড়া থেকে ভবিষ্যতেও গাছ বিক্রির সুযোগ নেই। আর হিস্যা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সে কারণে আগ্রহ হারাচ্ছে সিপিজির লোকজন। এতে হিতে বিপরীত হয়েছে সিপিজি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
এসআই/জেএম